ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২১৩

ডায়াবেটিস কাদের পরীক্ষা করানো উচিত, জানালেন চিকিৎসক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:২৩ ১৩ এপ্রিল ২০২৪  

‘ডায়াবেটিস’ শব্দটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। দিন দিন বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলছে এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস, স্ট্রেস, উদ্বেগ, মানসিক চাপের কারণে এখন অল্প বয়সেই অনেকেই এই রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কীভাবে ডায়াবেটিস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন ধানমন্ডি মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড -এর ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এবং হেড অব ডায়াবেটিস ডা. মো. এজাজ বারী চৌধুরী। 

 

ডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিস মানে রক্তে সুগার বেশি থাকা। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর খালি পেটে সুগার ৭ এর বেশি অথবা খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে সুগার ১১ -এর বেশি থাকলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে। 

 

ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী কী? 
১) দুর্বল লাগা। 
২) ওজন কমতে থাকা। 
৩) ঘন ঘন পিপাসা পাওয়া/ গলা শুকিয়ে যাওয়া।   
৪) ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা/ বেশি বেশি খাওয়া। 

 

৫) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। 
৬) শরীরের যেকোনো ক্ষত শুকাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগা। 
৭) ঘন ঘন ইনফেকশনে ভোগা (বুকের ইনফেকশন, পেটের ইনফেকশন, প্রস্রাবের ইনফেকশন ইত্যাদি)। 
৮) হাত-পা জ্বালাপোড়া করা অথবা অবশ অবশ লাগা। 
৯) চোখে ঝাপসা দেখা। 

 

উপরের লক্ষণগুলোর এক বা একাধিক আপনি অনুভব করলে অবশ্যই টেস্ট করে নিশ্চিত হয়ে নেবেন আপনার ডায়াবেটিস আছে কিনা।  তবে ভয়ের বিষয় হচ্ছে, কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও ডায়াবেটিস শরীরে বাসা বেঁধে ফেলতে পারে। এ জন্য যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন যেমন- অলস জীবনযাপন, হঠাৎ মুটিয়ে যাওয়া বা ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, ফাস্টফুড এবং রিচ ফুড আসক্তি, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস, প্রি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, ওষুধ খেয়ে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় এবং যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি এমন ব্যক্তিদের বছরে অন্তত একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে। 

 

কোন বয়সী মানুষের ডায়াবেটিস হয়? 
ডায়াবেটিসের অনেক প্রকারভেদ বা বৈচিত্র্য আছে। এজন্য যেকোনো বয়সের মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের যেকোনো কারোরই ডায়াবেটিস হতে পারে। এজন্য ডায়াবেটিস ধরা পড়লে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু করবেন। ওষুধের দোকানদারের দেয়া ওষুধ, অনলাইনে বিক্রি হওয়া ডায়াবেটিস মুক্তির অলৌকিক ওষুধ বা অন্য রোগীর অনুকরণে একই ওষুধ খাবেন না। ডায়াবেটিসের ভুল চিকিৎসা আপনার অসুস্থতাকে বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ এবং ডায়াবেটিসের পাশাপাশি লিভার, কিডনি এবং হার্টের রোগীও বানিয়ে দিতে পারে। 

 

ডায়াবেটিস হলে করণীয় কী?
১) স্বাস্থ্যকর খাবার একটু রুটিন মাফিক খাওয়া। অল্প কিছু খাবারে নিষেধ থাকলেও অন্য সব স্বাভাবিক খাবারই ডায়াবেটিস রোগী খেতে পারবেন। বয়স, ওজন, উচ্চতা, পেশা, অন্য রোগের উপস্থিতি বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে প্রত্যেককে খাবার পরিমাপ করে দেয়া হয়।

২) ব্যায়ামকে জীবনের পরম আপন বন্ধু বানিয়ে ফেলা। সপ্তাহে ৫ দিন, অন্তত ৩০ মিনিট করে ঘরে বা বাইরে যেকোনো ধরণের ব্যায়াম করতে হবে।
 

৩) একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা-গ্রহণ করা এবং নিয়মিত তার ফলোআপে থাকা। অনেকেই একবার ডাক্তার দেখিয়ে আবার অসুস্থ হবার আগ পর্যন্ত আর ডাক্তার দেখান না। এতে সুচিকিৎসা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করা আপনার ডাক্তারের পক্ষে জটিল হয়ে পড়ে। 

৪) সপ্তাহে অন্তত একদিন সুগার মেপে সেটা লিখে রাখা। মাপতে হবে: নাস্তার আগে, নাস্তার ২ ঘণ্টা পর, দুপুরে খাবার ২ ঘণ্টা পর এবং রাতে খাবার ২ ঘণ্টা পর। 

 

৫) প্রতি ৩ মাস থেকে ৬ মাস পরপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরের চেকআপ করানো। এর ফলে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি শরীরে অন্য কোনো রোগ বাসা বাঁধলেও সেটা ধরা পড়বে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু হওয়ার কারণে আপনি সুস্থ থাকবেন।

৬) হতাশা এবং বিষণ্নতাকে জয় করতে হবে। ডায়াবেটিসের কারণে আপনার জীবনে যেটুকু পরিবর্তন করতে হচ্ছে, তার সবগুলোই আপনার সুস্থতাকে বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। 

 

৭) পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে গভীর ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে। বয়স্ক মানুষদের স্মৃতিশক্তি কমে যায়, ফলে ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে ভুল হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই তার ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব বা তদারকির দায়িত্ব অবশ্যই পরিবারের অন্য কাউকে নিতে হবে। 

৮) মোটা হয়ে যাওয়া ডায়াবেটিস রোগীরা যদি তাদের ওজন কমাতে পারেন, তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। এজন্য খাবারের নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়াম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য। 

 

৯) লাইফস্টাইলের ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে। পর্যাপ্ত এবং সঠিক রুটিনে ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  এছাড়া মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তাকে জয় করার চেষ্টা করতে হবে। 

 

১০) মনে রাখবেন, ডায়াবেটিসের চিকিৎসা শুধু প্রেসক্রিপশনে সীমাবদ্ধ নয়  রোগীর আন্তরিকতাই চিকিৎসাকে সফল করতে পারে। যার ডায়াবেটিস নেই, তার যেমন রক্তের সুগার থাকে, চিকিৎসার মাধ্যমে একজন ডায়াবেটিস রোগীর সুগার লেভেলকেও সেরকম রাখতে হয়। এজন্য নরমাল সুগার পেলেই চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া যাবে না। নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হবে, তিনিই সময় এবং প্রয়োজন বুঝে আপনার চিকিৎসা পরিবর্তন করে দেবেন।