ঢাকা, ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৫ || ২ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
১৮

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপিসহ মিত্ররা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৩:০৯ ১৪ এপ্রিল ২০২৫  

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপিসহ মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। এজন্য শিগ্গিরই সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছেন দলগুলোর নেতারা। বুধবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। সেখানে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের বিষয়ে জানতে চাইবে দলটি।

 

পরদিন সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে। এরপর সরকারের মনোভাব বুঝে করণীয় ঠিক করবে বিএনপি। মিত্র দলগুলো বলছে-নির্বাচন ইস্যুতে আন্দোলন কর্মসূচি এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে। দ্রুততম সময়ে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে বিএনপিসহ মিত্র দলগুলো কর্মসূচির দিকে যাবে। নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে শনিবার রাতে একাধিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ কেউ নির্বাচন পিছিয়ে ফায়দা লুটতে চায় বলেও মনে করছেন নেতারা।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় নির্বাচন যাতে বিলম্বে হয়, সেজন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও গণতন্ত্রকামী জনগণ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। সেখানে নির্বাচনের সময়সহ অন্য বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট চানতে চাওয়া হবে।

 

বিএনপি ও দলটির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মতে, এখনই নির্বাচন করতে হবে, এমনটা তারা বলছেন না। ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন করলে সমস্যাগুলো অনেকটা সমাধান হবে। ভোট পেছালে আওয়ামী দোসরদের ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হতে পারে, দেশ ক্ষতিগ্রন্ত হবে। এছাড়া নির্বাচিত সরকার বড় সংস্কারগুলো নিয়ে কাজ করতে পারবে। কারণ হিসাবে তারা বলছেন-সংস্কার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া।

 

নেতারা বলেন, তারা দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছেন। কারণ, নির্বাচন হলে দেশের সমস্যাগুলো অনেকটাই সমাধান হবে। একটা নির্বাচিত সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বসবে। নির্বাচিত সরকার জনগণের ভাষা বুঝতে পারে। কিন্তু বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার অনির্বাচিত, তাদের সেই কনফিডেন্স নেই। রাজনৈতিক নেতাদের মতে, ভোটের অধিকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি গণআকাঙ্ক্ষাও। এটা সরকারকে বুঝতে হবে। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

 

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দুই সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকের পর রাত ৮টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে প্রধান উপদেষ্টা তাগিদ দিয়েছেন। পরে রাত সোয়া ৯টার পর বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে প্রেস উইং।

 

সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতঃপূর্বে ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া প্রেস নোটে ভুলবশত কেবল ডিসেম্বর মাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন।

 

তবে এ সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। দলটি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাছে পূর্বে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তিনি সব কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আমরা সেটা জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর অনুরোধ করেছিলাম, যাতে জাতি আশ্বস্ত হয়, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ না পায়। কিন্তু তিনি অন্য একটি ফোরামে গিয়ে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে করার কথা বলেন। আমরা এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। উনি এখনো সে কথা বললে আমরা তার সঙ্গে একমত নই।

 

বিএনপির বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে যুক্ত সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে থাকেন, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কোনো কর্মসূচি দেবেন কি না। ১৬ এপ্রিল আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসব। জানতে চাইব, আসলে উনি কী চাইছেন।

 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষ স্বল্পসময়ের মধ্যে একটা নির্বাচিত সরকার ও জনপ্রতিনিধি দেখতে চায়। শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, এতে অনেক ভুলবোঝাবুঝির প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। সত্যি সত্যি কোনটা তথ্যভিত্তিক, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমি মনে করি, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রয়োজনে অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব।

 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বর ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে কাজগুলো আছে, তা আগামী দুই-আড়াই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করে একটা জাতীয় ঐকমত্যের জায়গা তৈরি করা সম্ভব। কারণ, যতই দিন যাচ্ছে, ভেতরে-বাইরে বহুমুখী ষড়যন্ত্রের তৎপরতা আমরা লক্ষ করছি। এছাড়া ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষ একটা সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষা করছে।

 

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা চাই, এ সরকার ছোট সংস্কারগুলো করে ফেলুক, বড় সংস্কারগুলো জনগণের সরকারের হাতে ছেড়ে দিক।

 

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর নির্বাচনের টাইম ফ্রেম নিয়ে তার প্রেস উইং থেকে রাত ৮টায় এবং রাত সোয়া ৯টার পর দুই ধরনের বক্তব্য আসায় একটু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এটা কি সাধারণ ভুল নাকি অন্য কোনো ব্যাপার, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদি সাধারণ ভুল হয়, তাহলে তা সংশোধন করতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় কেন লাগল, তা বোধগম্য নয়। আমরা আগেও বলেছি, সংস্কার, ফ্যাসিবাদের বিচার ও নির্বাচন প্রস্তুতি সমান তালে এগিয়ে নিতে কোনো সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন করা সম্ভব। সরকার অবশ্য ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা আগে থেকেই বলে আসছিল।

 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তো ফেসবুক পেজ চালান না। মূলত কেউ কেউ চাচ্ছেন নির্বাচনটা পিছিয়ে ফায়দা নিতে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচন দেবেন। যেহেতু ডিসেম্বর থেকে জুন সম্ভব্য টাইমলাইন ঘোষণা করেছেন, সেহেতু বর্তমান রাজনীতি ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে যত দ্রুত একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়া যায়, সেটাই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ডিসেম্বরের মধ্যেই যেন একটা নির্বাচন হয়। আগামী নতুন বছরে একটা নতুন গণতান্ত্রিক সরকার যেন দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়।