ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৯৩৩

ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে মহাগুরুত্বপূর্ণ ১০ তথ্য

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৫২ ২৬ জুলাই ২০১৯  

অতীতে যেকোন সময়ের এবার ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি। এতে আক্রান্ত হয়ে গত দুই সপ্তাহে অন্তত আটজন মারা গেছেন। এদের মধ্যে চিকিৎসকও আছেন। স্বাভাবিকভাবেই নিয়ে মানুষের মাঝে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

শরীরে যেসব লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় যা-

ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ

সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে। ঘাম দিয়ে ছেড়ে দেয়ার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

জ্বর হলে কী করবেন?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, এখন ডেঙ্গুর সময়, তাই জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। আক্রান্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সঙ্গে সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোনও বিষয় জড়িত থাকলে, সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্য কিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।'

বিশ্রামে থাকতে হবে

সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক . সানিয়া তাহমিনা বলেন, জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন অনেক পরিশ্রম করেন। অনেক কাজ করেন। সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।

কী খাবেন?

প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। অবশ্য প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে তা নয়, পানিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

যেসব ঔষধ খাওয়া যাবে না

অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোনও ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তা হলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত?

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা। তিনি বলেন, প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোনও প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো। সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।

ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?

ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে - '', 'বি' এবং 'সি' প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী '' ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোনও প্রয়োজন নেই। 'বি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়।

যেমন-তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। অনেক সময়, দুই দিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো। 'সি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ' প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল

সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ, সময়ে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, এর সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এখন জুন থেকেই ডেঙ্গুর সময় শুরু হয়ে যাচ্ছে।

এডিস মশা কখন কামড়ায়

ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে সেগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না।

১০কোথাও পানি জমিয়ে রাখা যাবে না

অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলছেন, এডিস মশা 'ভদ্র মশা' হিসেবে পরিচিত। এসব মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে। এরা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। তাই কোথাও তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি পানি জমিয়ে রাখা যাবে না।

পানি যেকোনও জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে, বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।