ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭০১

ঢাকা থেকে সরছে হাজার হাজার কুকুর

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:২৩ ১৮ আগস্ট ২০২০  

ঢাকা থেকে ৩০ হাজার কুকুর বাইরের লোকালয়ে স্থানান্তরিত করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কুকুরগুলোকে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেগুলোকে মাতুয়াইল এলাকায় স্থানান্তরিত করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে কুকুরগুলো খাবারের সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সেটা বাতিল করা হয়েছে।

স্থানান্তরিত করার পর যাতে খাবারের সংকট তৈরি না হয়, সেজন্য কুকুরগুলোকে ঢাকার বাইরের জনপদ। অর্থাৎ যেখানে মানুষের বসবাস রয়েছে, তেমন কোনও এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

তবে কোন কোন এলাকায় সেগুলোকে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই বিষয়ে এখনো কোনন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

কুকুর নিয়ে কাজ করে-এমন সংস্থাগুলোর ২০১৭ সালে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো এর সংখ্যা অন্তত ১ লাখ।

ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা নাদিরা জাহান জানান, এর আগে কাঁঠালবাগান এলাকায় থাকতেন তিনি। সেখানে বাসায় ফেরার পথে কুকুরের কামড়ের ভয়ে বাসা পরিবর্তন করে পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় উঠেছেন। তবে এখানেও সেই একই অবস্থা। তবে এ এলাকায় বাসা থেকে বের হওয়ার একাধিক রাস্তা থাকায় কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন। কুকুরের ভয়ে যাতায়াতের পথই পরিবর্তন করে নিয়েছেন।

রাজধানীর রাস্তায় কুকুরের আনাগোনা প্রায়ই চোখে পড়ে। এছাড়া আবাসিক এলাকা, গলির মুখে বা যেখানে ময়লা জমে থাকে, সেখানে একাধিক দেখতে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে আবু নাছের বলেন, সম্প্রতি ঢাকার বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে কুকুর সম্পর্কিত নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অনেকে বলছে, কুকুরে কামড়াচ্ছে। কেউ বলছে, বাসা থেকে বের হতে পারছি না, বাচ্চা-কাচ্চারা ভয় পাচ্ছে। আসলে নাগরিকদের দাবির প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া।

কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্প্রতি কুকুর বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পে ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে এদের বংশবৃদ্ধি হয়েছে। যে কারণে শহরের রাস্তায় হঠাৎ করে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তবে এর কিছুটা অন্য চিত্র মিরপুর এলাকার। সেখানকার বাসিন্দা ইশরাত জাহান বলেন, তার এলাকায় একাধিক কুকুর থাকলেও সেখানকার বাসিন্দারা ভয় না পেয়ে উল্টো মাটির পাত্রে করে সেগুলোকে খাবার দেয়।

এদিকে কুকুরগুলোকে স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছেন প্রাণী কল্যাণ নিয়ে কাজ করা আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, স্থানান্তর করলে আসলে সমস্যা কমবে না বরং আরও বাড়বে।

এ্যানিমেল কেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন আফজাল খান। তিনি বলেন, এত সংখ্যক কুকুরকে একসঙ্গে কোনও একটি অঞ্চলে ছেড়ে দেয়া হলে সেখানে অবশ্যই খাদ্য সংকট দেখা দেবে। মফস্বল বা গ্রাম্য এলাকায় যদি এগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে অবশ্যই খাবারের সংকট হবে। কারণ, শহরের মানুষদের মতো সেখানকার বাসিন্দারা কুকুরের প্রতি এতটা সংবেদনশীল নয়।

খান বলেন, খাবারের সংকট হওয়ার কারণে তখন কুকুরগুলো মানুষকে কামড়ানোর চেষ্টা করবে। এছাড়া সেগুলো নিধন এবং স্থানান্তর বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ। এর পরিবর্তে কুকুরগুলোকে বন্ধ্যা করা এবং জলাতঙ্ক টিকা দেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ওই বছরই ঢাকার সিটি কর্পোরেশন নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে প্রাণিটিকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার কাজ শুরু করে। পরে দুই সিটি কর্পোরেশন আলাদা করে ভ্যাক্সিন দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

তবে জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৬ সালেই ঢাকায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ কুকুরের কামড়ের পর চিকিৎসা নিয়েছেন।

জনদুর্ভোগ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর