ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৪৩৭

তালাকের গ্রাম বগুড়ার খাটিয়ামারী

রিপন দাস, বগুড়া

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৪২ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮  

বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার প্রত্যন্ত খাটিয়ামারী গ্রামে বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ হচ্ছে মুসলিম ও হিন্দু পরিবারে।

ছোট ছোট বিষয়কে কেন্দ্র করে বিয়ের মতো একটি বড় সামাজিক বন্ধনের ঘটনা তুচ্ছ মনে করে তালাক দেয়া হচ্ছে।

ছেলে পক্ষ থেকে বিয়ে করলে বউকে তালাক আর মেয়ে বিয়ে দিলে ছেড়ে আনা যেন এ গ্রামের নিয়মিত ঘটনা।

বিবাহ বিচ্ছেদের নানা কারণের কথা বলা হলেও সমাজের সচেতন ব্যক্তির পাশাপাশি অনেকেই মনে করেন এ বিষয় নিয়ে গবেষেণা করা দরকার।  

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, খাটিয়ামারী গ্রামের যুথি নামের একটি মেয়ের বয়স যখন ৫ মাস তখন বিচ্ছেদ হয় তার মা আসমা খাতুনের। নানীর আশ্রয়ে থাকা যুথি স্কুলে পড়লেও বাবা মার অভাবে সে সবসময়ই মনমরা হয়ে থাকেন। কারো সঙ্গে তেমন করে কথাও বলেন না। মেয়ের পড়ালেখার খরচ সংগ্রহ করতে আর বেঁচে থাকার তাগিদে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করছেন আসমা। কি কারণে তার বিচ্ছেদ হয়েছে তা পরিস্কার করে কেউ বলতে পারে না। আসমার দাম্পত্য জীবন টিকে ছিল দুই বছর।

জহুরুল নামের এক যুবক তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন ১৫ দিনের মধ্যেই। অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেম করতেন আর পেটে ছিল সন্তান এমন সন্দেহে তালাক দেয়া হয় স্ত্রীকে। অনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন অভিযোগে এনে বিয়ের তিন দিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ হয় খাদিজা খাতুনের। হিন্দু পরিবারের চুম্বুলি রানীর সংসার ভেঙ্গে যায় ১৭ দিনেই। কারণ ছেলে পক্ষ তথ্য গোপন করে।   

খাটিয়ামারী গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, আমার খালু ও পরিবারের লোকজন দেখেশুনে আমাকে বিয়ে করান। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই জানতে পারি সেই মেয়ের অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে। এজন্য  ১৬ দিন পর সংসার করার পর তাকে তালাক দেই।

একই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের চম্বুলী রানী বলেন, আমার বিয়ে দেয়া হয়েছিল তথ্য গোপন করে। বিয়ের পরে সংসারে গিয়ে দেখি আমার সমান সমান ছেলে ও মেয়ে আছে। সাতদিন সংসার করার পর সেই সংসার ছেড়ে চলে আসি আর যাইনি। সেই থেকে আমি একাই আছি। নানা জায়গায় কাজ করে পেট চালাই।    

সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, এই গ্রামের সংসার যেন খেলার মতো আজ গড়ে তো কাল ভাঙে। যাদের সংসার ভেঙেছে তাদের অধিকাংশেরই বিচ্ছেদ ঘটেছে ১ বছরের মধ্যেই। আর এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে নানা ধরণের গবেষণা করার পাশাপাশি মূল কারণ খুঁজে বেরা করা দরকার।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার খাটিয়ামারী গ্রামের সমাজকর্মী মো. আব্দুর রশিদ জানান, গ্রামে কেন বা কী কারণে বিয়ে টিকছে না, তা আমরা বুঝতে পারছি না। এ নিয়ে বিভিন্নভাবে এর সমাধান করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই কেউ তা মানছে না। তবে নিরক্ষরতার কারণে বা সামাজিক সচেতনতার অভাবে এমনটা হতে পারে।   

এ পরিস্থিতি নিয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহনণর সঙ্গে এর কারণে খুঁজে বের করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন।

বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বললেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এ বিষয়ে তাদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।   

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  চার বছরে অন্তত ৩০টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে শুধু এ গ্রামেই। বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ছেলেকে বিয়ে করালে, আবার মেয়েকে বিয়ে দিলেও।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর