ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৭৪

দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ-ফোনের সামনে বসে? চোখ বাঁচাতে যা যা করবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৪১ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  

করোনা মানুষের অগোছালো ও নিয়ন্ত্রণহীন জীবনধারণ পদ্ধতি বদলে দিয়েছে।  স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ব্যাপক ক্ষতি করছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকায় এবং কর্মহীন হয়ে পড়ায় মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন মানুষ। 
অধিকন্তু লকডাউনে ঘরে বসে কাজ করতে একনাগাড়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপের সামনে বসে থাকতে হয়। টিভি, মোবাইলের পেছনেও ব্যাপক সময় ব্যয় হয়। ফলে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন তারা। 

 

করোনা আতঙ্কে মানুষ বাইরের জগত ভুলতে বসেছে। প্রাদুর্ভাবের আগে কাজের অবসরে বই পড়া, গান শোনা, খেতে যাওয়া, শপিং করা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন এসব অতীত। সংক্রমণ এড়াতে 'গৃহে আবদ্ধ জীব' হয়ে উঠছেন তারা। 

 

সারাদিন কেটে যাচ্ছে মোবাইল, টিভি অথবা ল্যাপটপ নিয়ে। ফলে দিন শেষে চোখ জ্বালাপোড়া, শুকিয়ে যাওয়া, অস্বস্তি, লাল হওয়া, ভারী ভাব, ঝাপসা দেখা, কপাল, ঘাড়, পিঠ, কোমর, মাথাব্যথা ইত্যাদির আবির্ভাব ঘটছে। 

 

চাকরিজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী-সবাই এসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ধরনের সমস্যাকে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম (ডিজিটাল আই স্ট্রেন) হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু উপায় কী? শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস, চাকুরিজীবীদের বাড়ি থেকে কাজ, গেম খেলা, সিনেমা দেখা-সবটাই এখন মোবাইল ও ল্যাপটপের উপর নির্ভরশীল। 

 

তাই এ মুহূর্তে এসব থেকে দূরে থাকার কোনও উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নিজের চোখ সুরক্ষিত রাখতে এসব ডিভাইস ব্যবহারের সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। এ আর্টিকেলে সেসবই উল্লেখ করা হবে। দেখে নিন কী করবেন-

 

# ডিজিটাল আই স্ট্রেন এড়াতে এবং চোখ সুস্থ রাখতে কাজের সময় ঘনঘন বিরতি নেয়ার থেকে ভালো ওষুধ আর নেই। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ড করে বিরতি নিতে হবে। ২০ ফুট দূরত্বে কোনও জিনিসের দিকে তাকাতে হবে। আবার ৩০ মিনিট অন্তর ৫ মিনিট বিরতি নিতে হবে। এটি নেয়ার সময় কোনোরকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ম চোখ সুস্থ রাখার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও উপকার করে। 

 

# কাজ করার মাঝে বিরতিকালে চোখের বিভিন্ন এক্সারসাইজ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এর পেশীগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মায়োপিয়া, অ্যাসটিগমেটিজম, হাইপারোপিয়ার মতো অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

 

# স্ক্রিনে কোনও জিনিস লেখা বা দেখার সময় লেখার সাইজ বাড়িয়ে নিতে হবে।  ডিভাইস দূরে রেখে সহজেই পড়তে বা কাজ করতে পারা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এতে চোখে চাপ কম পড়বে এবং সুস্থ থাকবে। চেষ্টা করতে হবে স্ক্রিনে কাজ করার। 

 

# আইপ্যাড, ট্যাবলেট, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় চোখের খুব কাছাকাছি রাখা যাবে না। কম্পিউটারের স্ক্রিনটি আই লেভেল থেকে ১৫-২০ ডিগ্রি নিচে রাখতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখতে হবে ২০ থেকে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত। এতে চোখের উপর চাপ কম পড়ার পাশাপাশি ঘাড়, কাঁধ, কোমর ব্যথা থেকেও পরিত্রাণ মিলবে। 

 

# অ্যান্টি-গ্লেয়ার স্ক্রীন কম্পিউটার, ল্যাপটপের স্ক্রিনের অতিরিক্ত আলো নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। কর্মক্ষেত্রে এ ফিল্টারের প্রয়োজন না হলেও বাড়ি থেকে কাজ করার সময় এটি ব্যবহার করতে হবে। কারণ, এ ফিল্টার চোখের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং সুস্থ রাখে। 

 

# অতিরিক্ত বেশি বা কম আলো চোখে বেশি চাপ সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। তাই যে জায়গায় বসে কাজ করা হয়, সেখানে যথাযথ পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। কখনই কম বা বেশি আলোতে কাজ করা যাবে না। 

 

# মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করলে অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ লেন্সযুক্ত চশমা ব্যবহার করতে হবে। এটি চোখের স্ট্রেস কমাতে, ঝাপসা ভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। 

 

# চোখের স্ট্রেন এবং ক্লান্তি দূর করতে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, গাজর, পেঁপে, খেজুর ইত্যাদি খাবার চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। একে হাইড্রেটেড রাখতে ওমেগা-থ্রি অয়েল, ফ্ল্যাকসিড অয়েল, স্যামন ও সার্ডিনের মতো মাছ খেতে হবে।

 

এছাড়া করণীয় 

 

# প্রতিদিন অন্তত একবার ডিভাইসের পর্দা মুছতে হবে।
# প্রতি ৩০ থেকে এক ঘণ্টা অন্তর চোখে পানি ঝাপটা দিতে হবে।
# ছয় মাস পর চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে।

 

# মোবাইল বা ট্যাবলেট ব্যবহারের সময় চোখ থেকে কমপক্ষে ৫০-১০০ সেন্টিমিটার দূরে রাখতে হবে।
# ঘন্টাখানেক পর পর হাতের তালুতে ২-৩ মিনিট চোখ চেপে ধরে রাখতে হবে।
# কোনও সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।