ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ৩ মাঘ ১৪৩১
good-food
৩৬৯

দুবাইয়ে বসে আ. লীগ নেতাকে হত্যার ছক কষেন মুসা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:০৫ ২ এপ্রিল ২০২২  

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করেন দুর্বৃত্তরা। দুবাইয়ে বসে এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। শনিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

 

টিপু হত্যা মামলায় এর আগে শুক্রবার (১ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা হলেন ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির ও মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে আসে। 

 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টিপুকে হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট করেন পরিকল্পনাকারীরা। টিপুকে হত্যার দায়িত্ব নেন মুসা। তবে ঘটনার ১২ দিন আগে তিনি দুবাই চলে যান। সেখানে বসে কিলার নিয়োগ থেকে শুরু করে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

 

তিনি বলেন, চুক্তির ৯ লাখ টাকা দেন ফারুক। অবশিষ্ট ৬ লাখ টাকা দেন নাছির,সালেহ ও মুসা। দুবাইয়ে যাওয়ার আগে ৫ লাখ টাকা নিয়ে যান মুসা। পরে হুন্ডির মাধ্যমে আরও ৪ লাখ টাকা তাকে দেওয়া হয়। বাকি ৬ লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করা হয়।এর মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জব্দ করে র‌্যাব।

 

যেভাবে সংঘটিত হয় এ হত্যাকাণ্ড
র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংঘটিত হয়েছে ঠিকই, তবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। দেশে থাকা নাছির,পলাশসহ আরও কয়েকজন কয়েকদিন ধরে টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসার কাছে তথ্য পাঠাতেন।

 

ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর টিপুর অবস্থান সম্পর্কে চারবার মুসাকে জানান নাছির।গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় টিপুকে নজরদারিতে রাখেন পলাশ।তার অবস্থান সম্পর্কে মানিককে জানান তিনি। এরপর রাতে আন্ডারওয়ার্ল্ডের তত্ত্বাবধানে টিপুকে হত্যা করেন কিলার।

 

হত্যাকাণ্ডটি কাটআউট পদ্ধতিতে হয় উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নাছির ও ফারুকের কাছে পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে। সে অনুযায়ী মুসাকে দায়িত্ব দেন তারা। মুসা সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন। দুবাইয়ে বসেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কিলার নিয়োগ করেন তিনি। 

 

কে এই মুসা
মুসা দুবাইয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন জানিয়ে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন সন্ত্রাসীর নাম পাওয়া গেছে। তিনি ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,এ হত্যাকাণ্ডে আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, নাকি তারা সরাসরি জড়িত? বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 

 

তিনি বলেন, মুসার সঙ্গে নাছিরের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হবে, তা নাছিরকে জানান মুসা।টিপুকে হত্যায় ব্যাকআপ প্ল্যান ছিল। হত্যাকাণ্ডটি সংঘঠিত হওয়ার সময় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিলেন নাছির। তিনি মুসাকে জানান ‘ইট ইজ ডান’। 

 

মুসাকে দুবাই থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, মুসার অবস্থান শনাক্ত করতে বিভিন্ন তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে। দুবাইয়ে তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে ফেরানোর সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছ। 

 

গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে টিপু গাড়িতে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছলে তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে টিপু ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় টিপুর গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। 

 

তিনজনকেই রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় পরের দিন নিহত টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। তবে কারও নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর