ঢাকা, ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৪৯

নতুন আতংক : সবুজ ধ্বংসকারী পতঙ্গ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:২৪ ১ মে ২০২০  

বেশ আগেই গবেষণা করেছিল মেনিসোটা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের পর্যটননগর কক্সবাজারের টেকনাফে দেখা মিললো পঙ্গপালসদৃশ বিশেষ ধরনের পতঙ্গ। কীটবিজ্ঞানীরা জানালেন, এটি মিয়ানমার বা ভারত থেকে আসতে পারে। এখনই দমানো দরকার। না হলে  দেশজুড়ে ফসলের খেতে তাণ্ডব চালাতে পারে।

 

কক্সবাজারের টেকনাফে কৃষক সোহেল সিকদারের বাগানে প্রথম পঙ্গপাল দলের দেখা মেলে। তবে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, দেখতে পঙ্গপালের মতো হলেও এরা পঙ্গপাল নয়। কিন্তু শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন ছবি দেখে নিশ্চিত করেন টেকনাফে দেখা পাওয়া পোকা পঙ্গপাল হতে পারে।  এরা পাল তৈরি করে হানা দিতে পারে দেশের নানা প্রান্তে। এদের এখই দমন করা না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

 

তিনি আরও জানান, পঙ্গপাল মিয়ানমার বা ভারতের মণিপুর থেকে আসতে পারে। পঙ্গপাল দমনে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. আবদুল মুঈদ বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে টেকনাফের ছোট একটি জায়গায় কিছু কিছু বনজ গাছের ওপর তারা অবস্থান করে পাতা খাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা স্প্রে করেছি তাতে নকডাউন ইফেক্টে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে আমাদের টিম যাচ্ছে, আশা করছি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’

 

কক্সবাজারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, টেকনাফের ওই পোকার নমুনা সংগ্রহ করে ভিডিও করে গত বুধবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মো. রুহুল আমিন ও দেবাশীষ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

 

“তিনি ফোনে জানিয়েছেন, এটা মরুভূমির যে পঙ্গপাল, সে পঙ্গপাল না। এটা ঘাসফড়িংয়ের একটি প্রজাতি হতে পারে।”

 

তবে কুরিয়ার সার্ভিসের সমস্যার কারণে পোকাটির নমুনা বৃহস্পতিবারও গাজীপুর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো যায়নি বলে জানান তিনি।

 

এ জেলার টেকনাফের লম্বারী পাড়ার এক ভিটায় কয়েক দিন আগে শত শত পোকা দল বেঁধে হানা দিয়ে বিভিন্ন গাছের পাতা খেয়ে ফেলে।

 

এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ওই ভিটার মালিক সোহেল সিকদার। সেই সঙ্গে এলাকায় ‘পঙ্গপাল আতঙ্ক’ তৈরি হয়।


সোহেল বলেন, “গত ১৮ এপ্রিল বিকালে হঠাৎ করে আমার বাগানের কিছু গাছে পোকা দেখতে পাই। পোকাগুলো গাছের পাতা নিমেষেই শেষ করে দিচ্ছে। এ পোকা আগে কোনোদিন দেখিনি।”

 

এ নিয়ে ফেইসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন তিনি। এরপর ২২ এপ্রিল পোকা দেখতে আসেন টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। তিনি পোকা পর্যবেক্ষণ করে ‘রিপকর্ড’ কীটনাশক ব্যবহার করে মেরে ফেলেন।

 

টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, পোকার বিষয়টি জানার পর তিনি দ্রুত সেখানে যান।

 

“দেখি কালো রঙের কিছু পোকা লাফিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠছে এবং পাতা খেয়ে ফেলছে। পরবর্তীতে কীটনাশক ব্যবহার করে কিছু পোকা মেরে ফেলি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাই।”

 

টেকনাফের ওই বাড়ির আশপাশ খুবই নোংরা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে কীটনাশক ছিটিয়ে পোকাগুলো মেরে ফেললেও অনেক পোকা থেকে যায়। যা পরবর্তীতে আবারও গাছে আক্রমণ করে।


“বিষয়টি জেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সরজমিনে পরিদর্শন করেন এবং কিছু নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান।”

 

বৃহস্পতিবার আবারও ওই বাড়িতে গিয়ে কীটনাশক ছিটিয়ে বেশিরভাগ পোকা ধ্বংস করেছেন বলে জানান তিনি।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, “টেকনাফের এ পোকা নিয়ে যেভাবে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, বাংলাদেশে পঙ্গপাল ঢুকে গেছে আসলে বিষয়টা তা নয়।


“কারণ এ পোকা ফসল ধ্বংস করেছে বলে শুনিনি এবং ফসলের জমিতেও এ পোকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।”


তিনি জানান, সাহারা মরুভূমি, আফ্রিকা, পাকিস্তানসহ অন্যান্য স্থানে ভিডিওতে যে পঙ্গপালের ছবি তিনি দেখেছেন, তার সঙ্গে এ পোকার মিল নেই।  ফলে পঙ্গপাল বলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু তিনি দেখছেন না।

 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ থেকে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে পঙ্গপাল।

 

এ বছরের শুরু থেকে পঙ্গপাল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান। গত ৩১ জানুয়ারি দেশটির সরকার এ নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।

 

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের ২২ হাজার একর জমির ফসল ধ্বংস করে ভারতের পাঞ্জাবেও আক্রমণ করে শস্যখেকো পঙ্গপালের ঝাঁক। পঙ্গপাল সামাল দিতে চীন থেকে বিশেষ ধরনের হাঁস আনার উদ্যোগ নেয় তারা।
 

জনদুর্ভোগ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর