ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৪৫

নাচোল কৃষক সাঁওতাল বিদ্রোহ ও ইলামিত্র সংগ্রহশালা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:৫১ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

নাচোল কৃষক সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়ে আমি একটি সিনেমা নির্মাণ করবো বলে ১৯৯৬-৯৯ সাল পর্যন্ত যখন এই বিষয়ে গবেষণা করি তখন আমাকে অত্র অঞ্চলের বহু স্থান একাধিকবার ভিজিট করতে হয়েছিল এবং বহু মানুষের ইন্টারভিউ করতে হয়েছিল। এর মধ্যে রামচন্দ্রপুর রহনপুর নাচোল ঘাষুড়া রাওতাড়া কেন্দুয়া ধর্মপুর কুসমাডাঙ্গা ইত্যাদি স্থানগুলো উল্লেখযোগ্য। রামচন্দ্রপুরের আজাহার ভাই ছাড়া ধর্মপুরের পাচু ডাক্তার এবং কুসমাডাঙ্গার কান্নামাঝি এইদুই সাঁওতাল কমরেডর দেখা আমি পেয়েছিলাম। এই বিদ্রোহের আসামী হয়ে আজাহার উদ্দীন এবং কান্নামাঝি দীর্ঘ সময় কারাবাসে ছিলেন।

 

তেভাগার দাবিতে ১৯৫০ সালে সংঘঠিত নাচোল কৃষক সাঁওতাল বিদ্রোহের অত্র অঞ্চলসমুহ যখন ভিজিট করছিলাম, তখন দেখেছি কিছু সাঁওতাল ও বয়স্ক কিছু মানুষ ছাড়া তেমন কেউ ইলামিত্রকে চেনেন না। ইলামিত্র তখন কালের করাল গ্রাসে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছেন। এই বিদ্রোহের ৫০ বছর পর আমি ২০০৩-২০০৪ সালে অত্র অঞ্চলে আমার ছবির শুটিং শেষ করি। “নাচোলের রানী” নাম দিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্পূর্ণ করে ৩০ জুন ২০০৬ সালে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর দেশে বিদেশে ইলামিত্র আমার দেয়া ছবির নামে তথা “নাচোলের রানী” টাইটেলে নতুনভাবে পরিচিতি লাভ করেন।

 

বিদ্রোহকালে ইলামিত্রকে বিশেষ করে সাঁওতাল কমরেডরা রানীমা বলে সম্বোধন করতেন। সেই রানীমা সিনেমা মুক্তির সাথে সাথে হয়ে গেলেন নাচোলের রানী। সাধারণ মানুষ যে ইলামিত্রকে ভুলে গিয়েছিলেন সেটার বড় প্রমাণ রানীমার স্থানে আমার ছবির নাম “নাচোলের রানী” নামে তাঁর পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ। এমন কি পশ্চিমবঙ্গে তথা কলকাতাতেও ইলামিত্র এবং নাচোল কৃষক সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্যাপকভাবে ফোকাস পায় নাচোলের রানী সিনেমা মুক্তির পর।

 

২০০৭ সালে ইলামিত্রের একমাত্র সন্তান মোহন মিত্র ও তাঁর স্ত্রী, অধ্যাপক সমিক বন্দ্যোপাধ্যায়, গোর্কীসদন প্রোগ্রাম অফিসার গৌতম ঘোষ এবং বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের উপস্থিতিতে কলকাতার গোর্কীসদনে নাচোলের রানী সিনেমা প্রদর্শনের পর মোহন মিত্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে সাংবাদিকদের বারবার বলছিলেন, আমার মাকে যখন মানুষ ভুলে গেছেন. এমন কি কলকাতার মানুষও যখন মাকে ভুলে যেতে বসেছেন, তখন বাংলাদেশের সন্তান অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড এই ছবি নির্মাণ করে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিলেন ইলামিত্র কে ছিলেন। মায়ের উপর নির্মিত সিনেমা দেখতে পাবো এটা কখন ভাবিনি। মা যে কথাগুলো বলতেন আমি আজ তা স্বচক্ষে দেখলাম। 

 

ইলামিত্র বা নাচোল কৃষক সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়ে এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘এসএ গেমস ২০১০’, এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি আমার নাচোলের রানী সিনেমার আংশিক অংশ নিয়ে “নাচোলের রানী” নামে গীতিনাট্য উপস্থাপনের দায়িত্ব পায়। নাচোল কলেজের বেশ কিছু ছেলে মেয়ে ও কয়েক হাজার সাঁওতাল নারী পুরুষ এই পর্বে অংশ নিয়েছিলন। নাচোল কলেজ মাঠে একমাস প্রশিক্ষণের পর ঢাকা স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে এই অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। 

 

গত দু’একদিন আগে নাচোলে ইলামিত্র সংগ্রহশালা উদ্বোধন হয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ আমাকে জানাননি, জানালে ভালো লাগত। তবে শুনে খুশি হলাম।  আমার বিশ্বাস এই সংগ্রহশালা সমৃদ্ধ করতে নাচোলের রানী সিনেমায় হবে প্রধান উপাদান।  আজ এইটুকু। 

 

লেখক: সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড

চলচ্চিত্রকার ও গবেষক

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর