ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ পৌষ ১৪৩১
good-food
৫৮৪৬

পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন জরুরি ?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:১৯ ১২ জানুয়ারি ২০১৯  

পরিবার পরিকল্পনা মানেই পুরো পরিবার নিয়ে একটি সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ। যার উল্লেখযোগ্য অনুষঙ্গ হলো জন্মনিয়ন্ত্রণ।

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাস্তবতাকে সামনে রেখে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো বা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই হলো পরিকল্পনা। আর একটি পরিবারের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতির লক্ষ্যে একটি দম্পতি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সচেতনভাবে চিন্তা-ভাবনা করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকেই বলা যায় ‘পরিবার পরিকল্পনা

যে-কোন পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠন করা। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবারের সার্বিক মঙ্গল ও উন্নতিসাধন করাই পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্য । স্বামী-স্ত্রী মিলে আলোচনা করে পরিকল্পিতভাবে পরিবার গঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই পরিবার পরিকল্পনা । পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে একজন দম্পতি সর্বমোট কয়টি সন্তান নেবেন, কতদিনের বিরতি নেবেন, জন্মনিয়ন্ত্রণে কী কী পদ্ধতি ব্যবহার করবেন ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ হচ্ছে এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

জন্মনিয়ন্ত্রণ কী ?  

স্বামী-স্ত্রীর যৌনমিলনের ফলে স্ত্রীর গর্ভে সন্তান জন্ম নেয় । সন্তান ধারণে সক্ষম (১৫-8৯) বছর বয়সী মহিলার ডিম্বকোষে জমা থাকে অসংখ্য ডিম । সেখান থেকে প্রতি মাসে একটি ডিম পরিপক্ক হয়ে ডিম্ববাহী নালী দিয়ে জরায়ুর দিকে আসতে থাকে । এই পরিপক্ক ডিমটি সে’সময় যদি পুরুষ শুক্রকীটের সঙ্গে মিলিত হয় তাহলে গর্ভসঞ্চার হয় । শুক্রকীটের সঙ্গে মিলিত না হলে পরিপক্ক এই ডিমটি মাসিকের রক্তস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে ।

জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো পদ্ধতি দিয়ে ডিমকে পরিপক্ক হতে না দিলে বা পরিপক্ক ডিম ও শুক্রকীটের মিলনে বাধা সৃষ্টি করা গেলে গর্ভসঞ্চার হতে পারে না । বিভিন্নভাবে গর্ভসঞ্চারে বাধা সৃষ্টি করা যায় । এগুলোকেই বলা হয় জন্মনিন্ত্রন পদ্ধতি । যেমন -

ডিম ও শুক্রকীটকে মিলিত হতে দেয় না : পুরুষ বন্ধ্যাকরণ, মহিলা বন্ধ্যাকরণ ও কনডম ব্যবহার ।

ডিমকে পরিপক্ক হতে না দিয়ে এবং ডিম্বস্ফুটন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে : খাবার বড়ি, ইনজেকশন, ইমপ্ল্যান্টের ব্যবহার ।

ডিম ও শুক্রকীট মিলিত হয়ে যে ভ্রুণের সৃষ্টি করে সেটিকে জরায়ুতে গ্রথিত হতে দেয় না : আইইউড ‘র ব্যবহার ।

এই সব পদ্ধতির যে কোন একটি ব্যবহার করে দম্পতি ইচ্ছা অনুযায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক ধরণের নিরাপদ এবং কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রচলিত আছে । দম্পতিরা ভালোভাবে জেনে - বুঝে এগুলোর মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দমতো ও উপযুক্ত একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন । তবে কোনো পদ্ধতি গ্রহণের আগে বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়া দরকার । বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে গ্রহীতাদের যখন একটা স্বচ্ছ ধারণা হবে, তখনই তাদের পক্ষে একটি পদ্ধতি বেছে নেয়া সহজ হবে ।

বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি সেবা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে :

# স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সেবা

# দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (আই ইউ ডি, ইমপ্ল্যান্ট)

# বন্ধ্যা দম্পতিকে পরামর্শ ও রেফার করা

# স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণকারী দম্পতির পুনরায় সন্তান জন্মদানে সক্ষমতার জন্য সেবা

# মাসিক নিয়মিতকরণ ও গর্ভপাত সংক্রান্ত

# গর্ভবতী সেবা

# প্রসব সেবা

# গর্ভোত্তর সেবা

# ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং রেফার করা

# বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা (কৈশোর প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা)

# নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবা পরিচর্যা

# ইপিআই টিকাদান

# স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক সেবা

# শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (আরটিআই), প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ (এসটিআই) ও এইচআইভি-সংক্রমণ সেবা

# পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারজনিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও জটিলতা সেবা

# স্বল্পমেয়াদি অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সেবা (খাবার বড়ি, কনডম, জন্ম নিয়ন্ত্রণের ইনজেকশন)

দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সরকারি এসব সুবিধা নিয়ে দম্পতিরা জন্মনিয়ন্ত্রণ তথা পরিবার পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ সেবা গ্রহণ করতে পারেন। আর যথাযথ পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে উপকৃত হবেন দম্পতি, পরিবার, সমাজ তথা পুরো রাষ্ট্র।