ঢাকা, ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৮৬২

পরিবারের ইচ্ছা বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হোক টুটুলকে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:২৭ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮  

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

 

সাইদুল আনাম টুটুল একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। তাই পরিবারের ইচ্ছা, তাঁকে যেন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারি সংশ্লিষ্ট মহল থেকে এই পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন বলেন, ‘সাইদুল আনাম টুটুল মুক্তিযোদ্ধার সনদ তোলেননি। কখনো তা নিয়ে মাথা ঘামাননি। এ কারণে একটু ঝামেলা হচ্ছে। কিন্তু তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা এবং ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আশা করছি, আগামীকাল বুধবার সরকারি সিদ্ধান্ত পেয়ে যাবো।’

গুণী চলচ্চিত্রকার, চলচ্চিত্র সম্পাদক, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল আনাম টুটুল গতকাল বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর সাইন্সল্যাবের ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি স্ত্রীসহ দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর দুই মেয়ে ঐশী আনাম ও অমৃতা আনাম এখন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। গতকাল রবিবার বাবার অসুস্থততার কারণে বড় মেয়ে ঐশী আনাম দেশে ফিরেছেন। আজ বুধবার বিকেলে ছোট মেয়ে অমৃতা আনামের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সাইদুল আনাম টুটুল

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সাইদুল আনাম টুটুলের মরদেহ শান্তিনগরে তাঁর নিজ বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এশার নামাজের পর তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর মরদেহ রাখা হয়েছে বারডেম হাসপাতালের শব হিমাগারে।

অন্যদিকে সাইদুল আনাম টুটুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ এবং ফেডারেশন অন্তর্ভুক্ত দেশের সব চলচ্চিত্র সংসদ ।

ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন বলেন, সাইদুল আনাম টুটুলকে আগামী বৃহস্পতিবার দাফন করা হবে। তার আগে সেদিন সকালে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রাখা হবে। শ্রদ্ধা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সাইদুল আনামের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

সাইদুল আনাম টুটুল ১৯৫০ সালের ১ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্তছিলেন। তিনি ঢাকা সরকারি মুসলিম স্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে মাধ্যমিক এবং পরে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালে সাইদুল আনাম টুটুল চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে

চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তিনি ১৯৭৪ সালে ভারতের আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে ভারতের পুনায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্র সম্পাদনার ওপর অধ্যয়ন করতে চলে যান। চলচ্চিত্র সম্পাদনার ওপর পড়াশোনা শেষ করে তিনি ১৯৭৮ সালে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

বাংলাদেশে এসেই সাইদুল আনাম টুটুল ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রের সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ছবির জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। 

এছাড়াও তিনি সম্পাদনা করেন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী নির্মিত ‘ঘুড্ডি’, শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত ‘দহন’, মোরশেদুল ইসলামের ‘আগামী’, ‘দুখাই’ ও ‘দীপু নাম্বার টু’। চলচ্চিত্র সম্পাদনার দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন গুণী চলচ্চিত্র শিক্ষক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ও চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি চলচ্চিত্র ভাষা ও চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিষয়ে পাঠদান করতেন।

‘কালবেলা’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে স্ত্রীর সঙ্গে সাইদুল আনাম টুটুল

 

২০০৩ সালে নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’। ১৯৪৬-৪৭ সালের বাংলার চাষিদের তেভাগা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’ সমালোচক ও দর্শকের কাছে নন্দিত হয়।

বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসের অনেক টেলিভিশন নাটকের নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল। তাঁর উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন নাটকগুলো হলো ‘নাল পিরান’, ‘বখাটে’, ‘সেকু সেকান্দর’, ‘৫২ গলির এক গলি’, ‘আপন পর’, ‘গোবর চোর’, ‘হেলিকপ্টার’, ‘নিশিকাব্য’, ‘অপরাজিতা’ ইত্যাদি।

এ ছাড়া সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের ধারায় প্রভূত পরিবর্তন আনেন। একজন সফল বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা হিসেবে তিনি চার শতাধিক বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেছেন।

‘কালবেলা’ ছবির দৃশ্যতথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চলচ্চিত্র অনুদানে সাইদুল আনাম টুটুল ‘কালবেলা’ নামে তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করছিলেন। চলচ্চিত্রটির দৃশ্যধারণের প্রায় ৯০ ভাগ কাজ তিনি শেষ করেন। চলচ্চিত্রটির বাকি অংশের শুটিংয়ের জন্য তিনি শিগগিরই রাজশাহীতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এ অবস্থায় ১৫ ডিসেম্বর তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানী ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন।

বিনোদন বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর