ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৭ পৌষ ১৪৩১
good-food
১৩৩৬

পহেলা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতার সম্পর্ক ছিল না!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৮ ১৩ এপ্রিল ২০২১  

হালখাতা। বাঙালির পহেলা বৈশাখের সঙ্গে এই শব্দ ভীষণভাবে জড়িয়ে। এ দিন দোকানে দোকানে ব্যবসায়ীরা পুরনো হিসাব চুকিয়ে ফেলেন। নতুন খাতায় বছরের হিসাব লেখা শুরু করেন। নতুন বৌনি শুরু হয়। 


ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই 'হালখাতা' শব্দ। কিন্তু কিভাবে পহেলা বৈশাখের সঙ্গে এর যোগ হলো? ইতিহাস অন্য কথা বলছে। যদিও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনকে অনেকেই বলি হালখাতা। কিন্তু এর সঙ্গে ইতিহাস ঠিক কিভাবে জড়িয়ে? 


পুরনো কলকাতায় ইংরেজি নববর্ষের উৎসব উপলক্ষে বেশ ঘটা হতো। কবি ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে লিখছেন, "খৃস্ট মতে নববর্ষ অতি মনোহর। প্রেমাননন্দে পরিপূর্ণ যত শ্বেত নর।/ চারু পরিচ্ছদযুক্ত রম্য কলেবর। নানা দ্রব্যে সুশোভিত অট্টালিকা ঘর।" 


তবে সেসময় বাংলা নববর্ষকে নিয়ে এই প্রেমের উৎসব বা আনন্দ দেখা যেত না। বাঙালিরা খুবই সাদামাটা কয়েকটি পুজো করত। 'চড়ক পার্ব্বন' নকশায় বাংলা নববর্ষের কথায় লেখা হয়েছে, " ইংরেজরা নিউ ইয়ারে বড় আমোদ করেন। আগামীকে দাড়াগুয়া পান দিয়ে বরণ করে নেন। আর বাঙালিরা বছরটা সজনে খাড়া চিবিয়ে ঢাকের বাদ্দি আর রাস্তার ধুলো দিয়ে পুরানকে বিদায় দেন। কেবল কলসি উচ্ছূর্গ কর্তারা আর নতুন খাতাওয়ালারাই নতুন বছরকে মনে রাখেন।" 


স্বভাবতই এই লেখনি থেকে বোঝা যায় হালখাতার কথাই বলা হচ্ছে। তবে সেসময় যে নববর্ষ উদযাপনে তেমন তোড়জোর ছিল না, তাও স্পষ্ট। তবে জানেন কি নববর্ষের সঙ্গে হালখাতার কোনও সম্পর্কই ছিল না। পরে এই হালখাতা নববর্ষের সঙ্গে যোগ হয়েছে। 


কিরকম সেটা? ব্যাখ্যা করে বললে, এর ইতিহাস একেবারে আদিম যুগের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষ যখন লাঙলের ব্যবহার শিখল। তখন তারা এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করল। তখন চাষ করা দ্রব্যের বিনিময় প্রথা শুরু হলো। এই হালের দ্রব্য বিনিময়ের হিসাবের জন্য একটি খাতায় নিজেদের মতো করে তারা লিখে রাখতে শুরু করল। সেই সময়কার ভাষায়। 


সেই খাতারই নাম ছিল 'হালখাতা।" হাল শব্দটি সংস্কৃত ও ফারসি, দু'টি থেকেই এসেছে বলে দাবি করা হয়। সংস্কৃত হলে তার মানে লাঙল। আর ফারসি হলে হাল-এর মানে নতুন। তাই এই দু'টি শব্দই হালখাতার ক্ষেত্রে যথাযোগ্য।
প্রাচীন হালখাতার অনুকরণে সম্রাট আকবর জমিদারদের বকেয়া রাজস্ব আদায়ের অনুষ্ঠান 'পুণ্যাহ' চালু করেছিলেন। তাই অনেকেই মনে করেন সম্রাট আকবর পহেলা বৈশাখ চালু করেছিলেন। কিন্তু তা নয়। 


তিনি ওই দিন রাজস্ব আদায় করতেন। এই এক নিয়ম মেনে বাংলার নবাব মুর্শীদকুলি খান 'পুণ্যাহ' পালন করতেন। সেসময় বহু জমিদাররা আসতেন খাজনা দিতে। নবাবি আমলে প্রাচীন হালখাতাকে 'পুণ্যাহ' নাম দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তা আবার 'হালখাতা'-তেই পরিবর্তীত হয়। 


সেই অর্থে দেখতে গেলে হালখাতা রাজস্ব আদায়ের নাম ছিল। নববর্ষের দিনে যা পলান করা হত। আমরা এখন যে পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ বা বছরের শুরু হিসেবে ধরি এই রীতি শুরু হয় ৩১৯ সালে। সেই সময় থেকেই পাঁজি গণনা শুরু হয়। এর আগে বছরের গণনা শুরু হত শীত বা শরৎকাল থেকে। 


ঋতু হিসেবে বছর গণনা করেতেও দেখা যায়। তবে পঞ্জিকা গণনার সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির পহেলা বৈশাখের শুরু না হলেও উৎসব পালনের শুরু। আর হালখাতা পহেলা বৈশাখের আর এক নাম। বর্তমানে এই দিন দোকানে দোকানে পুজো হয়। নতুন খাতা খোলা হয়। 


সামান্য কিছু দিয়েও খাতা খোলার রীতি এখনও রয়েছে। বেশ কিছু বছর ধরেই পহেলা বৈশাখ মানেই হালখাতা। নতুন বছরের শুরু। তবে ইতিহাস বলে 'হালখাতা' পহেলা বৈশাখের সঙ্গে জড়িয়েছে অনেক পরে। এর সঙ্গে সবচেয়ে প্রথম পরিচয় ঘটে বিনিময় প্রথার যুগের মানুষের। সেসময় পহেলা বৈশাখের কোনও চল ছিল না।