ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি বুধবার, ২০২৫ || ২ মাঘ ১৪৩১
good-food
৩৫১

পিঁপড়া থেকে শেখার অনেক কিছু আছে

অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৪১ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২  

আপনারা কি জানেন, বিশ্বে কত পিঁপড়ার বসবাস? ভাবছেন- পিঁপড়ার খবর কে রাখে। আমিও রাখি না। আজ একটি প্রবন্ধ পড়তে গিয়ে পিঁপড়ার ওপর অনেক মজার মজার রহস্যজনক তথ্য জানতে পারলাম। এসব তথ্য জানলে আপনারাও হতবাক হয়ে যাবেন। কিছু বলি।

 

পৃথিবীতে ২০ কোয়াড্রিলিয়ন পিঁপড়ার বসবাস। সংখ্যায় লিখলে তা দাঁড়ায়- ২০০০০০০০০০০০০০০০০। অর্থাৎ ২ এর পর ১৬টি শূন্য। এটা গেল পিঁপড়ার সংখ্যা। ২০ কোয়াড্রিলিয়ন পিঁপড়ার ওজন কত? তাও গবেষকরা নির্ণয় করেছেন। ২০ কোয়াড্রিলিয়ন পিঁপড়ার ওজন ১ কোটি ২০ লাখ টন ( শুষ্ক কার্বনের মাপকাঠিতে)। এ যে সংখ্যাগুলো লিখলাম, তা প্রকৃতপক্ষে একদম সঠিক সংখ্যা নয়, আনুমানিক।

 

প্রশ্ন করতে পারেন- পিঁপড়ার সংখ্যা ও ওজন নিয়ে গবেষকদের এত মাথাব্যথা কেন? সঙ্গত প্রশ্ন। পিঁপড়া সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি। বেশি জানি না। তবে জানা দরকার। পিঁপড়ার কাছ থেকে মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে।

 

পিঁপড়া অনেক উপকারী জীব। তারা মানুষের মতো স্বার্থপর প্রাণি নয়। পিঁপড়া মানুষের চেয়ে বেশি সঙ্গবদ্ধ ও কঠোর পরিশ্রমী। পিঁপড়া দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। পিঁপড়া মানুষের মতো স্বার্থপর নয়। তারা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে মিলেমিশে কাজ করে, মিলেমিশে বাস করে, মিলেমিশে খাওয়াদাওয়া করে। পিঁপড়ার দলনেতা রানি। তারা রানির হুকুম মেনে চলে। আমরা সবাই রাজা, রানি মানার তো প্রশ্নই আসে না।

 

পিঁপড়া দুর্দিনের জন্য সঙ্গবদ্ধভাবে খাবার সঞ্চয় করে, মানুষ তা করে না। পিঁপড়া তার শরীরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি ওজন বইতে পারে। মানুষ ফাঁকিবাজ, কাজ বেশি করে না, চুরি-ডাকাতি করে। অন্যের ধনসম্পদ লুট করে। পিঁপড়া নিজেদর দুঃখ কষ্ট পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করে, মানুষ মানুষের দুঃখ কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। পিঁপড়া মেধার মাধ্যমে শ্রমকে কাজে লাগায়, মানুষ মেধার মাধ্যমে অন্যকে ঠকায়। পিঁপড়া পরিশ্রমী, মানুষ অলস। অলস লোক জীবনে সাফল্য পায় না।

 

পিঁপড়া পরিবেশ সংরক্ষণে বিরাট ভূমিকা পালন করে। আর মানুষ পরিবেশ ধ্বংসে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করে। পিঁপড়া বিশ্বে যত প্রজাতির গাছপালা ও উদ্ভিদ রয়েছে তাদের বীজ সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই তো আমরা চারিদিকে এত গাছপালা ও বনজঙ্গল দেখি। একটু ভাবলে পিঁপড়ার আরও অনেক উপকারিতা আপনাদের চোখে পড়বে। তাই পিঁপড়াকে খাটো করে দেখবেন না। অযথা পিঁপড়া হত্যা করবেন না।

 

তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার জন্য পিঁপড়ার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। (ফরেস্ট রিসার্চ ফান্ড ও ডয়েচে ফরশুং গেমাইনশাপ্টের অর্থায়নে সারা বিশ্বের বেশ কয়েকজন গবেষক এই গবেষণা সম্পন্ন করেন)।

 

লেখক: অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ
সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।