ঢাকা, ১৬ অক্টোবর বুধবার, ২০২৪ || ১ কার্তিক ১৪৩১
good-food
৪৫

পূজামণ্ডপে ইসলামি সঙ্গীত পরিবেশন, আটক ২

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৫:৩৩ ১২ অক্টোবর ২০২৪  

চট্টগ্রামে জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ডিসি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দিন। 

 

ইতোমধ্যে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জড়িত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন মো. নুরুল ইসলাম ও শহিদুল করিম। শহিদুল করিম তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার এবং মো. নুরুল ইসলাম দারুল ইরফান একাডেমি নামে একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

শুক্রবার দুপুরে দামপাড়ার সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। পূজা কমিটির পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়া সজল দত্তকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির ডিসি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দিন জানান, জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে শিল্পীদের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে পূজার্থীরা পূজামণ্ডপে আসেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে পূজা আয়োজন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন। 

 

তার অনুরোধে কালচারাল শিল্পী গোষ্ঠীর ছয় সদস্য শহিদুল করিম (৪২), নুরুল ইসলাম (৩৪), আবদুল্লাহ ইকবাল (৩০), রনি (২৮), গোলাম মোস্তফা (৩৬) ও মো. মামুন (২৭) পূজার অনুষ্ঠানে একটি ইসলামিক গজল ও একটি বাউল গান পরিবেশ করেন। 

 

এর মধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দ চয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা গান দুটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

 

তিনি আরও বলেন, আটক শহীদুল করিম নগরীর তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মো. নুরুল ইসলাম দারুল ইরফান একাডেমির শিক্ষক। উক্ত ঘটনায় জড়িত অন্যদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত আছে।

 

গান পরিবেশন এবং পরবর্তী পরিস্থিতিতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা- এমন প্রশ্নে ডিসি রইছ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়টি আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ইসলামিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তকেও খোঁজা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

 

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, পেছনে কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটিও তদন্তে আসবে।

 

বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের আশ্বাস দেন।

 

জানা গেছে, শিল্পী গোষ্ঠীটির সদস্যরা দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে ছিল ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে রাষ্ট্রর এই বিধান’ শিরোনামে গান। এর মধ্যে দ্বিতীয় গানটির একাংশের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।  

 

সজল দত্তকে বহিষ্কার: জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠানের মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামে সংগঠনকে সংগীত পরিবেশন করার অনুমতি দেওয়ায় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। শুক্রবার সকালে সংগঠনটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়- মহানগর পূজা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক মঞ্চে ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’ নামক একটি সংগঠনকে গান করার সুযোগ প্রদান করেন সজল দত্ত। ওই সংগঠনের ছয়জন যুবক মঞ্চে উঠে বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই উপস্থিত সব পূজার্থীদের সম্মুখে ইসলামি গান পরিবেশন করেন।

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর