ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৫৯

বাংলার জ্বলন্ত ইস্যু রোহিঙ্গা

প্রশাসনের লোক আমাকে আটকে দেয়: আরশি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:৪৬ ২৩ অক্টোবর ২০২২  

দেশে অন্যতম সমস্যা রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক বিতাড়িত জনগোষ্ঠী তারা। কয়েক বছর আগে এদেশে ভর করে। সেসময়ে তাদের দুর্ভোগ ও বাস্তবতা পর্দায় তুলে ধরেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণী নির্মাতা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড। ২০১৭ সালে সিনেমার নির্মাণকাজ শুরু করেন তিনি।

 

পাহাড়, সাগরের বিভিন্ন দূর্গম অঞ্চলে দৃশ্যধারণের কাজ চলে। এতে অভিনয় করেন ঢালিউড অভিনেত্রী আরশি। এক রোহিঙ্গা নারীর চরিত্রে রূপদান করেছেন তিনি। এতে অভিনয় করতে গিয়ে তাকে অনভ্যস্ত প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। তাতে নানা অভিজ্ঞতা জমা পড়েছে তার ঝুলিতে। একজন গুণী নির্মাতার সাথে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা, তা পেশাগত জীবনকে সমৃদ্ধ করবে বলেও মনে করেন আরশি।  দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা শুটিং-য়ের নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন নবাগত অভিনেত্রী।

 

আরশি বলেন, রোহিঙ্গা আমার কাছে একটা স্বপ্ন। এ ছবিতে অনেক পরিশ্রম করেছি। এর আগে আরও দুটি সিনেমা করেছি। সেগুলোর তুলনায় এটি ভিন্ন। সেকারণে আমার স্বপ্নের জায়গা জুড়ে আছে ছবিটি। রোহিঙ্গা নিয়ে প্রত্যাশাটা অনেক।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আগ্রাসী মনোভাব সম্পন্ন। তবে আগে এরকম ছিল না তারা। তাছাড়া অঞ্চলটা দূর্গম। তবে এসব নিয়ে ভীত বা চিন্তিত ছিলাম না। এতে এক রোহিঙ্গা নারীর গল্প গভীর থেকে তুলে ধরা হয়েছে। চরিত্রটির জন্য আমাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। তাদের ভাষা, আচরণগত বৈশিষ্ট্য শিখতে হয়েছে। একাধিকবার পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। পোশাক নিয়ে নির্দেশনা মানতে হয়েছে।

 

হালের অভিনেত্রী বলেন, সর্বোপরি কতটুকু রোহিঙ্গা হয়ে উঠতে পেরেছি তা বলতে পারব না। এটা বলবে দর্শক। তবে হ্যাঁ, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। সবটুকু ঢেলে দিয়েছি। নাফ নদীতে শুটিং করেছি। এদিন শুটিংয়ের কস্টিউম পরে ছিলাম। শুটিং শেষে ফেরার সময় আমি পেছনে পড়ে যাই। এসময় চেকপোস্টে প্রশাসনের লোক আমাকে রোহিঙ্গা ভেবে আটকে দেয়। তারা বিশ্বাসই করছিল না আমি শুটিং করছি। পরে নির্মাতা এসে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

 

আরশি বলেন, আরেকটি ঘটনা মনে থাকবে। তখন অনেকেই রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতো।  আমি রোহিঙ্গার সাজে বসে আছি। শুটিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। এমন সময় এক ব্যক্তি আমার হাতে ২০ টাকা গুজে দেন। আমি খুব ইতস্তত বোধ করছিলাম। পরে ওই ব্যক্তি বলেন, আরে নাও, এখন লজ্জা করার সময় না। আগে খেয়ে বাঁচো।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে ছিমছাম পরিবেশে বেড়ে উঠেছি। অথচ আমাকে পাহাড়ে সাগরে শুটিং করতে হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেছি। ধুলা বালি মেখে মাটিতে বসে থেকেছি। এসব মোটেও সহজসাধ্য ছিল না।

 

অভিনেত্রী বলেন, সেসময় রোহিঙ্গাদের মাঝে খুব আতঙ্ক কাজ করতো। মানুষ দেখলে তারা দৌড়ে পালাতো। নিজেদের বাইরে কথা বলতো না। আমি কাজ করতে করতে তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতাম। ওদের নারীরা খুব রোগা। তাদের বলতাম এ যে প্রতিবছর সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। এতে শরীর খারাপ করছে। ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কিন্তু ওদের এক কথা, আল্লাহর দান আল্লাহ দেন।

 

তিনি বলেন, দেশের সবাই রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে শুনেছেন। কিন্তু কাছে থেকে দেখেছেন খুব কম মানুষ। এ ছবি দেখলে তারা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতিগুলো ভালোভাবে জানতে পারবেন। আরেকটা কথা, যারা জীবন নিয়ে হতাশায় ভুগি, তাদের এ ছবি দেখা উচিত। তাহলে তারা বুঝতে পারবেন, কতটা সংগ্রাম করে রোহিঙ্গারা জীবনযাপন করছেন। কতটা কষ্ট করে তারা টিকে আছে। এসব দেখে নিশ্চয়ই হতাশায় ডুবে থাকা মানুষ জীবনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন। জীবন মানে যে হতাশায় না ডুবে প্রতিনয়ত সংগ্রাম করে এগিয়ে যাওয়া, এটা উপলব্ধি করতে পারবেন।

বিনোদন বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর