ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৪০৪

প্রাণ খুলে কথা বলা হয় না কতদিন!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:১৩ ২৩ আগস্ট ২০২০  

একঝাঁক তরুণ শিক্ষক। একদল তরুণ প্রাণ শিক্ষার্থী। কোলাহলে মুখরিত থাকত। ছোট কিন্তু সুখী সেই পরিবারটি। নিত্যদিনের ক্লাস, আড্ডা, সেমিনার, কর্মশালা, প্রদর্শনী, উপস্থাপনা-এগুলো ছিল ক্যাম্পাসের নিত্য অনুসঙ্গ। কর্মব্যস্তময় জীবনের অর্ধেক সুখ পরিবারে, বাকি অর্ধেক কর্মস্থলে। 
মান্না দে’র গানের মতো খুব জানতে ইচ্ছে করে/খুব জানতে ইচ্ছে করে। প্রাণে-প্রাণে একাকার হয়ে মিলে থাকা শিক্ষার্থীরাও কি ফুলে ভরা ক্যাম্পাসকে মিস করছে না? মিস করছে না সেই ক্লাস, গল্প, গান, আড্ডা?
নগর জীবনের ‘জার্নি বাই বাস’-সবসময় একটা বিরক্তিকর অনুষঙ্গ। তবু  মিরপুর টু আশুলিয়া ভ্রমণ কখনও ক্লান্তিকর মনে হয় না। নদী বয়ে যায়/তরঙ্গ জানে না/সমুদ্র কোথায়। ছুটে চলা বাসের পাশ দিয়ে যদি বর্ষাকালে তরঙ্গে-ভরা নদী বয়ে যায়, তাহলে শ্রান্তিময় ভ্রমণটাও শান্তিময় হয়ে ওঠে। 
কতদিন হয়ে গেল। তুরাগ নদী দিয়ে বর্ষা কান্নার কত পানি গড়িয়ে গেল! অতিমারীর অতি আঘাতে জীবন থেকে গরম চায়ের কাপ থেকে উবে যাওয়া ধোঁয়ার ন্যায় ছয়টি মাস নাই হয়ে গেল।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর একটি প্রাণময় বিভাগ। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হচ্ছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়নাখ্যাত সাংবাদিকতা বিভাগ। বিভিন্ন বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণালী কার্যক্রম প্রতিফলিত হয় সাংবাদিকতা বিভাগের সেই আয়নায়। এ বিভাগের শিক্ষার্থীরাই বর্ণিল রঙে নিজেরা রঙিন হয়, বিভিন্ন বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়কে রাঙায়।
তবে জীবন, জীবনের চাকা কখনো থেমে থাকে না। বাঁধ দিয়ে যেমন বয়ে যাওয়া নদীর স্রোত আটকানো যায় না, জীবন ঘড়িকেও তেমনি বেঁধে রাখা যায় না। কবিগুরু বলেছেন, আসবে পথে আঁধার নেমে/তাই বলেই কি রইবি থেমে/ও তুই বারে বারে জ্বালবি বাতি/ হয়তো বাতি জ্বলবে না। 
প্রাণে-প্রাণে ভরপুর শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমৃদ্ধ বিভাগটিও থেমে নেই। থমকে নেই এর কার্যক্রম। শিব খেরা বলেছেন, বিজয়ীরা ভিন্ন ধরনের কিছু করে না, তারা একই কাজ ভিন্নভাবে করে।
বাংলাদেশে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর কিছুদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এরপরই ইউজিসির নির্দেশনা অনুসারে অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সবার মাঝে একটা ধোঁয়াশাভাব ছিল। তবে ধীরে ধীরে তা কেটে যায়। এখন পুরোদমে চলছে অনলাইন কর্মযজ্ঞ। 
একটা সময় মনে হতো সবকিছু অনলাইনে চলে যাওয়াই ভালো। জীবনটা সহজ হয়ে যেত। আসলে ব্যাপারটা তেমন নয়। অনেকগুলো পূর্বশর্ত মিলে গেলেই অনলাইন ক্লাস চালানো সহজ। অনলাইন কার্যক্রম চালানো সহজ। অন্যথায়, বিড়ম্বনা কোনো অংশে কম নয়।
যাহোক, পুরো পৃথীবিটাই এখন ‘নিউ নরমাল’-এ অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। মানারাতের সাংবাদিকতা বিভাগটিও এর ব্যতিক্রম নয়। মেনে নিতে না পারলেও মানিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। গুগল ক্লাসরুম, গুগল মিট, জুম, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুক লাইভ-এগুলোই এখন কর্মযজ্ঞের নিত্য অনুষজ্ঞ। 
‘আমি একদিন অনলাইনে নেই’-মনে হয় বুঝি এ পৃথিবীতেই নেই। ক্লাস চলছে, পরীক্ষা চলছে, ভর্তি চলছে অনলাইনে। করোনা মহামারীর মধ্যেই দুটো বিদায়ী ব্যাচের ভাইভা, প্রেজেন্টেশন ও মূল্যায়নও সম্পন্ন হয়েছে অনলাইনেই। 
ইতোমধ্যে ফল সেমিস্টার-২০২০ এর ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জ নিতে ইচ্ছুক যেকোনো উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করা তরুণ এ বিভাগে ভর্তি হয়ে নিজেকে বহুমুখী জ্ঞান ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ করতে পারেন।
বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো: এনাম বলেন, করোনাকালে জীবনযাত্রা যখন প্রায় অচল, তখন অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। এজন্য আমার বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
১৪তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী খন্দকার ইশরাত জাহান বলেন, আমার শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ক্লাস, পরীক্ষা সব কাজ আগের মতোই এগিয়ে নিতে পারছি। এজন্য আমি খুব খুশি ও সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তবে মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়া কখনও এক নয়। এক হতে পারে না। আমি যোগাযোগ করছি কিন্তু মিথস্ক্রিয়া হচ্ছে না। প্রাণখুলে কথা বলা হচ্ছে না কতদিন! পৃথিবী বদলে গেছে/যা দেখি নতুন লাগে। সব নতুন ভালো নয়। সব পরিবর্তন ইতিবাচক নয়। 
সংযুক্তি মানুষের কাম্য। সংযুক্তিতেই মুক্তি; যোগাযোগেই পরিতৃপ্তি। তাই গানের সুরে সুর মিলিয়ে আমিও বলতে চাই, আবার জমবে মেলা বটতলা হাট খোলা/বটতলা হাট খোলা অঘ্রানে নবান্নে উৎসবে। আঁধার কাটুক, নেমে আসুক ভোর। স্রষ্টা সমীপে এ আমার মিনতি।
 
মো: মামুন উদ্দীন
সহকারী অধ্যাপক,
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ,
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

সিটিজেন জার্নালিজম বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর