ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১০২৫

ফ্রেন্ড তো অনেক ‘বন্ধু’ আছে কজন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৫৪ ১ আগস্ট ২০২১  

যেকোনো সম্পর্কের ভিত মজবুতের জন্য একের অন্যের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা থাকাটা জরুরি। এক বন্ধু যখন আরেক বন্ধুর দুঃসময়ে পাশে থাকে, তখনই সত্যিকারের বন্ধুত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। বন্ধু মানে তো গভীর রাতেও বন্ধুর বিপদে ছুটে আসা। বন্ধুর দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে থাকা। সাফল্য ও ব্যর্থতায় কাঁধে কাঁধ রেখে চলা। আজকাল অবশ্য এমন বন্ধুর দেখা পাওয়া দুষ্কর।

 

‘একটাই কথা আছে বাংলাতে/ মুখ আর বুক বলে একসাথে/ সে হলো বন্ধু, বন্ধু আমার।’ এটি বাংলা সিনেমার স্বর্ণালি যুগের একটি বিখ্যাত গান। সেই গানের সময়কালের সঙ্গে এখনকার সময়ের বিস্তর ফারাক। বন্ধুত্বের ভালোবাসায় নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত—এমন বন্ধু আজকাল নেই বললেই চলে।

 

গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ। বন্ধুত্ব নিয়ে কথাটি বলেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হাজার হাজার ফ্রেন্ডের মাঝে আজ যেন সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যার সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়। যাকে সুখ ও দুঃখে পাশে পাওয়া যায়। যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ভালোবাসা ও ত্যাগের ভিত্তিতে। কথায় আছে, সুদিনের বন্ধু নাকি সবাই হয়; কিন্তু দুঃসময়ে কেউই পাশে থাকে না।

 

আপনি যদি একটি পার্টির আয়োজন করেন, তখন যে সংখ্যক মানুষকে পাশে পাবেন, বিপদে পড়লে তাঁদের অধিকাংশই আপনার পাশে থাকবে না। তাই তো দেখা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার লোক উপস্থিত হলেও সেই নবদম্পতি যখন মা-বাবা হতে চলে তখন জরুরি এক ব্যাগ রক্ত হন্যে হয়ে খুঁজতে হয়। তখন আর ওই পার্টিতে উপস্থিত হওয়া সেসব লোকের কাউকেই তেমন খুঁজে পাওয়া না। 

 

আজ ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে’। বিশ্বজুড়ে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে’ উদ্‌যাপন করা হয়। এই দিনে এক ফ্রেন্ড আরেক ফ্রেন্ডকে বিভিন্ন উপহার দিয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখে। হ্যাংআউটে মেতে ওঠে আনন্দে। যদিও করোনাকালে এখন এসবের সুযোগ কম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্রেন্ডের সঙ্গে ছবি শেয়ার, ফ্রেন্ডকে নিয়ে পোস্ট লিখেই এবারের ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে’ উদ্‌যাপন করতে হবে। 

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ফ্রেন্ড ও ফ্রেন্ডশিপ ডে সবকিছুই এখন বেশ জমজমাট। বিশেষ করে ফেসবুক আবির্ভাবের পর সবার ফ্রেন্ডলিস্টেই এখন হাজার হাজার ফ্রেন্ড। প্রতিদিন নিজ নিজ ছবি ও পোস্টে শত শত লাইক-রিয়েক্ট-কমেন্টের ছড়াছড়ি। ‘জাস্টফ্রেন্ড’, ‘বেস্টি’, ‘বয়ফ্রেন্ড’, ‘গুডফ্রেন্ড’, ‘গার্লফ্রেন্ড’, ‘মোর দ্যান ফ্রেন্ড’, ‘ট্রু ফ্রেন্ড’, ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস’—এমন হরেক ধরনের ফ্রেন্ড। এসব ফ্রেন্ড ও ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’র সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যাপার-স্যাপারও জড়িত। তরুণ সমাজের ফ্রেন্ড নিয়ে নানান ট্রেন্ডকে পুঁজি করে নির্মিত হচ্ছে নাটক, সিনেমা, জমজমাট হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গিফটের দোকানগুলো।

 

এত এত ফ্রেন্ড ও জমজমাট ফ্রেন্ডশিপ ডের ভিড়ে আজ যেন সত্যিকারের ‘বন্ধু’ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অনেক ভিড়ের মাঝেও আজ যেন আমরা একা, বড়ই একা। চারদিকে ফ্রেন্ড আছে কিন্তু বন্ধু কই! এত শত ফ্রেন্ড ও ট্রেন্ডের ভিড়ে এখন সত্যিকারের বন্ধু পাওয়া দায়।

 

বাণিজ্যিক স্বার্থের ফ্রেন্ড ও ফ্রেন্ডশিপ ডে কখনই বন্ধু ও বন্ধুত্বের বিকল্প নয়। বন্ধুত্ব বিষয়টা বিশাল, অনেক বিশাল। যতটা বিশাল ওই নীল আকাশ। জীবনে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া ও সত্যিকারের বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাই জীবনের সার্থকতা। অস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন, ‘একজন সত্যিকারের বন্ধু তোমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ এই সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো বন্ধু পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।