ঢাকা, ০৪ ডিসেম্বর বুধবার, ২০২৪ || ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫৭৪

বছর ফুরোলে এখনো বুকের ভিতর মেলা বসে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৪৯ ৩০ আগস্ট ২০২২  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম রাধাকান্তপুর। এই গ্রামের হাটে মেলার আয়োজন হতো প্রতি বছর। এ মেলার বিরাট নাম ডাক ছিলো সেসময়। মাসব্যাপী চলতো মেলা। শত শত দোকান, আলাদা আলাদা সারি। কসমেটিকস সারি আলাদা ,খেলনা সারি আলাদা, কাঠের আসবাবপত্র, মিষ্টির দোকান আরো কত কি সব ভিন্ন সারিতে।

 

বিরাট যাত্রা পালা আসতো, সার্কাস পার্টি আসতো,পুতুলনাচ আরও কত কি যে আসতো মেলায়। প্রতি বছর আমরা কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করতাম এবার কোন যাত্রা পালা আসবে? সার্কাসে কয়টা হাতি থাকবে ? মোটরসাইকেল খেলা আসবে কিনা?

 

প্রতি বছর মেলা বসলে, গ্রামের জামাইরা সব বন্ধু বান্ধব নিয়ে শশুরবাড়ী বেড়াতে আসতো। মেয়েরা বাপের বাড়ি এসে বায়না ধরতো কাঠের আসবাবপত্র কেনার। সারা গ্রামের মানুষ যেন এই সময়টার অপেক্ষা করতো, মেলা বসলে প্রয়োজনীয় সব আসবাব কিনবে। আমাদের তখন ঈদ। সারাদিন মেলায় ছুটোছুটি করতাম, দুলাভাইদের কাছে নানা আবদার.. চুড়ি, ফিতা, রংবেরংয়ের পুতুল, বেলুন, ভটভটি গাড়ি, পিস্তল কত বাহারি রকমের খেলনা কেনা,আর কত রকম মিষ্টি খাওয়া গোল্লা, চমচম, ছানাজিলাপী। আহা, সে যেন এক অনন্য উৎসব।

 

সারাদিন অনেক মাইকে বাজতো বাংলা সিনেমার গান। গোটা রাধাকান্তপুর যেন আনন্দে গম গম করতো । আর রাত বাড়লে শুরু হতো যাত্রা পালা। আগামীকাল কি পালা হবে, সেটা একদিন আগে ঘোষণা হতো। ফলে মুখে মুখে ফিরতো সে পালার নাম। সারা গ্রামের মানুষ জানতো কি হবে অদ্য রজনীর যাত্রা পালা। রাতে ছেলে মেয়ে নিয়ে মা খালারা ছুটে আসতো যাত্রা পালা দেখতে। শীতের রাতে চাদর মুড়ি দিয়ে ছলছল চোখে তারা উপভোগ করতো চিরায়ত বাংলার লোককাহিনী। কাসেম মালার প্রেম, রহিম রুপবান, আলাল দুলাল, গুনাই বিবির কষ্ট বুকে নিয়ে তারা শেষ রাতে ঘুমাতে যেত।

 

সেই সব দিন রাত্রির গল্প ভেবে এখনো রাত ভোর হয়..। বুকের ভিতর এখনো বছর ফুরোলে মেলা বসে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ছুটোছুটি করে, মিষ্টি খায়। হাতে মুখে লেগে থাকে চিনিদানা, বাতাসার গুঁড়ো। মাইকে বাজে হাহাকার, মিষ্টির দোকানে উড়তে থাকা কালো মাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ নিয়ে যায় অন্য কোথাও..।

 

এমন সরল সোজা আনন্দের সে গ্রাম ছাব্বিশ বছর আগে ভয়াল পদ্মার বুকে হারিয়ে গেছে। ফারাক্কা বাঁধের খুব কাছাকাছি হওয়ায় ভয়াবহ নদীভাঙনের শিকার এই অঞ্চল। আমার শৈশবের স্বর্গ রাধাকান্তপুর এখন কেবলই মানচিত্র।

 

লেখক: রাশিদ পলাশ

চলচ্চিত্রকার

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর