ঢাকা, ২৯ নভেম্বর শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৩০

বাইডেনের ঐতিহাসিক বিজয় ও ট্রাম্পের ভরাডুবির ৫ কারণ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪৭ ৮ নভেম্বর ২০২০  

রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা আর দীর্ঘ নাটকীয়তার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে বেজে উঠল রিপাবলিকান প্রার্থী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায় ঘণ্টা।

 

প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মোট ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৮৪টি পেয়ে ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বাইডেন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪ ইলেকটোরাল ভোট।

 

হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথে একাধিক রেকর্ড গড়েছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন তিনি। টপকে গেছেন ‘বন্ধু’ ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে।

 

আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হলেন বাইডেন। ৭৭ বছর বয়সে এই কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। এর আগে এত বয়সে দেশটিতে কোনো প্রেসিডেন্ট বিজয়ী হতে পারেননি।

 

সর্বোপরি, এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাইলফলক। এর আগে দেশটির কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এত ভোট পড়েনি। এত টানটান উত্তেজনাও ছিল না। 

ডেমোক্র্যাট ও বাইডেনের ঐতিহাসিক বিজয় এবং রিপাবলিকান ও ট্রাম্পের ভরাডুবির ৫ কারণ

 

১. কোভিড, কোভিড, কোভিড
এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী যুক্তরাষ্ট্র। প্রাণঘাতী ভাইরাসে দেশটিতে মারাই গেছেন ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। এছাড়া মার্কিন মুলুকের ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। 

 

তবে শুরু থেকেই তা অস্বীকার করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সবশেষ গেল সপ্তাহে উইসকনসিনে এক র‌্যালিতে তিনি বলেন, সবাই কোভিড, কোভিড, কোভিড নিয়ে ব্যস্ত। এ নিয়ে সব সংবাদই ভূয়া।

 

সেখানে করোনাকে বেশি গুরুত্ব দেন বাইডেন। নির্বাচনী প্রচারে নানা সমাবেশে বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে আগে এই ইস্যুতে মনোযোগ দেবেন তিনি। মূলত তা-ই আমেরিকান জনগণের মনে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। 

 

২. নীরব নির্বাচনী প্রচার
ভোটের সময়ে নীরব প্রচার চালিয়েছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারি, বর্ণ্যবৈষম্য, অর্থনৈতিক দুর্দশা, শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবার ত্রুটি, জলবায়ু পরিবর্তন, কূটনীতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তদুপরি, জয়ী হতে পারলে সেগুলো স্বল্প মেয়াদে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। কোনো বিষয় নিয়ে উচ্চবাচ্চ্য করেননি। কোনো ইস্যুতে বেশি কথা বলেননি। 

 

উপরন্তু অল্প কথাতেই ট্রাম্পের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছেন ৭৭ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ। তার প্রচার শিবির, মনোনীত প্রার্থী, সহযোগিরা-সবাই একই পথে হেঁটেছেন। সেগুলোই কাজে লেগেছে। আমেরিকানরা তা সাদরে গ্রহণ করেন। 

 

সেখানে নির্বাচনী প্রচারে মুখে যা এসেছে, তাই বলেছেন ট্রাম্প। কোনো কোনো কথাতে ক্ষমতার জোর দেখিয়েছেন। দেশের জনগণের সমস্যা সমাধান নিয়ে কথা বলার চেয়ে নিজের ও দলের ঢোল পেটাতে ব্যস্ত থেকেছেন। গণতন্ত্র নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বিষয়গুলো ভালোভাবে নেননি মার্কিনিরা।

 

৩. নির্বাচনী স্লোগান
এবারের নির্বাচনের ট্রাম্পের স্লোগান ছিল 'আমেরিকা ফার্স্ট'। এ দিয়ে তিনি সবকিছুতে আমেরিকানদের প্রাধান্য দেয়ার কথা বলেন। এটি তার পূর্ববর্তী (২০১৬) স্লোগান ' মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন'-এর সংস্করণ। 

 

সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের নির্বাচনী স্লোগান ছিল 'বিল্ড ব্যাক বেটার'। এতে আমেরিকানদের পাশাপাশি অন্যদের গুরুত্ব দেন তিনি। বোঝাতে সক্ষম হন বিজয়ী হতে পারলে বাইডেন সরকার হবে সবার। এটি স্থানীয়দের পাশাপাশি অভিবাসীদের মন কাড়ে।

 

৪. নীতিতে অটল
নির্বাচনকালে বৈশ্বিক সরকার দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা, বিনা বেতনে কলেজে পড়ার ব্যবস্থা, সম্পদের ওপর করারোপের কথা বলেন বাইডেন। দলের অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও সেসব নীতি থেকে ফিরে আসেননি তিনি। 

 

জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার কথা বলেন বাইডেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকে রানিং মেট নির্বাচিত করে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। তাতে দলীয় ভেদাভেদও দূর হয়। দলের সবাই একই ছাতার তলে আশ্রয় নেন। এই দলীয় ঐক্যই তাকে পাহাড়সম বিজয় ছিনিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।

 

অন্যদিকে, সেরকম কোনো নীতি গ্রহণ করতে পারেননি ট্রাম্প। অনেক সিদ্ধান্ত একা নিয়েছেন। যেখানে দলের কারো মতামত ছিল না। দলীয় অনেক কর্মী তার ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। নির্বাচনে প্রচারেও তারা সেখাবে নামেননি। রিপাবলিকানদের পরাজয়ের এটিও অন্যতম কারণ।

 

৫. অর্থের জোগান, মিডিয়ার সমর্থন
বিগ বাজেট নিয়ে নির্বাচনে নামেন বাইডেন। সেই অর্থের সদ্ব্যবহার করেন তিনি। কোন কোন অঙ্গরাজ্যে কি পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে, সেই অনুমান ছিল তার দুর্দান্ত। করোনাভাইরাসের কারণে সব জায়গায় প্রচার চালাননি ডেমোক্র্যাটরা।

 

বরং পয়সা খরচ করে তৈরি করেছেন সময়োপযোগী বিজ্ঞাপন। মিডিয়ার সমর্থন ধরে রেখেছেন। ফলে গণসংযোগটা দারুণ হয়েছে তাদের। প্রতিটি আমেরিকানের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন বাইডেন।

 

সেই অর্থে সেটা তেমনভাবে করতে পারেননি ট্রাম্প। হাতে টাকা ছিল, কিন্তু তা ভালোভাবে ব্যবহার হয়নি। বিজ্ঞাপনী প্রচারটা সেভাবে চালাতে পারেনি। মিডিয়ার সমর্থন আদায়েও ব্যর্থ হন রিপাবলিকানরা।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর