ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২৬০

বায়ুদূষণ না ধূমপান, কোনটি বেশি ক্ষতিকর?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১২ ৫ মার্চ ২০২০  

ফুসফুসের অসুখ, ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক এসব মারাত্মক রোগের সঙ্গে বায়ুদূষণের সংযোগ রয়েছে। যে কারণে একে 'নতুন ধরণের ধূমপান' বলা হচ্ছে। কিন্তু বায়ুদূষণ আমাদের আয়ুর ঠিক কতটা কেটে ফেলতে পারে?
বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঘরের বাইরের দূষিত বাতাস আমাদের আয়ু গড়ে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত কমিয়ে দিচ্ছে, যা আগের যেকোনো গবেষণার চেয়ে বেশি। আর ধূমপানের ফলে আয়ু কমে এর চেয়েও বেশি।
কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, যুদ্ধসহ সব ধরণের সংঘাতে পৃথিবীতে প্রতিবছর মানুষের আয়ু যতটা কমে, এর চেয়ে প্রায় ১০গুণ বেশি গড় আয়ু কমে বায়ুদূষণের কারণে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর মৃত্যুহার ধূমপানের ফলে হওয়া মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। ২০১৫ সালে মানুষের গড় আয়ু এবং মৃত্যুহার যারা গণনা করেন, তারা দেখতে পেয়েছেন, বায়ুদূষণের কারণে পৃথিবীতে ৮৮ লাখ মানুষ মারা যান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে ধূমপানের কারণে প্রতিবছর ৮২ লাখের বেশি মানুষ মারা যান বিশ্বজুড়ে। এর মধ্যে ৭০ লাখের বেশি মানুষ মারা যান সরাসরি সিগারেট এবং তামাকজাত পণ্যের ব্যবহারের কারণে।
বিশ্ব মহামারী
দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে একজন মানুষের হৃদরোগ এবং ফুসফুসের অসুখ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া স্বাস্থ্যের ওপর এর অন্য নেতিবাচক প্রভাব তো আছেই। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক থমাস মুনজেল মনে করেন, তাদের গবেষণা প্রমাণ করে এখন বায়ুদূষণের বিশ্ব-মহামারী হতে চলছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এখন নীতিনির্ধারক এবং চিকিৎসকদের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। গত কয়েক দশকে ধূমপানের তুলনায় বায়ুদূষণের দিকে অনেক কম মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
অধ্যাপক মুনজেল বলছেন, কেবল জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমন যদি শূন্যে নামিয়ে আনা যেত, তাহলে মানুষের গড় আয়ু অন্তত এক বছর বাড়ানো যেত।
আঞ্চলিক ও জাতীয় ক্ষতি
গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবসমূহ জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রভাব ফেলে। যেমন পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে গড় আয়ু চার বছরের মতো হ্রাস পেয়েছে, যেখানে গড় আয়ু সবচেয়ে কম হ্রাস পেয়েছে ওশেনিয়াতে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের প্রভাব একেক দেশে একেকরকম হয়। আফ্রিকার চাঁদে বায়ুদূষণেরে কারণে গড় আয়ু কমেছে ৭ বছরের বেশি। আবার কলম্বিয়াতে কমেছে ৪ মাসের কিছু বেশি সময়।
মনুষ্যসৃষ্ট নির্গমন
গবেষকেরা মানুষের কারণে হওয়া দূষণ এবং প্রাকৃতিক কারণে হওয়া বায়ুদূষণ- যেমন মরুর লু হাওয়া এবং দাবানলের কারণে হওয়া দূষণ- দুটোই পরীক্ষা করে দেখেছেন। তাতে দেখা গেছে পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ অকাল মৃত্যুর কারণ দূষণ তা মূলত মানুষের সৃষ্টি।
অধ্যাপক মুনজেল বলেন, এ হার উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ মানে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৫৫ লাখের মতো মৃত্যু পুরোপুরি এড়ানো যেত, যদি বায়ুদূষণ না থাকতো।
এছাড়া বায়ুদূষণের সঙ্গে ৬ ধরণের রোগ। যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো রোগের সংযোগ নিরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীদের দলটি। তারা দেখেছেন, এর মধ্যে হৃদরোগের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়। এরপরেই রয়েছে ফুসফুসের সংক্রমণ। আর বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্ক ব্যক্তিরা।
আরেকজন গবেষক হোসে লেলিভেল্ড বলেন, আমরা বায়ুদূষণের কারণে হওয়া বিভিন্ন রোগের চিত্র দেখেছি,েএটি কার্ডিওভাসকুলার অর্থাৎ হৃদরোগের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে, যা ধূমপান হৃদপিণ্ডের যে ক্ষতি করে প্রায় সেটার সমান।
তিনি বলেন, বায়ুদূষণ অক্সিডেটিভ চাপ বাড়িয়ে মানুষের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর ক্ষতি করে, যা পরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক হার্ট-অ্যাটাক এবং হার্ট-ফেলের কারণ হয়ে ওঠে।
বয়স্ক মানুষ বেশি ঝুঁকিতে
গবেষকেরা দেখেছেন, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বিপদে পড়েন বয়স্ক ব্যক্তিরা। সারা দুনিয়ায় এ কারণে যত মৃত্যু হয়, এর ৭৫ শতাংশই ঘটে; যাদের বয়স ৬০ এর ওপরে।
গবেষণার ফলাফলের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রোগ-তত্ত্ববিদ স্যামুয়েল চাঁই বলেন, এ গবেষণা প্রমাণ করছে, বায়ুদূষণ পুরো বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য কত বড় হুমকি সৃষ্টি করেছে। বায়ুদূষণ নতুন ধূমপান এ আর গোপন কথা নয়। সুতরাং জনস্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের এখন এ নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার সময় এসেছে।
এখন বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজে লাগিয়ে নতুন নীতি তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।