ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩০৯৮

বিলুপ্তি ও হুমকির মুখে সুন্দরবনের ডলফিন-শুশুক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:১৮ ১১ আগস্ট ২০১৯  

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মিঠা পানির শুশুক এবং ইরাবতি ডলফিনসহ বিভিন্ন বিপন্ন প্রাণীর আবাসস্থল। কিন্তু অতিরিক্ত মাছ শিকার, ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক ট্র্যাফিক, শিকার ও অপরিকল্পিত পর্যটনসহ বিভিন্ন কারণে ডলফিন ও শুশুকের সংখ্যা বিলুপ্তি ও হুমকির মুখে পড়েছে।

২০১৪ সালে সুন্দরবনে নদীতে দুর্ঘটনায় তেল ছড়িয়ে পড়ে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের প্রভাব পড়ে ডলফিনের ওপর।

 ‘আইডেন্টিফাইং ডলফিন হটস্পট ইন সাউথ ইস্টার্ন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলে ২০০১ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় সুন্দরবনের তুলনামূলক কম লবণাক্ত এলাকায় ২২৫টি শুশুক শনাক্ত করেছিলেন ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডব্লিউসিএস) বাংলাদেশের গবেষকরা। তবে গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ সংখ্যা কমে ১৫৯-এ দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, ২০০৬ সালের এক সমীক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় ইরাবতি ডলফিন শনাক্ত হয়েছিল ৪৫১টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত করা সমীক্ষায় এ সংখ্যা ১৯৮টি। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।

রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুন্দরবন ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ৮০টি শুশুক, ২৪টি ইরাবাতি ডলফিন এবং চারটি পাখনাহীন পরপয়েসের মৃত্যু হয়েছে।


ডব্লিউসিএসের মতে, ডলফিন সাধারণত জেলেদের কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল, ইলিশ ধরা জাল ও বড়শিতে আটকা পড়ে মারা গেছে। কিছু মারা গেছে নৌযানের আঘাতে। কিছু হত্যার শিকারও হয়েছে।

বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মদিনুল আহসান জানিয়েছেন, গত ৬ বছরে জেলেদের জালে আটকে ১৪টি ডলফিন ও শুশুক মারা গেছে।

৩১ জুলাই বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বোরো দুর্গাপুরে মোংলা নদী থেকে আট ফুট লম্বা প্রায় ১২০ কেজি ওজনের শুশুকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

বন বিভাগের খুলনা বিভাগীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, মাছ ধরার জালে আটকে শুশুকটি মারা গেছে।

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শ্বাস নিতে বাতাসের সংস্পর্শে আসার দরকার হয়। জালে আটকা পড়লে তাদের দম বন্ধ হয়ে যায়।

ডব্লিউসিএস বাংলাদেশের অ্যাডুকেশন অ্যান্ড লাইভলিহুড প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর নাদিম পারভেজ বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুন্দরবনকে ডলফিনের নিরাপদ আবাসে পরিণত করা সম্ভব।

ডব্লিউসিএস স্থানীয় জেলেদের নিয়ে সিটিজেন সাইন্স ফিশারম্যান সেফটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে তাদের জালে আটকা পড়া ডলফিন, কচ্ছপসহ অন্যান্য বিপদাপন্ন ও আইনে সুরক্ষিত প্রাণিদের ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে।

বন্যপ্রাণী (প্রকৃতি ও সংরক্ষণ) আইন ২০১২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্ত সব প্রজাতির ডলফিনই সুরক্ষিত। এগুলো শিকার, হত্যা, কোনো অংশ খাওয়া বা বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ডলফিনের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া মানে মাছের পরিমাণও কমে যাওয়া। ডলফিনের বিলুপ্তি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং এদের সুরক্ষায় সর্বস্তরের জনগণকে সচেষ্ট হতে হবে। ইউএনবি।