ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৯০২

বিয়ে বনাম ভালোবাসার ফাঁদ

নাজিয়া নিগার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:০২ ৬ মে ২০২১  

একটা সমাজে একটা মেয়ের যখন বাবা, মা বেঁচে থাকে না; সেই সমাজে মেয়েটি কতটা অসহায় আর নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে সেটা যে ভিক্টিম সে বোঝে, সে-ই বুঝবে! আর কেউ তার বা তাদের দুঃখ কষ্টের ভার বুঝবে না! বোঝার কথা নয়! কারণ ব্যথা যার বা যাদের, তারা বোঝে ব্যথাটা কতটা কষ্টের!


অল্প বয়সে বাবা, মা হারা হলে সে মেয়ের কপালে আরো দূর্গতি! একে তো বয়স কম, তার মাঝে নানা ফ্যান্টাসি কাজ করে এ বয়ঃসন্ধিকালেই! এ সময় প্রত্যেকটা মেয়ে চায় আশ্রয়। একটা ভালোবাসার আশ্রয়ে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। বেঁচে থাকার যুদ্ধে সে আশ্রয় খোঁজাটা তার কাছে তখন মুখ্য।


মোসারাত মেয়েটির বড় বোন ছিল যতটুকু জানি, তাঁর একজন ভাইও ছিল। বড় বোন কী পেরেছে এই ছোট্ট মেয়েটির দায়িত্ব নিতে! কিংবা ভাইটি? পারেনি। আর পারেনি বলেই এমন কুমিরের মুখে এই ছোট মেয়েটিকে ঠেলে দিয়েছে!

 

এতটুকু একটা মেয়ে তার ওপর সুন্দরী! এই বাচ্চা মেয়েটিকে একা কি হিসেবে রাজধানী ঢাকার মতো একটা নরপিশাচদের চারণভূমিতে এভাবে ছেড়ে দিল তারা? কারণ তাদের বোনের দায়িত্ব নিতে অপারগ ছিল! হুম এটাই বাস্তবতা! এই ছোট্ট মেয়েটিকে ছেড়ে দিল মডেলিং, নাটক করে নিজে খেটে খাওয়ার মতো যুদ্ধে!


একটা কিশোরী মেয়ে! তার বয়সে চিন্তায় ঢুকে গিয়েছিল দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে! ভাই বোন কেউ তা নেবে না! বেঁচে থাকা এবং ভালো থাকার যুদ্ধে লড়াইটা  একার! সেক্ষেত্রে তোমরা তাকে লোভী বললে হুম সে ভালোভাবে বাঁচার জন্য লোভ করেছিল। এটা অপরাধ!


কিন্তু এ কিশোরীকে লোভের ফাঁদে সমাজের কীটেরা ফেলে ফ্যান্টাসি নিয়ে খেলে যে জীবনটা নিয়ে নিল, সেই কীটেরা কী লোভী নয়! ঘরে বউ রেখে অন্য নারী মাংস ভক্ষণ করার লোভ যেসব কীটেরা সামলাতে পারে না সেসব লোক মেয়েটির চেয়ে মহাপাপী!


কিশোরীর এ বয়সে জেনাহ শব্দটির অর্থ জানার কথা নয়! বাবা, মা না থাকলে আরও না জানাটাই স্বাভাবিক! আমি নিজেই জেনাহ শব্দটির বিষয়বস্তু জেনেছি কিছুদিন আগে! এর আগে এই শব্দটি সম্পর্কে পরিচিত ছিলাম না! মানুষের প্রতি ভালোবাসা আমার কাছে পবিত্র একটা শব্দ। হুম অবশ্যই এটাকে পুঁজি করে কেউ যদি নোংরামি করে বিয়ের নামে অবশ্যই সেটা ভয়ংকর পাপ এবং এটা বিশ্বাস ও আস্থা ভঙ্গের জঘন্য মহাপাপ আমি বলব।


কাউকে ভালোবাসা দোষের কিছু নয়। তবে ভালোবাসাটা যেন জেনাহ নামের পাপী শব্দে কলুষিত না হয়। আমাদের সমাজের মেয়েরা সবসময়ই খোঁজে একটা আস্থা আর বিশ্বাসের সম্পর্ক! সেই আস্থা আর বিশ্বাসটাকে তারা বিয়ে অবধি ভেবেই কাউকে না কাউকে ভালোবাসে!


সেই ভালোবাসায় বিয়ের ফাঁদ পেতে যারা ভোগের বস্তু বানায় নারীকে, আমি বলবো তারা কোনো সম্মানীয় নারীর পেট থেকে জন্মগ্রহণ করে না। নইলে ভালোবাসাকে পুঁজি করে এমন জঘন্য কাজ কোনো পুরুষ করবে না! অমানুষ হলেই সেটা করতে পারে।


মেয়েদের বলব। প্রেম, ভালোবাসা এ যুগে ভোগের বিষয় ছাড়া কিছুই না। কাজেই সাবধানে পা ফেলো। যদি ভোগ্যবস্তু হতে চাও স্বেচ্ছায় প্রেম, ভালোবাসা কর, ভোগ্যবস্তু হও। সেক্ষেত্রে অন্যপক্ষকে দোষারোপ করে লাভ নেই।


নিজে ভোগ্যবস্তু হবে জেনে বুঝে বিয়ের আগেই সেটা বুঝেশুনে হও। আর তা না হতে চাইলে বিয়ের আগে শরীর দিয়ে নিজেদের এত সস্তা করে ফেল না। ওদের বল আগে বিয়ে কর, এরপর বৈধ উপায়ে ভোগ কর! আর তা না পারলে পতিতালয় খোলা আছে, সেখানে যাইয়া 'কুত্তাগীরি' কইরা খায়েশ মিটিয়ে আয়। 


আল্লাহর ওয়াস্তে যৌবনের তাড়নায় ফ্যান্টাসিতে গা ভাসিয়ে নিজেদের এভাবে শেষ করে দিও না কেউ!
আমাদের যুগে বাবা, মায়েরা এসব বিষয় নিয়ে এত খোলামেলা ছিল না। 


প্রেম, ভালোবাসাটা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কী বা কিশোরী বয়সে কী কী কৌতুহল হতে পারে বিপরীত সেক্সের প্রতি-এসব নিয়ে বাবা মায়েদের কাছে জানতে চাওয়া ছিল রীতিমতো রকমের লজ্জার এবং ভয়ের! ফলে অনেকের জীবনের অনেক ভুল হয়ে গিয়েছে মনের অজান্তে!


এখনকার যুগে আমরা যারা বাবা, মা আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ বাচ্চাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে ট্যাক্টিক্যালি কথা বলা। ছেলেমেয়ের বন্ধুত্বে জেন্ডার মাথায় রেখে বন্ধুত্ব করাটা উচিৎ নয়- এটা তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। 


সেই সঙ্গে খোলামেলা তাদের সাথে বলতে হবে ছেলেমেয়েদের সম্পর্কের সীমাবদ্ধটাতে ঠিক কোন বয়সে গিয়ে নিজেদের ভালোলাগা বা ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেবে এবং যেহেতু আমরা মুসলিম সেক্ষেত্রে এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে খোলামেলা বাচ্চাদের সাথে কথা বলার সময় আমি মনে করি এখনই।


এ যুগের বাবা, মায়েদের বলব - আপনারা ছেলেমেয়েদের বন্ধু হউন। তাদের মনের কথা বোঝার বা জানার চেষ্টা করুন। আর যেসব উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের বাবা মা নেই; তাদের বড় ভাই, বোন বা আত্মীয়স্বজনরা দায়িত্ব নিন দয়া করে! 


আজ আপনার মরা ভাইয়ের বা বোনের বাচ্চাটি আপনার বা আপনাদের ভেবে তাদের মানুষ করুন। খোলামেলা আলোচনা করুন নারী-পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে তাদের সাথে।


বড় বড় কুমীরের বাচ্চারা আপনার কন্যাকে ভোগের বস্তু ছাড়া কিছুই ভাববে না এটা তাকে বোঝান।


বড় বড় কুমীরের বাচ্চারা কেবল খেয়ে ফেলবে কখনো তাদের নিজের করবেন না- এসব নিয়ে কন্যার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন। আমার ওয়ালে টিনএজার ছেলেমেয়ে থাকলে তাদের বলব-অল্প বয়সে প্রেম, ভালোবাসা একটা ফ্যান্টাসি ছাড়া কিছুই না।


প্রেম, ভালোবাসা কর একটা নির্দিষ্ট বয়সে গিয়ে বিয়ের যোগ্য হয়ে। নইলে ভোগের উদ্দেশ্যে প্রেম, ভালোবাসায় জড়িয়ে জেনাহর মতো কঠিন পাপে নিজেদের বিলীন না করাই উত্তম! ভালোবাসা পবিত্র বন্ধন! আর এ পবিত্র বন্ধনকে জেনাহ শব্দে মুড়িয়ে পাপী হওয়ার কোনো অর্থ নেই। এর শেষটা ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই হয় না। যা এখনকার সমাজে অহরহ হচ্ছে।


কেউ আত্মহত্যা বেছে নিচ্ছে অথবা কেউ খুন হচ্ছে! এটা কখনই একটা সুন্দর সমাজ গঠনের কাম্য হতে পারে না! পরিশেষে বলব বাবা মা হিসেবে ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে আসুন সবাই সচেতন হই সময় থাকতে। নইলে সমাজে আত্মহত্যা, খুন, ধর্ষণ বেড়েই চলবে।


# নাজিয়া নিগার
কবি-সাহিত্যিক-বিশ্লেষক-কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর