ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৫১০

বৃষ্টি এলেই মন চায় ভিজতে

মৌমিতা সরকার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:১৯ ১৫ জুন ২০২১  

আগে বৃষ্টি হলেই ভিজতে মন চাইত। কতশত দিন গিয়েছে এমন যে, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে সন্ধ্যার আগে স্নান করতে গিয়েছি মাত্র। যেই বৃষ্টি এসেছে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে বাথরুমের দরজা খুলে ছাদে ছুটে গিয়েছি বৃষ্টিতে ভিজতে! কখনও বা রাস্তায়! 


কতজনে দেখে বলত, "পাগলি পুরো একটা!"

আমি ভাবতাম, "বৃয়াশে ভেজার আনন্দ যে না নিতে চায় সে-তো পাগলই!"

 

বৃষ্টির আগে বাতাসের যে মন-মাতানো, পাগল-করা সুবাস, বৃয়াশের পরে মাটি থেকে আগত যে চমৎকার একটা আতর-ছেটা স্নিগ্ধ গন্ধ, বৃষ্টির টসটসে মোটা ফোটা শরীরে ছুঁয়ে যাওয়ার যে অনুভূতি, সেটার সঙ্গে অন্য কোনও কিছুর তুলনা মেলা চলে কী? 


মাঝে মাঝে হিম-শীতল দমকা হাওয়া এসে যেন নিতান্তই গায়ে পড়ে, যখন নগ্ন অঙ্গের খাঁজে মাখে, তখন মনে হয় যেন দূর হিমালয়ের কোন এক অজানা প্রেমের বার্তা আমায় জড়িয়ে ধরল, কিছুটা অমতেই। তবুও সেই স্পর্শে জমাট সব রাগ আর অনুশোচনা যেন একেবারেই সদ্য-সদ্য তুষার গলে তৈরী শীতল ঝর্ণার জলের মতন গড়িয়ে পড়ল! 


নাহ্, আর কোনও অনুতাপ রইল না আমার। যে বলে যা বলে বলুক! এই যে পৃথিবীর এক কোণায়, একটু দাঁড়িয়ে সামান্য জড়তার বাঁধ ভাঙ্গতে পারার দুঃসাহসের নিমিত্তে, লোকলজ্জার ভয়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারার দুঃসাহসের উপহারস্বরূপ নিমিষেই যে এই অতীব সুন্দর, স্বর্গীয় আনন্দ ও কতশত স্থানের দৃশ্য চোখ বুঁজে দেখার অনুভূতি - সে কি আর অন্য কেউ কখনো বুঝবে? 


বুঝবে নাহ্! ইশ্! কি দুর্ভাগা! এমন গাছ, এমন আকাশ, এমন মাটি, এমন প্রকৃতি, এমন মানব শরীরে এসেও এরা কিচ্ছু বুঝল না! কিচ্ছুটি ছুঁয়ে দেখল না একেবারেও! কেবল আমার এই দেখাকে, এই ছোঁয়াকে, এই আনন্দকে ইর্ষে আর দুর্নাম করে গেল!" 


যে যাই হোক, সাঁইজি যা মাপিয়েছেন ওদের কপালে ওরা তাই পেয়েছে! পরজন্মে যেন ওদের মানুষ হয়ে মানুষ-চোখে দেখার সুযোগ দেন, সেই প্রার্থনাই করাই একমাত্র উপায়! আমি ভাবতে থাকি...
রাতে মা-বাবা বাসায় ফেরে, আমাকে নিয়ে কথা বলে। 


বোঝানোর অপচেষ্টা, নানা যুক্তিতর্ক, অসুখের ভয় শেষে সমাজের মধ্যে টিকে থাকার চাপ... আমি শুনি, কিছুটা মানি, কখনও কথা না বাড়ানোর নিমিত্তে কিছুই বলি না... মনটা আমার আজ ভীষণ ভালো। এসব জড়-ক্ষুদ্র চিন্তায় মন দেওয়ার সুযোগ নিয়ে কথা বলতে চাই না। 


আমার যা আছে, তা আমি হারাতে দিতে পারি না। আমি শুধু এটুকুই জানি। কেউ কেউ হয়তো বা আবার এরই মধ্যে ভাবছেন "বৃয়াশ" মানে আবার কি? তাদের জন্য বলি, "বৃয়াশ" আমার নিজের শব্দ। বৃষ্টির সঙ্গে আয়াশ মিলিয়ে এই শব্দের সৃষ্টি! এই শব্দের ব্যবহার আর কেউ করে কিনা জানি না।


কিন্তু আমার সঙ্গে কাটানো খুব চমৎকার, আয়েশী, ঘনিষ্ঠ সময়ের শব্দ এটি। আমার সঙ্গে যখন আমি খুব গভীর-নিখাদভাবে মিশি, তখন এইসব কিছু অতি নান্দনিক, পালা শব্দের ব্যবহার করে নানা চিন্তাভাবনা করি! সে যাক্, কথায় ফিরে আসি।


গত কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে, দুপুরে, বিকালে, স্নানের আগে, স্নানের পরে। মোটামোটা টসটসে বৃষ্টির ফোটা ফেলে। যেন আকাশ থেকে রসালো ফলের অমৃতধারা পড়ছে এ ধরণীতে! এ অবেলার বৃষ্টি নয়। প্রথম প্রহরের অস্পৃশ্যতা মিশ্রিত বৃষ্টিও নয়। 


একটানা, একঘেঁয়ে, রোদ-ছাড়া, কেদো আষাঢ়েরও বৃষ্টি নয়। এ বৃষ্টি সুন্দর বৃষ্টি। ভেজার জন্য একদম নিদারুণ নিখুঁত!

 

এই বৃষ্টি আসার আগে অনেকক্ষণ ধরে মেঘে মেঘে ধরণা দিয়ে সময় দেয় তৈরি হওয়ার। এ বৃষ্টি আসার আগে কাঁঠাল-চাপা রঙের মৃদুলা মাঝারি রোদ দুলে দুলে মৃদুতর হয়ে অতঃপর হালকা নীলচে শালুক রঙ্গা মেঘ ঘনিয়ে আসে। 


এই বৃষ্টি আসার আগে "বৃয়াশে" ভেজার আহ্বান দেয়। অথচ আমার তো এখন এই বৃষ্টিতে ভিজতে একবারও মন চাইছে না। বৃষ্টি হচ্ছে, আমি দেখছি, সবাই আমায় দেখছে। কিন্তু আমার মন দেখেও তা দেখছে না। মনে হচ্ছে, হঠাৎ যেন আমার মনটাই বদলে গেল।

 

লেখক: মৌমিতা সরকার,  প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার, টিঁপুশ

-বৃয়াশ। ১৫ জুন,২০২১। ১ আষাঢ়, ১৪২৮। আরডিএ ক্যাম্পাস। বগুড়া।

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর