ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৩৩

মঙ্গলে যাত্রার সময় অর্ধেকে নেমে আসবে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:২৬ ১১ জুলাই ২০২৩  

পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের সায়েন্স ফিকশন ‘ইন্টারস্টেলার’ দেখেননি, এমন সিনেমাপ্রেমী সম্ভবত কমই আছেন। আর ওই ‘আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ ভ্রমণকেই’ বাস্তব রূপ দিতে চায় যুক্তরাজ্যের স্পেস প্রোপালশন কোম্পানি পালসার ফিউশন।

 

মহাকাশে পারমাণবিক ফিউশননির্ভর প্রপালশন সিস্টেম বানানো প্রথম কোম্পানি হওয়ার লক্ষ্যে এরইমধ্যে ইংল্যান্ডে বড় এক নিউক্লিয়ার ফিউশন চেম্বার তৈরির কাজ শুরু করেছে কোম্পানিটি।

 

মহাকাশ অভিযান সেক্টরে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রোপালশন প্রযুক্তি ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ হিসেবে বিবেচিত। এটি করা সম্ভব হলে মঙ্গল গ্রহে ভ্রমণের সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। আর ‘শনির চাঁদ’ নামে পরিচিত ‘টাইটান’ উপগ্রহে পৌঁছাতেও ১০ বছরের বদলে সময় লাগবে কেবল দুই বছর। এটি সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনালেও সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে পালসার সিইও রিচার্ড ডিনান মনে করেন, এই ফিউশন প্রোপালশন ব্যবস্থা ‘অনিবার্য’।

 

“মানবতা এই ফিউশনের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারবে কি না, তা নিজেরাই নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে।” –  প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চকে বলেন তিনি।

 

“আমরা সেটা ঘটাতে না পারলে এর পুরোটাই নিরর্থক। আর যদি পারি – এবং আমরা পারব, তবে ফিউশন প্রোপালশন অনিবার্য। মহাকাশে মানব বিবর্তনের কথা চিন্তা করলে এটা ঠেকানোর উপায় নেই। এটা ঘটতে যাচ্ছে, কারণ এর প্রয়োগ অপ্রতিরোধ্য।”

 

নিজেদের ১১ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডশায়ারভিত্তিক এই কোম্পানির মূল মনযোগ ছিল ফিউশন গবেষণা নিয়ে। সম্প্রতি গবেষণার খরচ যোগার করার জন্য আর্থিক আয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন পণ্যও তৈরি করতে শুরু করেছে পালসার। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাশযানের জন্য ‘হল-ইফেক্ট বৈদ্যুতিক থ্রাস্টার’ ও দ্বিতীয় পর্যায়ের হাইব্রিড রকেট ইঞ্জিন।

 

নিউক্লিয়ার ফিশনভিত্তিক প্রোপালশন সিস্টেম তৈরির জন্য ২০২২ সালে গবেষণা সংস্থা ‘নিউক্লিয়ার অ্যাডভানসড ম্যানুফ্যাকচারিং রিসার্চ সেন্টার’ ও কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের মহাকাশ সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক অনুদান পায় কোম্পানিটি।

 

পালসারের বেলায় ফিউশন প্রোপালশন ব্যবস্থার সঙ্গে দূরবর্তী মহাকাশ অভিযানের ভবিষ্যৎ জড়িত। স্পেস প্রোপালশনে ফিউশন ব্যবস্থা তৈরি, অনেকের মতেই, পৃথিবীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে অনেক সরল। মহাকাশের আবহাওয়া খুব শীতল হওয়ার পাশাপাশি এর প্রায় নিখুঁত শূন্যতা ফিউশন বান্ধব হওয়াকে এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে লিখেছে টেকক্রাঞ্চ।

 

এই বিক্রিয়ায় উৎপাদিত শক্তির ঘনত্ব মহাকাশযানকে অসম্ভব দ্রুতগতি দেবে। আর বিদ্যমান প্রপালসিভ সিস্টেমের তুলনায় জ্বালানির একটা ভগ্নাংশ লাগবে কেবল। এমন ব্যবস্থা তৈরি খরচসাপেক্ষ হলেও ডিনান বলেন, ‘মহাকাশ ভ্রমণে গতির বিষয়টি বিবেচনায় নিলে এই খরচ যুক্তিযুক্ত’।

 

“মহাকাশ ভ্রমণে আপনার নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন বাঁচিয়ে দিতে পারলে সেটার জন্য আমি অর্থ চাইতেই পারি।” --বলেন তিনি।এই প্রযুক্তির একটি সুবিধা হলো, এখনও কেউ একে একটি সিস্টেমে ফেলে পরীক্ষা না করলেও এর পেছনে থাকা বিজ্ঞান নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের ভেতর অতি গরম প্লাজমা আটকে রেখে করা এই ফিউশন ব্যবস্থা অনেকটা সূর্যের মতোই কাজ করে।

 

এই কাজে বড় চ্যালেঞ্জ একটিই- সেটা হচ্ছে অসম্ভব গরম এই প্লাজমা একটি চেম্বারে ধারণ করে রাখা। আর এতেই নজর দিচ্ছে পালসার। আট মিটারের একটি ফিউশন চেম্বারে প্লাজমাকে অতি-উচ্চ তাপমাত্রায় এনে ইন্টারস্টেলার ভ্রমণের প্রয়োজনীয় গতি উৎপাদন করতে চাইছে কোম্পানিটি।

 

“সমস্যা হলো অতি উত্তপ্ত এই প্লাজমাকে কীভাবে একটি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে আটকে রাখা যায়।” --এক বিবৃতিতে ব্যাখ্যা করেন পালসারের আর্থিক প্রধান জেমস ল্যাম্বার্ট। “প্লাজমা অনেকটা আবহাওয়ার মতো, যেখানে প্রচলিত ব্যবস্থায় কোনো কিছু অনুমান করা কঠিন।”

 

ইংল্যান্ডের ব্লেচলি শহরে এরইমধ্যে এই রিঅ্যাকশন চেম্বার তৈরির কাজ শুরু করেছে কোম্পানিটি। পাশাপাশি, সুপারকম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে প্লাজমার আচরণ পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিভিত্তিক স্যাটেলাইট কোম্পানি ‘প্রিন্সটন স্যাটেলাইট সিস্টেম’-এর সঙ্গেও জোট বেঁধেছে কোম্পানিটি।

 

রকেট ইঞ্জিন থেকে নির্গত হওয়ার সময় প্লাজমা কেমন আচরণ করে, সেটিও পরীক্ষা করবে কোম্পানি দুটি। আর এই ডেটা পালসারের রকেট ইঞ্জিন নকশার বেলায় সহায়ক হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে টেকক্রাঞ্চ। এর পরবর্তী ধাপ হতে পারে কক্ষপথে পরীক্ষা চালানো, যেখানে প্রথমবারের মতো মহাকাশে নিউক্লিয়ার ফিউশন চালিত প্রোপালশন সিস্টেম ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালাবে কোম্পানিটি।

 

“আমাদের জীবনদ্দশায় সৌরজগৎ থেকে বের হওয়ার কোনো বিকল্প প্রযুক্তি আছে কি না, তা আমরা এখনও জানি না।” --বলেন ডিনান।