ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৭ পৌষ ১৪৩১
good-food
২২২০

মাছ ধরার উৎসবে দারকি তৈরির ধুম

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩২ ২৫ আগস্ট ২০২০  

বর্ষা মৌসুম এলে হাজেরা বেগমের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তখন সন্তানের প্রতিও নজর দেয়ার সময় মেলে না। ঘরের সামনে এক চিলতে উঠানে বসে দিনভর দারকি বাঁধেন নিবিষ্ট মনে। তাকে ঘিরে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অন্যরাও। 

চৈত্র মাসে দারকি বাঁধার জন্য অগ্রীম এক হাজার টাকা নিয়েছেন হাজেরা। চুক্তি মোতাবেক তা বানিয়ে পাইকারকে দিতে হবে এক কুঁড়ি। এভাবে তিনি পাইকারের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে দারকি বানাচ্ছেন স্বামীর সংসারে আসার পর থেকেই।

সংসার চালাতে উপার্জনের অবলম্বন হিসেবে হাজেরার মতো এ গ্রামের আমেনা, সোলেমান, সেলিনা, রমজান, আবুল কালাম, আলেয়া, হনুফা ও নাজমাসহ আরও বহু নারী-পুরুষ দারকি বানিয়ে এখন স্বাবলম্বী। জীবিকার পথ বেছে নিয়েছেন কুমিল্লার চান্দিনার উপজেলা কলাগাঁও গ্রামের প্রায় ২শ’ পরিবার।

বাঁশের শলার তৈরি বিশেষ ধরনের মাছ ধরার ফাঁদের নাম দারকি। অঞ্চলভেদে এর অন্য নামও আছে। কোথাও একে বলে ঘুনি। আবার কোথাও বলে বাইর, দিয়াইব অথবা আনতা। বর্ষা মৌসুমে নদী-নালা,খাল-বিলে মাছ ধরতে কম পানিতে দারকি পাতা হয়। মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে এটির ব্যবহার চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। গ্রাম বাংলায় সর্বত্র দারকি দিয়ে মাছ ধরার প্রচলন এখনও দেখা যায়।

খলিশা, টাকি, পুঁটি, শিং ও কৈসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা হয় দারকি দিয়ে। বাঁশের শলার তৈরি এটির উভয় দিকে উপরে-নিচে ৩টি করে ৬টি দ্বার (পথ) থাকে মাছ ঢোকার। দ্বারগুলো এমন ফাঁদবিশিষ্ট যে মাছ একবার ওই দ্বার দিয়ে ঢুকলে আর বের হয়ে আসতে পারে না। দারকির ভেতরকার ঘেরাটোপে মাছ আটকা পড়ে যায়। মাছ ধরার এ যন্ত্রটি গ্রামে প্রায় সবার ঘরেই পাওয়া যায়। ব্যাপক হারে চান্দিনার ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে স্থান করে নিয়েছে।

উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের গ্রাম কলাগাঁও। এ গ্রামের দারকি বিশেষ এক কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে। এখানকার প্রায় পরিবার এর ওপর নির্ভরশীল। জীবিকার জন্য সবাই এটাকে প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মাধাইয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৫শ’ গজ দক্ষিণ ও পূর্ব কোণাকোণী অবস্থিত কলাগাঁও গ্রাম। প্রায় ২শ’ পবিবার রয়েছে এখানে। কমবেশী সবাই দারকি বানিয়ে আসছেন বংশ পরস্পরায়। আগের দিনে বাঁশের শলা, বেত দিয়ে বুনিয়ে তা বানানো হতো। এখন বেত তেমন পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও দাম বেশির কারণে এর বদলে নাইলনের সুতা ব্যবহার করা হয়।

কলাগাঁও’র আবুল কালাম জানান, সবাই বংশ পরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করতে দারকি বানিয়ে আসছেন। বছরের ৭ মাস সেটি বানান। মহিলারা বেকার সময় বসে না থেকে এর শলা কেটে জমিয়ে রাখেন। চৈত্র থেকে দারকি বানানো শুরু হয় এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে। চৈত্রের দিকে পাইকার এসে এর জন্য আগাম টাকা দিয়ে যায়। প্রতি হাজার টাকার বদলে পাইকাররা নিয়ে যায় এক কুড়ি দারকি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অহিদ উল্লাহ বলেন, এ গ্রামের প্রায় সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ওই গ্রামের প্রায় সকল মানুষ দারকি বানিয়ে এখন স্বাবলম্বী।

বাংলাদেশকে জানো বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর