ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৯৫

মাতৃমৃত্যুর পেছনের কারণগুলো

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:২০ ২৬ জুলাই ২০১৯  

দেশে মাতৃমৃত্যুর হার দিন দিন কমছে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে এ হার বেশি। শহরে মাতৃমৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২। আর গ্রামে ১ দশমিক ৯৩। জাতীয়ভাবে এ হার হচ্ছে ১ দশমিক ৬৯। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গেল পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। ২০১৪ সালে এ হার ছিল ১ দশমিক ৯৩। আর ২০১৮ সালে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৯। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রতি লাখে ৭০ জনে নামিয়ে আনতে হবে।

শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, স্থূল মৃত্যুহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।

তাদের মতে, মাতৃমৃত্যুর দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনি। মাতৃমৃত্যুর ৫৪ শতাংশ ঘটে এ দুটি কারণে। বাড়িতে প্রসবের কারণে ৫৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে রক্তক্ষরণ বন্ধের ওষুধ না থাকায় ৭২ শতাংশ। স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে খিঁচুনি বন্ধের ওষুধ না থাকার কারণে ৬০ শতাংশ মৃত্যু ঘটে। এসব কারণে গ্রামে মাতৃমৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি চিকিৎসাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করেন। এছাড়া সরকারি সহায়তায় প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এ কমিউনিটি সার্ভিসটির সঙ্গে যুক্তরা খুব দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী। তবে সবাই মিলে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমাতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে মৃত্যুহার আরও কমানো সম্ভব।

শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, স্থূল মৃত্যুহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিবিএসের ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় জরিপটি চালানো হয়।

এমএসভিএসবি প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। বাংলাদেশে গত ২৫ বছরে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। ‘মাতৃমৃত্যুর প্রবণতা : ১৯৯০ থেকে ২০১৫’ (ট্রেন্ডস ইন মেটার্নাল মর্টালিটি : ১৯৯০ টু ২০১৫) শীর্ষক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ  ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (২০১৪/২০১৫) সালের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন লাখে ১৭৪ জন নারী, যা ১৯৮৬-৯০ সালে ছিল ৫৭৪ জন, ৯১-৯৫ সালে ছিল ৪৮৫ জন, ১৯৯৮-২০০০ সালে ৩২২ জন, ২০০৭ সালে ২৯৮ জন, ২০১০ সালে ১৯৮ জন এবং ২০১৫ সালে ১৭৬ জন। অর্থাৎ ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ৭০ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য ২০২২ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু লাখে ১০৫। আর ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ জনের নিচে নামিয়ে নিয়ে আনা। এ লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। গাইনি বিশেষজ্ঞ ও লাইভ হেলথি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. নওশিন শারমিন পুরুবী বলেন, ৯ মাসের গর্ভবতী নারী থেকে শুরু করে একজন নারীর সন্তান প্রসবের পর ৪২ দিন পর্যন্ত প্রসব সংক্রান্ত যেকোনো জটিলতাই মাতৃমৃত্যুর কারণ হতে পারে। শহরের তুলনায় গ্রামে মাতৃমৃত্যুর হার কিছুটা বেশি। এজন্য বেশ কিছু কারণও আছে। বাল্যবিয়ে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ।

বাল্যবিয়ে হওয়া মেয়েদের অনেকে শারীরিক অপুষ্টতার কারণে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয়। গ্রামাঞ্চলে ৬২ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হয়। ৫৭ শতাংশ নারী গর্ভকালীন এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা নিয়মিত গ্রহণ করেন না। গ্রামে নারীরা হাসপাতালে গিয়ে সন্তান প্রসব করতে ভয় পান। অনেকেই আছেন পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে অনাগ্রহী। কিছু ক্ষেত্রে গ্রামে অপ্রশিক্ষিত দাই দিয়ে গর্ভবতী নারীর চিকিৎসা করানোয় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।

প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণের জন্য ৩১ শতাংশ গর্ভবতী নারী মৃত্যুবরণ করেন। আবার গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে খিঁচুনি হয়েও অনেকে মৃত্যুবরণ করেন। আবার যেসব নারীর উচ্চতা কম। তাদের কোমরের হাড় ছোট হওয়ায় সন্তান প্রসবে সমস্যা হতে পারে। এ কারণে আরও ৭ শতাংশ নারীর মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, শহর এলাকায় অতিরিক্ত সিজার মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ। কিছু ক্ষেত্রে গর্ভপাত করতে গিয়েও অনেক নারীর মৃত্যু হয়। এছাড়া শহরে দেরিতে বিয়ে করলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা তৈরি হয় যা মাতৃমৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি করে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রতি লাখে আমাদের মাতৃমৃত্যুর হার ৭০ এ নামিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখ গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করে। কিন্তু এসব নারীদের সেবা দেয়ার মতো সেই পরিমাণ দক্ষ জনবল দেশে নেই।