ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৮৩৩

যেভাবে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ঢুকে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১৫ ৪ আগস্ট ২০১৯  

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় কৃষকদের খামারে প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ লিটার তরল দুধ উৎপাদন হয়। এককভাবে এ এলাকাটিতে দেশের সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদন হয়। মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন কোম্পানি এসব সংগ্রহ করে। পরে প্রক্রিয়াজাত করে ভোক্তাদের জন্য বাজারে নিয়ে আসে।
শাহজাদপুর ও বাঘাবাড়ির বিভিন্ন গরুর খামারে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের কাছে বেশ পরিচিত বিষয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। অনেক খামারি অনায়াসে বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকের নাম বলতে পারেন। শাহজাদপুরের একটি গরু খামারের মালিক আবু সিদ্দিক জানান, গরু অসুস্থ হলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করেন।
তিনি বলেন, মরণাপন্ন হলে আমরা গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকি। একটা গরুর দাম দুই -আড়াই লাখ টাকা। সেটা মারা গেলে খামারি শেষ হয়ে যাবে।
শাহজাদপুরের গবাদি পশুর চিকিৎসক এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত রোগাক্রান্ত গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেয়া হয়। সেই গুরুর দুধ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে বিক্রি করা উচিৎ নয়।
কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, একটি গরু প্রতিদিন ২০ লিটার দুধ দেয়। ফলে তা বিক্রি দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকলে একজন খামারি ১৫ দিনে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে। একজন দরিদ্র খামারির এ লোকসান মেনে নেয়া রীতিমতো অসম্ভব।
শাহজাদপুরের একটি গ্রামে প্রাণ কোম্পানির জন্য খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করেন রাকিবুল মাহমুদ। তিনি বলেন, আমি যখন নিই, অনেক সময় দেখি দুধে মাই আছে। মাই এক ধরণের রোগ। এটা গরুর ওলান দিয়ে বের হয়। কৃমির ট্যাবলেট দিলে দুধে মাই আসে। আমি খামারিদের বলে দিই তা রিসিভ করব না। 
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক ওরা অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ দিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবে মাই সারতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক দিলে দেখা যায়, ওটা পরের দিন থেকে ক্লিয়ার হয়ে যায়। ওই অ্যান্টিবায়োটিকটা যাবে কই? অ্যান্টিবায়োটিকটা এভাবেই আসে।
খামারিদের অনেকই মনে করেন, দানাদার গবাদি পশুর খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সিসা থাকতে পারে। যদিও এটি শুধুই তাদের ধারণা।
শাহজাদপুর উপজেলায় পোতাজিয়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী বলেন, অনেক কোম্পানি গবাদি পশুর খাদ্য বাজারজাত করার জন্য গরুর খামারিদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে।  তারা খামারিদের বোঝানোর চেষ্টা করে, সেই কোম্পানির খাবার গরুকে দিলে দুধের উৎপাদন বাড়বে।
তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে গবাদি পশুর চারণভূমি কমে যায়। ফলে গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য প্যাকেটজাত দানাদার খাদ্যের উপর নির্ভর করতে হয়।
ওয়াজ আলী বলেন, ক্যাটেল ফিডের কোম্পানি বিভিন্ন অবস্থায় হরমোন জাতীয় দ্রব্য দিয়া বলে; আমার মালটা খাওয়াও দুধ বেশি হবে। সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে ক্যাটল ফিড পরীক্ষা করুক।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ক্যাটল ফিডের বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে দুধের উৎপাদন এক থেকে দুই কেজি হের ফের হয়।
তবে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, দানাদার পশুখাদ্য থেকে ক্ষতিকর উপাদান গরুর শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। তিনি দাবি করেন, পশু খাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে প্রায়ই পরীক্ষা করা হয়।
গবাদি পশুর অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা খামারিদের বা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলব, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করবেন না। গরুর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে সেটির প্রভাব ক্ষেত্র বিশেষ সাত থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত থাকে। এ সময়টুকু দুধ খাওয়া যাবে না।
মিস্টার রহমান জানান, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গবাদি পশু এবং মানুষ - উভয়ের শরীরের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে শুধু প্রয়োগের মাত্রা হেরফের হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।