ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর রোববার, ২০২৪ || ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
good-food
১৪৮

যেভাবে মারা গেলেন জল্লাদ শাহজাহান

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:১৭ ২৫ জুন ২০২৪  

আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া আর নেই। সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

 

রোববার (২৩ জুন) গভীর রাতে সাভারের হেমায়েতপুরের একটি বাসা থেকে শাহজাহানকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়। সোমবার (২৪ জুন) ভোরে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

 

শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউল আজম ভূঁইয়া এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ১০ জুন সাভারের হেমায়েতপুরে বাসা ভাড়া নেন শাহজাহান। সেখানে থাকতে শুরু করেছিলেন তিনি। ২৩ জুন দিবাগত রাত ৩টার দিকে তার বুকে ব্যথা উঠে। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মারা যান আলোচিত জল্লাদ।

 

এসআই মশিউল বলেন, শাহজাহানের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে।

 

জল্লাদ শাহজাহানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বোন ফিরোজা বেগমও। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে থাকতেন আমার ভাই। রোববার রাতে তার বুকে ব্যাথা উঠে। পরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।

 

ফিরোজা বেগম বলেন, এদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে তার মরদেহ গ্রহণ করেছি আমি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শাহজাহানের মরদেহ নরসিংদির পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে দাফন করা হবে।

 

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন (৪৪ বছর) কারাভোগ শেষে ২০২৩ সালের ১৮ জুন মুক্তি পান প্রধান জল্লাদ মো. শাহজাহান। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি জানান, তার থাকার জায়গাও নেই। বাড়িঘর কিছু নেই। তাই সরকার যেন একটা ব্যবস্থা করে দেয়। 

 

শাহজাহান বলেন, একটি ফাঁসি দিতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী লাগে। ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ হয়। এছাড়া কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন তিনি।

 

‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে তিনি। তার মায়ের নাম মেহের। তিন বোনের মধ্যে বর্তমানে এক বোন বেঁচে আছেন। 

 

১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। যৌবনকালসহ জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। কারামুক্তির পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু সেই সংসার টেকেনি। এ নিয়ে আইনি জটিলতায়ও পড়েন।

 

দীর্ঘ ৪৪ বছর কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন মুক্তি পান শাহজাহান। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি দিন কারাভোগের রেকর্ড এটি। ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জন্মগ্রহণ করলেও জীবনের বেশিরভাগ সময় পরাধীন জীবনযাপন করেন তিনি।

 

১৯৭৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় তার ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে ৮৭ বছর মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য জেল দেয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাজা ৪৩ বছরে নেমে আসে। দুটি মামলায় ৫০০০ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস করে অতিরিক্ত এক বছর জেল খেটে ৪৪ বছর পর মুক্ত আকাশে শ্বাস ফেলার সুযোগ পান জল্লাদ শাহজাহান। 

 

ছাত্রজীবনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন শাহজাহান। অপরাধ জগতে ঢুকতেও বেশি সময় নেননি। ডাকাতি ও খুনের মতো ভয়ংকর সব অপরাধ করেন তিনি। ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ। 

 

সাজা কমাতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন শাহজাহান। এরপর সহযোগী হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে জল্লাদ জীবন শুরু করেন। এক সময় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে আসেন। সেখানে প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পান তিনি।

 

কারাগারের নথি অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ৬ ঘাতক (বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ), চার যুদ্ধাপরাধী (জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপিনেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী), কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির এবং ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ৪০ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন শাহজাহান।

জীবনের গল্প বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর