ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৩৭

ঢাকার বাইরেও আক্রান্ত

রেকর্ড ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু, উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৩১ ২৮ জুলাই ২০১৯  

সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে এবারের ডেঙ্গুজ্বর। ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীতে। গেল ক’দিনে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকাতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর মিলছে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে এখন চরম ডেঙ্গু আতংক।

সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির কোনো উন্নতির খবর পাওয়া যায়নি। সরকারের হালানাগাদ তথ্যেও মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার চিত্র পাওয়া গেছে।

 

পরিসংখ্যানের দিক থেকে এবছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে এই মরণঘাতি জ্বর।

২০০২ সালে দেশে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল। তবে ২০০০ সালে ৯৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ডই ছিল সর্বাধিক। দীর্ঘ ১৬ বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্ত হয়ে নতুন রেকর্ড করেছিল। মৃতের সংখ্যা ছিল ২৬।

 

 

চলতি বছরের সাত মাস শেষ হওয়ার আগেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫২৮। ফলে ২০১৮ সালের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হলো।

 

গেল বছরের জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৫ হাজার ৫০ জন। এ বছর জানুয়ারিতে ৩৭, ফেব্রুয়ারিতে ১৯, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৮৪, জুনে ১ হাজার ৮২৯ ও ২৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ৮ হাজার চারশ’ জন।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে চলতি বছরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫২৮ ডেঙ্গু রোগি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন। তবে তাদের তথ্যমতে এ বছর মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, মাত্র ৮ জন।

 

তবে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, চলতি মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা গত বছরের ২৬ জনের রেকর্ডকেও ছাড়িয়েছে।

 

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) পরিচালক মীর জাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বেসরকারি হিসাবে এর মৃত্যু সংখ্যা বলে কিছু নেই। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের কোন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এমন তথ্য পেলে আইডিসিআর-এর ডেথ রিভিউ কমিটি সে তথ্য সঠিক কি না তা পর্যালোচনা করে। সত্যতা পেলে তবেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা দেন।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এরইমধ্যে আক্রান্ত ১০ হাজার ৫২৮ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৮৪৯। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২ হাজার ৬৭১। বাকি ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৬৮৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩৩, মিটফোর্ডে ৭, শিশু হাসপাতালে ৯, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৬, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২২, বারডেম হাসপাতালে ১২, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ২৪, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৯ ও বিজিবি সদর হাসপাতালে ১৩, কুর্মিটোলায় ৩২ জন ভর্তি। বেসরকারি হাসপাতালে ২০৫, ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় হাসপাতালে ৪০ রোগী চিকিৎসাধীন।

তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আক্রান্ত সবার তথ্য সরকারের নজরদারিতে না আসায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

 

 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বছরওয়ারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০০-২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫৫১, ২৪৩০, ৬২৩২, ৪৮৬, ৩৪৩৪, ১০৪৮, ২২০০, ৪৬৬, ১১৫৩, ৪৭৪, ৪০৯, ১৩৫৯, ৬৭১, ১৭৪৯, ৩৭৫, ৩১৬২, ৬০৬০, ২৭৬৯ ও ২০১৯ সালের (২৭ জুলাই পর্যন্ত) ১০ হাজার ৫৪৮ জন।