ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫৬০

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান পানি দিয়ে, সঙ্গে মেশান এসব ভেষজ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:১৭ ১১ জুন ২০২০  

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে পানি। কিছু উপাদান আছে, যেগুলো পানীয়তে মিশিয়ে করোনাকে দূরে রাখা সম্ভব। 


যে কোনও অসুখ ঠেকানোর অন্যতম শর্ত শরীরের প্রয়োজন মিটিয়ে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ঠিক থাকে তাতে। গরমকালে এ দাবি আরও বাড়ে। শরীরে পানির অভাব ঘটলে যে কোনও সংক্রমণ খুব দ্রুত শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।

 

কোনও বিশেষ রোগের কারণে কড়াকড়ি না থাকলে দিনে কম করে আড়াই-তিন লিটার পানি পান জরুরি এ সময়। খাটাখাটনি বা ব্যায়াম বেশি করলে সাড়ে তিন থেকে চার লিটারও খেতে হতে পারে।

 

কিন্তু সমস্যা হল, অনেকেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় এত পানি খেতে পারেন না। একঘেয়েও লাগে। তাই কোলা বা ঠান্ডা কোনও পানীয়তে গলা ভেজান।

 

চিকিৎসকদের মতে, পানির বদলে কোলা বা প্যাকেটবন্দি ফলের ফ্লেবার মেশানো রস জাতীয় ঠান্ডা পানীয় শরীরের উপকার তো করেই না, উল্টে শরীরের জল শোষণ করে ভেতর থেকে তাকে আরও শুকনো করে তোলে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমায়।


তবে সাধারণ পানি ছাড়াও অন্য রকমের কোনও আয়ুর্বেদিক পানি বাড়িতে বানিয়ে খেলে তা পানির সমান উপকার করে আবার স্বাদও যোগ করে। পুষ্টিকর এই ভেষজ পানীয় বানাতে সামান্য কয়েকটি উপাদানই যথেষ্ট।

 

সুগন্ধী ও সুস্বাদু ভেষজ পানি :


মহামতি চরক এর নাম দিয়েছিলেন ‘হিম’ বা ‘শীত’। আচার্য ভাবমিশ্র নাম দেন ‘ঊষাপান’। বিভিন্ন উপকারি ভেষজ ও মশলা রাতভর ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল খেলে কী কী উপকার হতে পারে তার ব্যখ্যাও দিয়েছিলেন তাঁরা।

 

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ জানালেন, “বিভিন্ন রোগ সারাতে যেমন ঊষাপানের ভূমিকা আছে, আবার জলের স্বাদ-গন্ধ বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু বিশেষ পুষ্টি জোগানোর ক্ষেত্রেও কয়েক ধরনের ভেষজ-জল বিশেষ ভাবে কার্যকর।”

 

কী কী উপায়ে বানাবেন

 

•  সিকি কাপ পুদিনা পাতা এক কাপ ফুটন্ত জলে দিয়ে ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। ঠান্ডা হলে ৭ কাপ জল মিশিয়ে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন কম করে এক ঘণ্টা। সুগন্ধ সবচেয়ে ভাল পাওয়া যায় এক দিন পর। সারা দিন অল্প করে খান। প্রতি বার খাওয়ার পরই নতুন করে তরতাজা বোধ করবেন। অম্লের সমস্যাও কম হবে। কম থাকবে ফ্লুয়ের উপসর্গ। নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক থাকে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

 

•  এক মুঠো টাটকা পুদিনা পাতা হালকা থেঁতো করে তাতে মেশান পাতলা করে কাটা লেবুর টুকরো। ৮ কাপ জল মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। ২-৩ ঘণ্টা পর থেকে খেতে থাকুন। পুদিনার উপকারের সঙ্গে যুক্ত হবে লেবুর ভিটামিন সি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যার কোনও জুড়ি নেই।

 

•  এক চামচ আদা কুচি ও টুকরো করে কাটা লেবু ফুটন্ত জলে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিন। কম থাকবে ফ্লুয়ের উপসর্গ। বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

 

পুদিনা-সহ অন্যান্য ভেষজ উপাদানে পানীয়কে স্বাদু ও আরও পুষ্টিকর করে তুলুন। 

 

•  কমলালেবুর কোয়া টুকরো করে কেটে ৮ কাপ পানিতে মেশান। তাতে দিন ও এক মুঠো তুলসি। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করুন কম করে এক ঘণ্টা। ফ্লু ঠেকাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই মিশ্রণের উপযোগিতা আছে।

 

•  পাতিলেবু, চাকতি করে কাটা শসা, আদা কুচি, পুদিনা পাতা মেশান বড় এক বোতল পানিতে। সারারাত ফ্রিজে রাখুন। আপেল, তরমুজ, আঙুর বা অন্য কোনও মরসুমি ফল দিয়েও বানাতে পারেন। সেই পানি প্রতি দিন কাজের ফাঁকে অল্প অল্প করে খান।

 

•  ১-২ লিটার ঠান্ডা পানিতে তরমুজ, শসা, মুসাম্বি বা পাতিলেবুর টুকরো ও ১০-১২টি পুদিনা পাতা দিয়ে রাতভর ভিজিয়ে রেখে সকালে খান।

 

•  একটি নারকেল, এক চামচ পুদিনা পাতা কুচোনো, ১ চা চামচ মধু, একটা পাতিলেবু নিন। নারকেলের পানি বের করে ভিতরটা কুড়িয়ে নিন। কুড়নো নারকেল ও পানির সঙ্গে পাতিলেবুর রস, পুদিনা পাতা, মধু ভাল করে মিশিয়ে নিন। টানা কাজে মাঝে যখন ক্লান্ত লাগবে, এক গ্লাস খেলে উদ্যম আবার নতুন করে ফিরে আসবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।

 

•  দিনে এক-আধবার চা-কফি খাওয়ার পর দিনভর পানি খেতে থাকুন। মাঝেমধ্যে খান ভেষজ পানি। উপকারের পাল্লা ভারী হওয়ার সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও জোরদার হবে।

 

এছাড়া সারাদিনে অল্প অল্প করে গরম পানি পান করুন। * সকালে নিয়ম করে খান চ্যবনপ্রাশ। প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে চ্যবনপ্রাশ খেলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

 

অথবা দিনে এক থেকে দু’-বার খান গোল্ডেন মিল্ক বা হলুদ মেশানো দুধ। ১৫০ মিলিলিটার দুধে আধ চামচ হলুদ ঢেলে পান করলে, উপকার মিলবে।

 

যাদের শুকনো কফের সমস্যা বা খুসখুসে কাশি রয়েছে, তারা দিনে একবার গরম পানিতে তাজা পুদিনাপাতা বা জোয়ান দিয়ে ভাপ নিন। গলা বেশি খুসখুস করলে, দিনে দু-তিন বার মধুর সঙ্গে কিছুটা লবঙ্গ গুঁড়া মিশিয়ে খান।

 

 দিনে এক বা দুইবার তুলসী, দারুচিনি, গোলমরিচ, আদা, কিসমিসের মিশ্রণ খান। অথবা, হার্বাল চা খেতে পারেন নিয়মিত।