ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২২১

রোগের মূল কারণ মানসিক নাকি শারীরিক?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:৫৭ ৭ মার্চ ২০২১  

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর স্বীকার করছেন, রোগের কারণ যেমন দৈহিক হতে পারে, তেমনি হতে পারে মানসিক। বহু জটিল রোগ- এমন কি ক্যান্সারের কারণও হতে পারে মানসিক। মন যখন ভাবাবেগজনিত চাপ বা উৎকণ্ঠার সম্মুখীন হয়, তখন শরীর নানাভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। 

 

রক্তে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণের পাশাপাশি হৃদকম্পন বেড়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়, মলাশয়ের তৎপরতা বাড়ে, মূত্রাশয় সহজে সঙ্কুচিত হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে এটা ডায়রিয়া এবং প্রস্রাব বৃদ্ধির রূপ নিতে পারে।

 

ব্রেন দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রিত নার্ভাস সিসটেম ত্বকের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। তাই ত্বকের উপর আলতো করে স্পর্শ করে আদর করার মাধ্যমে শিশুদের শান্ত করা যায়। আবার ত্বকে চিমটি কেটে সহজেই স্নায়ুকে উত্তেজিত করে দেয়া যায়।

 

তাই উৎকণ্ঠার কারণে স্কিন র্যাশের মতো চর্মরোগও হতে পারে। ডা. হার্বার্ট বেনসন এবং ডা. এডমন্ড জ্যাকবসন এই টেনশন বা উৎকণ্ঠার কারণে সৃষ্ট রোগের দীর্ঘ তালিকা তৈরি করেছেন। এই তালিকায় রয়েছে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, বাতব্যথা, বিষণ্নতা, বদমেজাজ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডায়রিয়া, বহুমূত্র, ঘাড়ে ব্যথা, মেরুদণ্ডে ব্যথা ইত্যাদি।


নিউরো সাইন্টিস্টরা বলেছেন, টেনশন বা উৎকণ্ঠা বা স্ট্রেস হচ্ছে এমন এক রোগ প্রক্রিয়া বা মানসিক অবস্থা যা ব্রেনের বাস্তব কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই শারীরিক প্রতিক্রিয়া আবার ব্রেনের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। টেনশনে ব্রেন ও শরীরের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কাজ করে দুষ্টচক্রের মতো।

 

উৎকণ্ঠা বা স্ট্রেসের প্রথম শারীরিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে মুহূর্তে কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন পেশীকে শক্ত করে ফেলা। এই শক্ত পেশীগুলো আবার সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুর মাধ্যমে ব্রেনে খবর পাঠায়, যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় তা তৈরি। দৃশ্যত ব্রেন এই খবরকে ব্যাখ্যা করে তার আশঙ্কার প্রমাণ হিসেবে। 

 

অর্থাৎ ব্রেন তখন আরও নিশ্চিত হয়, সত্যিকারের দৈহিক বিপদ আসন্ন। তাই ব্রেন তখন প্রতিটি পেশীকে সজাগ হওয়ার জন্য বার্তা পাঠাতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য রাসায়নিক বার্তা প্রেরণ করে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এই ক্রমাগত অর্থহীন সতর্কীকরণের ফলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাতে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং রোগ নিরাময় ক্ষমতা হ্রাস পায়। একই সঙ্গে দৈহিক ও মানসিক অস্বস্তি বাড়তে থাকে। পরিণামে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়।


দেহের ওপর মনের এই অনভিপ্রেত আক্রমণের দুষ্টচক্রকে আপনি শুধু পেশীর আচরণ প্রক্রিয়া পাল্টে দিয়েই প্রতিহত করতে পারেন। পেশী উত্তেজিত ও শক্ত হয়ে উঠলে আপনি সচেতনভাবে পেশীকে শিথিল করুন। পেশী শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্রেনে খবর পাঠাবে সব ঠিক আছে, কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই। আর তখন ব্রেনও সতর্কাবস্থা প্রত্যাহার করবে। 

 

ব্রেনে পেশী থেকে যত কম সতর্কাবস্থার বাণী যাবে, ব্রেন তত বেশি পরিমাণে শিথিল হবে এবং এক পর্যায়ে সতর্কাবস্থা থেকে পরিপূর্ণ শিথিল অবস্থায় পৌঁছে যাবে। আর মন তখন উৎকণ্ঠার পরিবর্তে হবে প্রশান্ত। যে মন আপনার সর্বনাশ করতে যাচ্ছিল, তাই পরিণত হবে নিরাময়ের বাহনে।


টেনশন ও শিথিলায়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আপনি দেহ-মনের পরস্পরকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। এই শিথিলায়নের পাশাপাশি আপনি যদি ভিজুয়ালাইজেশন বা মনছবির শক্তিকে প্রয়োগ করেন, তাহলে মনছবিই হতে পারে বহু জটিল রোগ নিরাময়ের হাতিয়ার। 


শুধু তাই নয়, দেখা গেছে বহু ক্ষেত্রে যেখানে প্রচলিত ওষুধ নিরাময়ে ব্যর্থ হয়েছে; সেখানে ভিজুয়ালাইজেশন বা মনছবি চমৎকারভাবে নিরাময়ের কাজ সম্পন্ন করেছে। ডাক্তাররা দীর্ঘদিন ধরেই দেহের ওপর মনের প্রভাব সবিস্ময়ে লক্ষ্য করে আসছেন। মানুষ মনে দুঃখ পেলে ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড প্লাবিত হয়। ফলে চোখে অশ্রু চলে আসে। 


বাস্তব অথবা কাল্পনিক বিপদ হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ায়, রক্ত চাপ বাড়ায়, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুততর করে। মনে ক্রোধ সৃষ্টি হলেও এসব শারীরিক লক্ষ্যণ প্রকাশ পায়। ডাক্তাররা এখন আরও দেখছেন, শুধু আবেগই শারীরিক পরিবর্তন ঘটায় না, সুনির্দিষ্ট মনছবিও শরীরের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে।