শতবর্ষে বিবিসি: যে গণমাধ্যম বার বার সম্প্রচার জগতের মোড় বদলেছে
লাইফ টিভি 24
প্রকাশিত: ২১:৪২ ১৮ অক্টোবর ২০২২

"ইনফর্ম, এডুকেট অ্যান্ড এন্টারটেইন" - বা মানুষকে তথ্য, শিক্ষা বা বিনোদন দেয়ার মিশন নিয়ে বিবিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২২ সালের ১৮ অক্টোবর। তবে রেডিও সার্ভিসের প্রথম সম্প্রচার শুরু হয়েছিল ১৯২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায়। প্রথম দিনের সম্প্রচারে ছিল একটি সংবাদ বুলেটিন। আর তা পড়েছিলেন আর্থার বারোজ ।
এতে ছিল এক ট্রেন ডাকাতির ঘটনা ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক সভার ওপর রিপোর্ট। কিছু খেলার ফলাফল।আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস। আর্থার বারোজ বুলেটিন পড়েছিলেন দু'বার। একবার দ্রুত, আরেকবার ধীরগতিতে - যাতে শ্রোতাদের কেউ নোট নিতে চাইলে তার জন্য তারা সময় পান।
প্রথম দিনের সেই সম্প্রচারের সময় বিবিসি'তে কাজ করতেন মাত্র চার জন। এই রেডিও অনুষ্ঠান এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে চার বছরের মধ্যেই ব্রিটেনে রেডিও লাইসেন্সের সংখ্যা ২০ লাখে উঠে যায়। জন রিথ, ৩৩ বছর বয়সী একজন স্কটিশ প্রকৌশলী, ১৯২২ সালের শেষ নাগাদ বিবিসির জেনারেল ম্যানেজার নিযুক্ত হন।
বিশ্বব্যাপী বিবিসি
১০০' বছরে বিবিসি পরিণত হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানে। এতে এখন কাজ করেন ২৩,০০০-এরও বেশি লোক। এর অনুষ্ঠান সম্প্রচার হচ্ছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিলে ৫৯টি রেডিও স্টেশনে। যুক্তরাজ্যে মোট ১০ টিভি চ্যানেলে। আর বিবিসি ওয়ার্ল্ড টিভি দেখছেন সারা পৃথিবীর মানুষ।
ইন্টারনেটেও বিবিসির রয়েছে জোরালো উপস্থিতি। তা ছাড়া "ফ্রোজেন প্ল্যনেট", 'ডক্টর হু' বা 'টপ গিয়ার'এর মতো প্রামাণ্য বা বিনোদন টিভি অনুষ্ঠান এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিস শুরু হয়েছিল ১৯৩২ সালে আফ্রিকা আর এশিয়ায় বসবাসরত ব্রিটিশদের জন্য।
১৯৩৬ সালে শুরু হয়েছিল বিবিসি টেলিভিশন - যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্ধ ছিল , তবে ১৯৪৬ সালে তা আবার শুরু হয়। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই পৃথিবীর নানা ভাষায় বিবিসির অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়। আর বর্তমানে ৪০টিরও বেশি ভাষায় বিবিসির সম্প্রচার রেডিও, ইন্টারনেট, টিভি এবং উপগ্রহ সংযোগের মাধ্যমে শোনা ও দেখা যায়।
যেভাবে প্রথম সম্প্রচার শুরু হয়
বিবিসির প্রথম রেডিও সম্প্রচারের জন্য যে ট্রান্সমিটারটি ব্যবহৃত হয়েছিল তার নাম ছিল টু-এলও। রেডিও সম্প্রচারের জন্য ব্রিটেনের পোস্ট অফিস যে লাইন্সেসটি দিয়েছিল। তার নম্বর ছিল এই টু-এলও। আর সেটাই হয়ে দাঁড়ায় বিবিসির ট্রান্সমিটারটির 'নাম।'
তবে টুএলও কিন্তু একটি মাত্র ট্রান্সমিটারের নাম নয়। প্রথম ট্রান্সমিটারটির ক্ষমতা ছিল মাত্র ১০০ ওয়াট। রেডিও সম্প্রচার শুরু হয়েছিল ১৯২২ সালে। প্রতিদিন মাত্র এক ঘন্টার অনুষ্ঠান প্রচার হতো লন্ডনের স্ট্র্যান্ড এলাকার মার্কোনি হাউসের আটতলা থেকে।
কয়েক মাস পর নভেম্বর মাসে ১৫০০ ওয়াটের নতুন ট্রান্সমিটার বসানো হয় - এবং তা টু এলও-র নতুন 'অবতার' হিসেবে সেই একই নাম গ্রহণ করে। ১৯২২ থেকে ১৯২৫ - প্রায় তিন বছরে সম্প্রচার চালানো হয় তিনটি ট্রান্সমিটার দিয়ে - যার প্রত্যেকটিরই নাম ছিল টু এলও।
বিবিসির প্রথম টেলিভিশন
টেলিভিশনের প্রথম নমুনাটি দেখিয়েছিলেন জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে। এরপর ১৯২৯ সালের শেষ দিকে তিনি বিবিসির মাধ্যমে প্রথম পরীক্ষামূলক টিভি সম্প্রচার করতে থাকেন। শিগগিরই এটা নিয়মিত সম্প্রচারে পরিণত হয়, যা চলেছিল ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত।
এসব সম্প্রচার হতো সপ্তাহে পাঁচ দিন, প্রতিদিন আধঘন্টা করে। একটা বড় ডাকটিকিটের আকারের পর্দায় ৩০টি আলোর রেখা দিয়ে তৈরি আবছা ছবি দেখা যেতো সেই টিভিতে। দেখতে হতো একটি ম্যাগনিফাইং কাঁচের জানালা দিয়ে।
তবে মার্কোনি-ইএমআই কোম্পানি একই সময় ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরেক ধরনের টিভি আবিষ্কার করে - যার ছবি ছিল বেয়ার্ডের টিভির চাইতে বহুগুণ বেশি স্পষ্ট। কিছুকাল ধরে বিবিসি দুই পদ্ধতির টিভি সম্প্রচারই পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বরে বেয়ার্ডের আবিষ্কৃত টিভি পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়। লগি বেয়ার্ডের 'টেলি-ভাইজর' যে কয়েক হাজার বিক্রি হয়েছিল - তা পরিণত হয় বাতিল মালে।
বেয়ার্ড নিজেও মেনে নিয়েছিলেন যে মার্কোনি-ইএমআইএর প্রযুক্তি তার আবিষ্কারের চাইতে অনেক উন্নত। পরের বছর উত্তর লন্ডনের আলেক্সান্ড্রা প্যালেসে গড়ে তোলা হয় বিবিসির নতুন টিভি স্টুডিও। বিবিসির প্রথম সরাসরি এবং 'হাই-ডেফিনিশন' টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৩৬ সালের ২৬শে আগস্ট।
টিভিতে প্রথম নারী অনুষ্ঠান ঘোষক
টেলিভিশনের জন্য একজন নারী ঘোষকের জন্য বিবিসি অনুসন্ধান শুরু করেছিল ১৯৩৬ সালে টিভি সার্ভিস চালুর আগে থেকেই। যদিও তখনকার দিনে খুব অল্পসংখ্যক লোকেরই টিভি কেনা বা দেখার সুযোগ ছিল - কিন্তু তার পরও এটা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
এর বিজ্ঞাপনে যেসব যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল তা পড়লে অনেকে হয়তো ভয় পেয়ে যাবেন। বলা হয়েছিল - "তার থাকতে হবে দারুণ ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধি, আকর্ষণী ক্ষমতা, এমন একটি মুখ যা থেকে প্রথম শ্রেণির ছবি হতে পারে, মধুর কণ্ঠস্বর এবং প্রখর স্মরণশক্তি।"
লালচুলো মহিলাদের আবেদন করতে দেয়া হয়নি, কারণ সেই রঙ সন্তোষজনকভাবে প্রচার করা যায় না। বিবাহিত মহিলাদেরও সুযোগ ছিল না - কারণ এটা তাদের ঘরের কাজে বাধা হয়ে উঠবে। এই কঠিন পরীক্ষায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছিলেন এলিজাবেথ কাওয়েল এবং জেসমিন ব্লাই। তারাই হয়ে উঠেছিলেন বিবিসির প্রথম নারী তারকা।
প্রথম বিদেশী ভাষায় বিবিসি রেডিও
বিবিসির প্রথম বিদেশী ভাষায় রেডিও সার্ভিস শুরু হয়েছিল ১৯৩৮ সালে - আরবি ভাষায়। এ অনুষ্ঠানের জন্য মিশরের রেডিও থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঘোষক আহমদ কামাল সুরুর এফেন্দিকে। মি. এফেন্দিই ছিলেন আরবি ভাষায় বিবিসির প্রথম বিদেশী সার্ভিসের কণ্ঠস্বর।
তার নিয়োগে এই আরবি সম্প্রচার রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ আরব বিশ্বের রেডিও শ্রোতাদের কাছে মি. এফেন্দি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় একজন উপস্থাপক। পরবর্তী কয়েক দশকে বিবিসিতে আরো অনেক নতুন ভাষা যোগ হয়। প্রথমে এগুলো ছিল শুধুই রেডিও সার্ভিস, তবে পরে অনেক ভাষাতেই যোগ হয় টেলিভিশন আর অনলাইন সার্ভিসও।
বিবিসি অনলাইন প্রথম চালু হয় ১৯৯৭ সালে, পরে এতে যোগ হয় বিভিন্ন ভাষার অনলাইন সার্ভিস। আর সামাজিক মাধ্যমের উত্থানের পর বিবিসি নিউজ এবং ওয়ার্ল্ড সার্ভিস উভয়েই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস প্রধানত ডিজিটাল কনটেন্টের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করছে।
বিবিসি রেডিওতে প্রথম খেলার ধারাবিবরণী
বিবিসিতে প্রথম সরাসরি ফুটবল খেলার ধারাবিবরণী প্রচার হয়েছিল ১৯২৭ সালের ২২শে জানুয়ারি। এটি ছিল তখনকার ডিভিশন ওয়ানের একটি খেলা। ম্যাচটি ছিল আর্সেনাল আর শেফিল্ড ইউনাইটেডের মধ্যে। খেলা হয়েছিল লন্ডনের হাইবেরি স্টেডিয়ামে।
এতে ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন সাবেক রাগবি খেলোয়াড় টেডি ওয়েকল্যাম। এর পরিকল্পনাকারীরা ভেবেছিলেন রেডিওতে যারা এই ধারাবিবরণী শুনবেন তারা হয়তো খেলায় কী হচ্ছে তা ঠিক বুঝতে পারবেন না। তাই বিবিসির সাময়িকী রেডিও টাইমসে ফুটবল মাঠের একটা ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল -তাতে গোটা ফুটবল মাঠটাকে আটটি বর্গক্ষেত্রে ভাগ করা ছিল, প্রতিটি ক্ষেত্রের ছিল আলাদা আলাদা নম্বর।
খেলার মূল ধারাবিবরণী দিচ্ছিলেন মি. ওয়েকল্যাম। সাথে আরেকজন ছিলেন তিনি যেখানে বল যাচ্ছে সেই বর্গক্ষেত্রটার নম্বর বলে যাচ্ছিলেন - যাতে শ্রোতারা বুঝতে পারেন যে মাঠের ঠিক কোন জায়গাটায় খেলাটা হচ্ছে।এভাবেই ১৯২০ ও ৩০-এর দশকে কথা আর সঙ্গীতের পাশাপশি খেলার তাৎক্ষণিক উত্তেজনাকে মানুষের ঘরের ভেতরে নিয়ে এসেছিল বিবিসি রেডিও।
অনেকে এর বিরোধিতাও করেছিলেন। কিছু সংবাদপত্র, থিয়েটার কোম্পানি আর খেলার এজেন্সিগুলো আপত্তি করেছিল যে রেডিও সম্প্রচার তাদের বাজার কমিয়ে দেবে। তবু বিবিসি ১৯৩১ সাল নাগাদ প্রতি মৌসুমে ১০০টিরও বেশি খেলার সরাসরি সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল।
আর প্রথম টেলিভিশনে সরাসরি ফুটবল ম্যাচ 'লাইভ' সম্প্রচার হয় ১৯৩৭ সালে। তার পর থেকে খেলা আর সম্প্রচারের জগতের এই গাঁটছড়ায় আর কখনো ছেদ পড়েনি। আজও রেডিও-টিভিতে অন্যতম জনপ্রিয়, আকর্ষণীয় এবং লাভজনক অনুষ্ঠান হচ্ছে খেলার সম্প্রচার।
বিবিসি অনলাইন
"আমি বুঝেছিলাম এটা (ইন্টারনেট) এক গুরুত্বপূর্ণ জন সেবার মাধ্যমে হয়ে উঠতে যাচ্ছে, এবং মনে হলো, আমাদের এখানে উপস্থিত থাকতে হবে, হয়ে উঠতে হবে এক অগ্রদূত," - বলেছিলেন লর্ড বার্ট, ১৯৭০-এর দশকে বিবিসির মহাপরিচালক।
ইন্টারনেট আবিষ্কার নিয়ে খুবই উৎসাহী ছিলেন তিনি, আর এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে কিভাবে তা বিবিসি'র বৈশ্বিক ভূমিকাকে বদলে দিতে পারবে। শুরুতে কিছু সমস্যা ছিল - বিবিসির যে চার্টার তা ছিল ইন্টারনেট আবিষ্কারের আগের যুগের এবং ইন্টারনেটে সংবাদ বিষয়ক ওয়েব পেজ প্রকাশকে কিভাবে এর আওতায় আনা যাবে - সেই প্রশ্ন ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেসব সমস্যার সমাধান করা হয়।
ইন্টারনেটে বিবিসির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ১৫ই ডিসেম্বর। এর ডোমেইন নাম ছিল বিবিসি ডটসিও ডটইউকে - যা আজও আছে। প্রথম যে দিন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বড়দিন উপলক্ষে দেয়া ভাষণ সরাসরি ইন্টারনেটে সম্প্রচার করা হলো - সেটাও ছিল এক মাইলফলক।
অনলাইনে খেলা, আবহাওয়া আর শিশুদের কনটেন্ট এলো এর পর - বিশেষ করে শিশুদের কনটেন্টগুলো পরবর্তীকালের একটি প্রজন্ম যেভাবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে তাতে নিয়ে আসে বিরাট পরিবর্তন।
বিবিসির প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্প্রচার
বিবিসির বয়স তখন মাত্র চার বছর। সেসময় বিবিসির তরুণ মহাপরিচালক জন রিথের জন্য এল এক মহাপরীক্ষা। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল্যবোধের যেসব ভিত্তি নির্ধারণ করছিলেন তার প্রথম পরীক্ষার মুখোমুখি তিনি হলেন ১৯২৬সালে।
মে মাসে টানা নয় দিনের সাধারণ ধর্মঘটে তখন পুরো অচল হয়ে পড়েছে দেশের সব শিল্প। সব সংবাদপত্র কাগজ ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার আর জনসাধারণের মধ্যে সংযোগের পথগুলো খুবই সীমিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু ছোট্ট বেতার প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কোম্পানি (পরবর্তীতে বিবিসি) তার সম্প্রচার পুরোপুরি চালু রেখেছে।
কনজারভেটিভ সরকারের নিজস্ব মুখপত্র ছিল ব্রিটিশ গেজেট পত্রিকা- সম্পাদনা করতেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। তিনি দেখলেন ওই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে তাদের বার্তা অবিলম্বে এবং আরও ভালভাবে পৌঁছে দেবার সবচেয়ে যোগ্য মাধ্যম হল রেডিও। তিনি প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি বল্ডউইনকে বললেন ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কোম্পানির সাথে দেনদরবার করতে।
জন রিথ বেঁকে বসলেন। তিনি বেতার প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে তুলে দেবার প্রস্তাব কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন- বললেন তিনি এটা করলে বিবিসির নিরপেক্ষতা চিরকালের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিবিসির নিজস্ব মাইক্রোফোন
উনিশশ' ত্রিশের দশকে বাণিজ্যিকভাবে যে সব মাইক্রোফোন পাওয়া যেতো সেগুলো ছিল বেশ ব্যয়বহুল। ফলে বিবিসি চেয়েছিল নিজেদের মত করে মাইক্রাফোনের একটি মডেল তৈরি করতে এবং সেজন্য তারা মার্কোনি কোম্পানির সাথে কাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৪ সালে 'টাইপ এ' নামের যে মাইক্রোফোন তৈরি হয় - তা সম্প্ররের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে।
পরবর্তী বেশ কয়েক বছরে এই মাইক্রোফোন আরো উন্নত ও পরিমার্জিত হয়েছে - আর তা বহু ব্রিটিশ সিনেমা ও টেলিনাটকে দেখা গেছে। এভাবেই এটি পরিচিত হয়ে গেছে ক্লাসিক বিবিসি মাইক্রোফোন হিসেবে।
'এম্পায়ার সার্ভিস' থেকে'ওয়ার্ল্ড সার্ভিস'
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সারা বিশ্বের শ্রোতার কাছে বিবিসিকে পৌঁছিয়ে দিয়েছে। শুরুতে এর নাম ছিল বিবিসি এম্পায়ার সার্ভিস। শ্রোতার সংখ্যা, অঞ্চলের ব্যাপ্তি, আর ভাষার সংখ্যার দিক থেকে বিচার করলে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৈদেশিক সম্প্রচার সংস্থা।
অনলাইন, সামাজিক মাধ্যম, টিভি ও রেডিওর মাধ্যমে এর অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে পৃথিবীর ৪০টিরও বেশি ভাষায়।বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সূচনা হয়েছিল ১৯৩২ সালের ১৯শে ডিসেম্বর - রাজা পঞ্চম জর্জের বড়দিন উপলক্ষে দেয়া রাজ-ভাষণের মধ্যে দিয়ে।
তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা প্রধানত ইংরেজিভাষীদের লক্ষ্য করে শুরু করা হয়েছিল এর সম্প্রচার আর তার ওই ভাষণের মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু করে বিবিসি এম্পায়ার সার্ভিস (যা আজকের বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস)।
প্রথম সহজে বহনযোগ্য রেকর্ডার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে যখন মিত্র বাহিনী অনেক জায়গাতে অগ্রাভিযান চালাচ্ছে, তখন বিবিসি অনুভব করে যে যুদ্ধের খবর পাঠানোর জন্য তার সংবাদদাতাদের হাতে সহজে বহনযোগ্য একটা রেকর্ডিং মেশিন থাকা দরকার।
ইউরোপের মাটিতে মিত্রবাহিনীর অবতরণের আগে আগে তেমনি একটা হালকা রেকর্ডার তৈরি হলো - যা দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রেই সরাসরি রেকর্ডিং করা যাবে। ছোট্ট এই রেকর্ডারটিতে ব্যবহার করা হতো ১০ ইঞ্চি গ্রামোফোন ডিস্ক। এর দু পাশের প্রতিটিতে প্রায় তিন মিনিট রেকর্ড করা যেতো।
এতে একটা সাধারণ মোটর ছিল, ব্যবহার পদ্ধতি ছিল খুবই সহজ। একটি মাত্র সুইচ দিয়ে এটা চালু করে রেকর্ডিং শুরু করা যেতো। এর ফলে রিপোর্টারদের পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব শব্দ এবং সৈন্যদের কথা রেকর্ড করা সম্ভব হলো। সৃষ্টি হলো যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনের এক নতুন রীতি- সম্প্রচারের দুনিয়ায় বিবিসির আরেক মাইলফলক।
এই রেকর্ডারের মাধ্যমেই রেডিওর শ্রোতারা শুনতে পেয়েছিলেন ডি-ডে অর্থাৎ ইউরোপের মাটিতে মিত্রবাহিনীর অবতরণ, প্যারিস মুক্ত করা আর জার্মানির আত্মসমর্পণের "ইলাস্ট্রেটেড রিপোর্টিং।"
প্রথম ভিডিও টেপ রেকর্ডার
'ভিশন ইলেকট্রনিক রেকর্ডিং অ্যাপারেটাস' বা সংক্ষেপে 'ভেরা' হচ্ছে বিবিসির তৈরি করা প্রথম ভিডিও টেপ রেকর্ডার। উনিশশ' আটান্ন সালে বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে টিভি দর্শকদের সামনেই এটা কিভাবে কাজ করে তা দেখানো হয়। বলা হয়, এটাই প্রথম।
কিন্তু আমেরিকায় তৈরি এ্যামপেক্স নামের ভিডিও টেপ রেকর্ডার ১৯৫৬ সাল থেকেই বাণিজ্যিকভাবে বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল। কারিগরি মানের দিক থেকেও তা ছিল আরো বেশি উন্নত। আর বেসরকারি চ্যানেল আইটিভির অনুষ্ঠানে এই রেকর্ডার ব্যবহৃত হচ্ছিল ১৯৫৭ সালের মে মাস থেকেই। এর পর বিবিসির 'ভেরা' প্রকল্প বাদ দেয়া হয়।
টিভিতে প্রথম অলিম্পিক গেমস সম্প্রচার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম অলিম্পিকস অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনে। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই অলিম্পিকস প্রথমবারের মত সরাসরি সম্প্রচার করেছিল বিবিসি। জুলাই মাসের ২৯ তারিখের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হয়েছিল টিভি স্টুডিওর বাইরে থেকে এই অভূতপূর্ব সম্প্রচার কার্যক্রম।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যাতে এই অলিম্পিক গেমস দেখা ও শোনা যায়, সে জন্য বিবিসি ৬১টি দেশকে সম্প্রচারের সুবিধা দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম অলিম্পিকস দারুণ সাফল্য পেয়েছিল।
বিবিসি'র বাড়ি 'ব্রডকাস্টিং হাউজ'
লন্ডনের ব্রডকাস্টিং হাউজ হচ্ছে বিবিসি'র প্রথম বিখ্যাত হেডকোয়ার্টার। এতেই ছিল বিবিসি'র সেসময়কার সবগুলো রেডিও সার্ভিসের স্টুডিও। পোর্টল্যান্ড পাথর দিয়ে তৈরি 'আর্ট ডেকো' স্থাপত্যরীতির এ ভবনটির ডিজাইন করেছিলেন জি ভ্যাল মায়ার -যা তৈরি হয় ১৯৩২ সালে।
ভবনটির সামনের দিকে ক্লক টাওয়ারে সংযুক্ত ঘড়ি আর এরিয়াল সমেত এই ভবনটি ছিল বিবিসির রেডিও সম্প্রচারের প্রতীক। ভবনটির নকশার সাথে অনেকে জাহাজের নকশার মিল পেয়েছেন - বিশেষ করে ১৯৩০এর দশকের সমুদ্রগামী যাত্রীবাহী জাহাজগুলোর সাথে। ভবনটির ২০১৩ সালে সংস্কার এবং পরিবর্ধন করা হয়। তখন থেকে সংযোজিত অংশটির নতুন পরিচিতি হয় নিউ ব্রডকাস্টিং হাউজ নামে।
সিফ্যাক্স: প্রথম টেলিটেক্সট সেবা
প্রথম সি ফ্যাক্স সেবা শুরু হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। বিবিসির ইঞ্জিনিয়াররা এমন একটা উপায় বের করার চেষ্টা করছিলেন যাতে দেশের ভেতরে টেলিভিশন দর্শকদেরকে লিখিত ভাষা বা টেক্সট ব্যবহার করে বাড়তি কিছু তথ্য দেয়া যায়।
ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ৬২৫ লাইনের টেলিভিশন স্পেকট্রাম নিয়ে বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ার অনেক বছর ধরেই কাজ করছিলেন। এই স্পেকট্রামের ক্ষমতাকে তারা শুধু শব্দ-বাক্য আর সংখ্যা প্রচার করার জন্য কাজে লাগালেন - আর এর ফলেই উৎপত্তি হলো টেলিটেক্সট সেবা সিফ্যাক্সের।
প্রথম যখন এটা চালু হলো তখন মাত্র একজন সাংবাদিক - দিনের অফিসের সময়টুকুর মধ্যে - ২৪ পাতার খবর প্রচার করতে পারতেন। অফিস ছুটির দিনগুলোতে এ সেবা পাওয়া যেত না। প্রথমে এই সেবা নিয়ে খুব বেশি লোকের আগ্রহ ছিল না। কিন্তু যখন টিভিতে কোন অনুষ্ঠান চলছে না। এমন সময়গুলোতে এই সিফ্যক্স প্রচার করা শুরু হলো। তখন এরও দর্শক সংখ্যা বাড়তে লাগলো। একসময় এর সাপ্তাহিক ব্যবহারকারী ছিল ২ কোটি ২০ লাখ।
গ্রেনিচ সময়সংকেত আর বিগ বেনের ঘড়ির শব্দ
গ্রেনিচ মানমন্দিরের সময় অনুযায়ী প্রতি ঘন্টায় ইলেকট্রনিক সময়-সংকেত বা 'পিপ' বাজানো বিবিসিতে প্রথমবারের মত শুরু হয় ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। জিটিএস বা 'গ্রেনিচ টাইম সিগন্যাল' নামের সময় সংকেতের আবিষ্কারক ছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানী স্যার ফ্র্যাংক ওয়াটসন-ডাইসন, আর বিবিসির তখনকার মহাপরিচালক জন রিথ।
সেসময় বিবিসি রেডিওতে প্রতি ঘণ্টায় ছয়টি ছোট্ট পিপ বাজানো হতো। বর্তমানে এই জিটিএস বাজানো হয় রেডিও ফোরসহ বিবিসির অভ্যন্তরীণ অন্যান্য নেটওয়ার্কগুলোতে। একই বছর শুরু হয়েছিল লন্ডনের ওয়েস্টমিনটারের বিখ্যাত বিগ বেন ঘড়ির ঘণ্টা বাজানো। কিছুকালের মধ্যেই এগুলো বিবিসির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়।
এই ধ্বনি প্রচারের জন্য বসানো হয়েছিল বিশেষ ধরনের মাইক্রোফোন - যাতে নিচের রাস্তার গাড়িঘোড়া বা ঘড়ির ভেতরের যন্ত্রগুলোর শব্দ শোনা না যায়।
- আমের পাতাও ফেলনা নয়, রয়েছে হাজারো গুণ
- বাংলাদেশে ঈদ সোমবার, ৩ দেশে তারিখ ঘোষণা: খালিজ টাইমস
- ঈদে মুক্তি পাচ্ছে যে ৬ সিনেমা
- ভূমিকম্প হওয়ার আগে সতর্ক করবে গুগল
- নিজের প্রতিষ্ঠান নিজেই কিনলেন ইলন মাস্ক!
- রাকসু গঠনতন্ত্র বিষয়ক কিছু পরামর্শ
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাবেন যে ৫ ফল
- বাসায় ফিরেই ফেসবুকে পোস্ট তামিমের, যা জানালেন
- ঈদের আগে চাকরি হারালেন রাসিকের ১২০ কর্মচারী
- শক্তিশালী ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড মিয়ানমার-থাইল্যান্ড, ১৫০ জনের মৃত্যু
- রোববার বসছে চাঁদ দেখা কমিটি, জানা যাবে কবে ঈদ
- ডিআরইউতে হামলায় আহত ৩, গ্রেফতার ২
- ঈদের ছুটি: বাড়ির নিরাপত্তা জোরদার করার যত উপায়
- আবারও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে তামিমের: চিকিৎসক
- ময়মনসিংহে একটি গ্রাম বিক্রি করে দিলেন এক ব্যক্তি
- ঘুষি মেরে বেশ করেছি, ও যা নোংরামি করেছে এটাই প্রাপ্য: শ্রাবন্তী
- মেয়র হিসেবে শপথ নেয়া নিয়ে যা বললেন ইশরাক
- ‘ছাত্র-জনতার দাবিতে’ কাপড় দিয়ে ঢাকা হলো মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল
- `গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনার` অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
- ও আলোর পথযাত্রী, এখানে থেমো না
- লাইলাতুল কদরে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়
- অনিশ্চয়তার অবসান: ঈদেই মুক্তি পাচ্ছে শাকিবের দুই সিনেমা
- আর্জেন্টিনার কাছে ৪ গোল হজম, ক্ষমা চাইলেন ব্রাজিল অধিনায়ক
- আড়াই প্যাঁচের জিলাপিতে এত গুণ
- হার্ট অ্যাটাক: জীবন বাঁচাতে শিখে নিন সিপিআর পদ্ধতি
- তরমুজের সাদা অংশ খেলে পাবেন ৬ উপকার
- সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা সন্জীদা খাতুনের বিদায়
- হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ৭ মিথ
- উসকানিতে প্রভাবিত না হতে বললেন সেনাপ্রধান
- শতাধিক গাড়ির বহর:জারার প্রশ্ন,জবাবে দাদার সম্পত্তি দেখালেন সারজিস
- শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয়, অনুশোচনা নেই ফারিয়ার
- সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা সন্জীদা খাতুনের বিদায়
- ছোটখাটো বিষয় নিয়েও অতিরিক্ত চিন্তা?যেসব খাবার খেলে নিমিষেই কমবে
- হার্ট অ্যাটাকের ৬ লক্ষণ, দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন
- নিজ এলাকায় হান্নান মাসউদের ওপর হামলা
- ঈদের ছুটি: বাড়ির নিরাপত্তা জোরদার করার যত উপায়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাবেন যে ৫ ফল
- ‘শুধু সেনাবাহিনী নয়, কেউ যেন আ.লীগের ভার্সনের গল্প না শোনায়’
- উড়োজাহাজ থেকে নেমে শতাধিক গাড়ি নিয়ে সারজিসের শোডাউন
- ও আলোর পথযাত্রী, এখানে থেমো না
- শতাধিক গাড়ির বহর:জারার প্রশ্ন,জবাবে দাদার সম্পত্তি দেখালেন সারজিস
- আবারও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে তামিমের: চিকিৎসক
- আড়াই প্যাঁচের জিলাপিতে এত গুণ
- এনসিপির ইফতারে হাতাহাতি: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক গ্রেপ্তার
- জ্ঞান ফিরেছে, কথা বলেছেন তামিম
- হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ৭ মিথ
- সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাতের বক্তব্যে কী চাপে পড়েছে এনসিপি
- ইন্টারনেটের দাম ১০ শতাংশ কমালো সাবমেরিন কেবল কোম্পানি
- উসকানিতে প্রভাবিত না হতে বললেন সেনাপ্রধান
- আর্জেন্টিনার কাছে ৪ গোল হজম, ক্ষমা চাইলেন ব্রাজিল অধিনায়ক