শব্দ যেন না হয় কাউকে জব্দ, সহিংসতা-পীড়ন-শোষণের হাতিয়ার
নবনীতা চক্রবর্তী
লাইফ টিভি 24
প্রকাশিত: ১৫:৪১ ৯ এপ্রিল ২০২২
ঘটনার শুরু অনেক আগে থেকেই, শেষে এসে ঠেকেছে আজ। পুরুষতান্ত্রিক মৌলবাদী চিন্তা নারীর প্রতি সহিংতা ও বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। আজ এই আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে একজন নারীকে হেনস্থা হতে হয় টিপ পরার দায়ে!
কবি একদা লিখেছিলেন,
“আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেলো শেষে / হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।“
এই যে মায়ের নোলকের উপমা দিয়ে চমৎকার এক কাব্য ব্যঞ্জনা নির্মাণ করেছেন কবি, তা কি শুধুই অলংকার? এ যে আবহমান বাংলার এক চিরন্তন রূপ। আমাদের অস্বিস্ত্ব , আমাদের ঐতিহ্য আমাদের পরিচয় । তাই এত গান, কবিতায় বারবার আমাদের নিজস্বতা প্রতিফলিত হয়েছে।
আমরা একটি জাতি। যে জাতির নাম বাঙালি জাতি । প্রত্যেক জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, আছে নিজস্বতা। আরো আছে নিজেদের মতো করে জীবন যাপন করার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। সেখানে ধর্মের সাথে আমাদের আড়াল নেই। আবার সংঘর্ষও নেই।
আমাদের সংবিধান বলে, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। যে দেশের সংবিধানের মূল চার নীতির একটি হল ধর্মনিরপেক্ষতা। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সংস্কৃতির আবার বিরোধ কিসের? সংস্কৃতি বলতে আমরা আসলে কি বুঝি? বর্তমানে আমরা সংস্কৃতি বলতে বুঝি কালচারাল অনুষ্ঠান অর্থাৎ গান, ছবি আঁকা, নৃত্য ইত্যাদি।
কিন্তু আদৌ কি তাই। মোটেও তা নয়। আমাদের জীবনযাপনের প্রতিটি পদক্ষেপ যেমনঃ চলাফেরা, খাওয়া, পোশাক পরিচ্ছদ,কথা বলা, ভাষা, সুন্দর - অসুন্দর সবটাই আমাদের সংস্কৃতির উপাদান। এই যে আমরা অপসংস্কৃতি বলি, সেটাও কিন্তু এক প্রকারের সংস্কৃতি। শুধু তফাৎ বা ভাবনার জায়গাটি হল অসুন্দর যখন সুন্দরকে গ্রাস করতে চায়।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় –
'সুন্দরেরও বন্ধন নিষ্ঠুরেরও হাতে ঘুচাবে কে`।
অপসংস্কৃতি যখন আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে তখন সমাজের সকল স্তরে তার প্রভাব সুস্পষ্ট হয়। তখন নানান ভ্রান্ত ধারনা মানুষের ওপর চেপে বসে। মানুষ তার বিশ্বাসের সাথে তার কৃষ্টি, চিন্তা এবং সংস্কৃতিকে এক করে ফেলে।
ধর্ম ও সংস্কৃতিকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর কিছু নেই । কারণ ধর্মের মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ধর্মীয় সংস্কৃতি নয়। মানুষ, মনুষ্যত্ব, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক শান্তি লাভ ও সাধনা তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। তাই ধর্মচর্চার সাথে সংস্কৃতির কোন বিরো্ধ থাকতে পারেনা।
আরেকটি বিষয় হল, একই ধর্মের অনুসারী বিভিন্ন দেশে থাকতে পারে, কিন্তু সংস্কৃতি অঞ্চল ভেদে হয়। তাই আরব দেশের মুসলমান আর বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতির অথবা বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ, খিস্ট্রানদের সাথে ইউরোপীয় বা অন্য কোন দেশের দেশের খিস্ট্রান, হিন্দু বা মুসলমানদের সংস্কৃতির সমন্বয় খুঁজলে ভুল হবে। একটি জাতির সংস্কৃতি ও ধর্ম বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
তবে সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে ঘটে যার রূপান্তর। যা চলে এসেছে যুগ যুগ ধরে। অন্য সংস্কৃতির সাথে আদি বাঙালি সংস্কৃতি বিনিময়ের ফলে কি করে নতুন সংস্কৃতির ধরন গঠিত হল এবং বাংলায় বিভিন্ন ধর্মের প্রবেশের প্রভাবে বাঙালি সংস্কৃতির রূপান্তর ঘটলো, একই সাথে বাঙালি সংস্কৃতির কিভাবে ধর্মগুলোর রূপান্তরে প্রভাব বিস্তার করলো, সেটি বিনয় সরকারের 'বেঙ্গলি কালচার অ্যাজ এ সিস্টেম অব মিউচু্যয়াল আককুলটুরেশনস' নামক লেখনী থেকে স্পষ্ট হয়।
( উল্লেখ্য ১৯৪২ সালে এই লেখাটির বাংলা অনুবাদ করেন ক্ষিতিশ মুখোপাধ্যায় )
‘"বাঙালী হিন্দুরা পরধর্মে দীক্ষাপ্রাপ্ত কনভার্ট মাত্র। ইংরেজ খৃষ্টিয়ানরা, মিশরের মুসলমানরা, ইরানের মুসলমানরা যেমন পরধর্মে দীক্ষিত, বাঙালীরাও অবিকল তাই।... হিন্দু সংস্কৃতি ও হিন্দুধর্ম সেকালের বাঙলার 'অনার্য' নর-নারীর পক্ষে বিদেশী জিনিস। কিন্তু বাঙালী জাত এই বিদেশী ধর্ম ও সংস্কৃতিকে নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতির বশে আনিয়াছিল। তথাকথিত আর্যধর্ম ও সংস্কৃতি অনার্য সংস্কৃতির প্রভাবে পড়িয়া অনার্যীকৃত হইয়াছে। ইহাকে বলিব অবাঙালী সংস্কৃতির বাঙালীকরণ। হিন্দুধর্ম বা বৌদ্ধধর্ম অনায়াসে বাঙালীদের জয় করিয়া লইতে পারে নাই। বাঙালী ধর্মের নিকটও ইহাদের মাথা নোয়াইতে হইয়াছে।... আর্যধর্ম যেমন বাঙলাদেশকে জয় করিয়াছে, বাঙালী ধর্ম-ও তেমনি ইহাকে নাজেহাল করিয়াছে। জয়টা এক তরফা হয় নাই _ ধর্মান্তর বা মতান্তর গ্রহণটা হইয়াছে পারস্পরিক। বাঙলাদেশে খুব বেশী লোককে পরধর্ম (হিন্দুত্ব) স্বীকার করানো সম্ভব হয় নাই। অসংখ্য নরনারী অহিন্দু, অর্থাৎ বাঙালী বা অনার্য রহিয়া গিয়াছিল।...বাঙালীর সৃষ্টিশক্তি ইসলামকেও সহজে পথ ছাড়িয়া দেয় নাই। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মতো ইসলামকেও বাঙালীদের নিকট পরাজয় স্বীকার করিতে হইয়াছে। এই সকল ক্ষেত্রে ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতিকেও বুঝিয়া রাখিতে হইবে।... বিদেশী সংস্কৃতিগুলোর উপর স্বদেশী সংস্কৃতির প্রভাব গভীরভাবে লক্ষ্য করিবার বিষয়। বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলমানদের আচার-ব্যবহার ও চালচলনে মিল আছে। কারণ কি? সাধারণের ধারণা- হিন্দুদের কেহ কেহ মুসলমান হইয়া যাওয়ায় এইরূপ ঘটিয়াছে। কথাটার ভিতর কিছু সত্য আছে। কিন্তু আসল কারণ- হিন্দু ধর্মের মতো মুসলমান ধর্মেও অনার্য বাঙালী আদিম লোকদের আচার-ব্যবহার আর চালচলন ঢুকিয়া গিয়াছে। হিন্দু ও মুসলমান দুই ধর্মেই 'বাঙ্লামি'র প্রলেপ পড়িয়াছে। হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের উপর খাঁটি স্বদেশী সংস্কৃতি দিগবিজয় চালাইতেছে। এই কথাটা মনে রাখিলে বাঙালী হিন্দু এবং মুসলমানদের রীতিনীতির ভিতর ঐক্য ও সাদৃশ্যগুলো সহজে বুঝিতে পারিব। দুই সংস্কৃতিই 'বাঙালীকরণের' প্রভাবে অনেকটা একরূপ দেখাইয়া থাকে।"
(সূত্র : বাঙলায় দেশী-বিদেশী (বঙ্গ-সংস্কৃতির লেন-দেন), বিনয় সরকার, ১৯৪২)
অর্থাৎ, বাঙালি তার একেবারেই নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেনি, বরং তার দোর্দন্ড প্রতাপে নিজস্বতার সাথে অন্য সংস্কৃতিকে একীভূত করে তার নির্দিষ্ট একটি ছাঁচ নির্মাণ করেছে। বিনিময় বা রূপান্তর যাই ঘটুক না কেন, তা হয়েছে পারস্পারিক। তাই এখনও আমাদের গান বাজনা তাল সুর লয় এবং নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র অভিন্ন। সেখানে ধর্ম মোটেও মূল নিয়ামক নয়।
আমাদের আনন্দোৎসব মেলা যেমন ঃ পহেলা বৈশাখ ( বাঙ্গালির সর্ববৃহত সার্বজনীন উতসব) , চৈত্র মেলা , পিঠা উৎসব প্রভৃতি এক ও সকলে মিলে উদযাপন করে । গ্রাম বাংলার খেলাগুলো যেমনঃ লাঠি খেলা, তরবারি ও রামদার খেলা, হাডুডু ও দাইড়া খেলা , নৌকাবাইচ , সারি ইত্যাদি আমাদের সকলের । আমাদের বাড়িঘর , আসবাবপত্র, নকশি কাথা, চাষাবাদ, ফসল, খাদ্য , রন্ধন প্রণালী , পোষাক, পরিচ্ছদ , গৃহসজ্জা , সজ্জা সবকিছু অভিন্ন। আমাদের যাপিত জীবনের চিন্তা , দুর্ভোগ , সমস্যা সবই একই । সুতারাং সংস্কৃতি একটি মজ্জাগত জাতীয় বিষয়।
একটি জাতিতে বহু ধর্মের, বহু বর্ণের মানুষ থাকতে পারে, তবে জাতিগত সংস্কৃতি এক। একটি জাতির পরিচায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে সেই জাতির সংস্কৃতি। ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন করার পরিণতি আমরা দেখেছি। বায়ান্ন, ছেষট্টি, উনসত্তর, সত্তর এবং একাত্তর - এগুলো নিছক কোন সংখ্যা নয়। আমাদের সংগ্রাম, ত্যাগ তিতিক্ষার জয়গাঁথা।
সেই আর্দশ সেই চেতনা পিষ্ট করতে আজও হায়েনারা উদগ্রীব। তাই তারা বিভ্রান্তি ছড়ায় গুজবের সন্ত্রাস করে। বেছে নেয় শোষণ ও পীড়নের। সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস। ধর্মের মুখোশ পরে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। ধর্মান্ধতার সংকটে বাংলাদেশ। লতা সমাদ্দারের ঘটনা কোন বিছিন্ন ঘটনা নয়। মানুষের এই নীতি নৈতিকতা, বিবেক, আইন কানুন কোন কিছুই তোয়াক্কা না করার এই ঘটনা আমাদের দেউলিয়াত্বই প্রকাশ করে।
এতো গেল সামাজিক দিক। দেখা যাক আইন কি বলছে, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশে ইভটিজিং বা উত্ত্যক্ততা বিষয়ে বলা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনও রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বা সেখান থেকে দৃষ্টিগোচরে স্বেচ্ছায় এবং অশালীনভাবে নিজ শরীর এমনভাবে প্রদর্শন করে, যা কোনও গৃহ বা দালানের ভেতর থেকে হোক বা না হোক, কোনও নারী দেখতে পায় বা স্বেচ্ছায় কোনও রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনও নারীকে পীড়ন করে বা তার পথ রোধ করে বা কোনও রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনও অশালীন ভাষা ব্যবহার করে, অশ্লীল আওয়াজ, অঙ্গভঙ্গি বা মন্তব্য করে কোনও নারীকে অপমান বা বিরক্ত করে, তবে সেই ব্যক্তি ১ বৎসর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডে অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
আইনগত ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও নারীর প্রতি এই সহিংসতায় মানুষের বিকার নেই । দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য হল - নারীদের কটূক্তি, শাব্দিক সহিংসতা বা বুলিং-এর শিকার হতে হয় সবচেয়ে বেশি। বালিকা থেকে বয়স্ক, গৃহবধূ থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী - কারো রেহাই নেই । এটি পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার একটি কদর্য চিত্র। এখানে উল্লেখ্য যে, পুরুষ এবং পুরুষতান্ত্রিকতা এক বিষয় নয়। আবার পুরুষ্তান্ত্রিক মনোবৃত্তি শুধু পুরুষরাই পোষণ করেন বা করবেন তা নয়। একজন নারীও এই ধ্যান ধারনা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন, ক্ষেত্র বিশেষে হয়েও থাকেন।
এখানে মানসিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোয় একজন নারীর সম্পর্কে মিথ্যাচার, অর্ধসত্য, নিন্দা, কুৎসা রটনা, অপবাদ, একপেশে অভিযোগ প্রভৃতি কার্যক্রমের দ্বারা তাকে সামাজিকভাবে অপদস্থ অপমান এবং হেয় প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে প্রতিহিংসামূলক নারীটির চরিত্র হনন ও অবদমন করার একটি সহজ পন্থা বলে বিবেচিত হয় । এর ফলে সে অবদমিত হতে থাকে। প্রতিনিয়ত এই সম্মানহানি , শোষণ ও অবদমনের ফলে তার ব্যক্তিগত, সামজিক ও কর্মবলয় বাধাগ্রস্থ হতে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে আত্মহননের ঘটনা ঘটে। যেমন, বখাটেদের টিজিং-এর কারণে ২১ বছরের তরুণী নারায়ণগঞ্জের চারুকলার শিক্ষার্থী সিমি বানুর আত্মহত্যার ঘটনাটি নিশ্চয়ই বিস্মৃত হইনি।
এখন যদি আমরা আইনের সুস্পষ্ট প্রয়োগ ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তু্লতে না পারি তবে এই সহিংসতা বাড়তেই থাকবে, সমাজে এর প্রভাব হবে মারাত্মক। এই যে আমরা বার বার সহিংসতার প্রসঙ্গটি তুলছি, এখন স্পষ্ট হওয়া দরকার সহিংসতা বলতে আমরা কি বুঝি। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা জানি না, নিজ স্বার্থ হাসিলে কখন শিষ্টাচার নীতি মাড়িয়ে সহিংসতায় পর্যবসিত হয়। সহিংসতার ধরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে। শারীরিক, মানসি্ক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এ সমস্ত নিপীড়নই সহিংসতা। তাই এর মাত্রার ভিন্নতা, তীব্রতা, উদ্দেশ্য এবং ফলাফলের পার্থক্য সবকিছুই উল্লেখযোগ্য।
শারিরিক নির্যাতন তথা সহিংসতার রূপটি কম বেশি আমরা সবাই মোটামুটি জানি। শরীরে আঘাত, চড়, চেঁচামেচি (আঘাত করা, লাথি মারা, কামড় দেওয়া, চেঁচামেচি করা, বাধা দেয়া, চড় মারা, কোন কিছু ছুঁড়ে মারা, মারধর করা ইত্যাদি) বিভিন্ন হুমকি; যৌন নির্যাতন; নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব; ভয় দেখানো; লাঞ্ছিত করা ইত্যাদি শারীরিক ক্ষতির উদ্দেশ্যে শারীরিক আগ্রাসন।
‘’অনুরূপভাবে, ইস্তাম্বুল কনভেনশন অনুযায়ী মানসিক সহিংসতা হল - "জবরদস্তি বা হুমকির মাধ্যমে একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ইচ্ছাকৃত আচরণ"। হুমকি, বিচ্ছিন্নতা, জনসমক্ষে লাঞ্ছনা, নিরলস সমালোচনা, অনবরত ব্যক্তিগত অবমূল্যায়ন, জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ বা সহযোগিতা করতে অস্বীকার এবং ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে সন্দেহ প্রবেশ করানো অন্তর্ভুক্ত ।‘’
এখানে মৌখিক আক্রমণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত। এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ যে, নেতিবাচক তথা অপরাধ্মূলক আচরন দ্বারা অপরাধীদের ক্ষমতায়িত হওয়ার সুযোগ হয় এবং ভুক্তভোগীরা হয় অক্ষমতায়িত। সেই সাথে ভুক্তভোগীর মানবাধিকার সীমিত হয়। তার স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুন্ন হয়। সেসাথে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়াসহ ব্যক্তির কর্মক্ষমতা হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরী হয়। সুতারাং কটুক্তিকে হালকাভাবে নেয়ার কিছু নেই। এটির প্রভাব, ধরন ও পরিভাষার বিস্তার অনেক গভীরে। এটির বিরুদ্ধে আইনী, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, বাস্তবিক অর্থে যার কোন বিকল্প নেই।
ইতিমধ্যেই নানান কটুক্তি করার মাধ্যমে সহিংসতার ধরন এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে আমরা প্রধানমন্ত্রীকেও ছাড় দিচ্ছি না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এটি একটি অপরাধ। সামাজিকভাবেও অগ্রহণযোগ্য। তাই যখন কেউ কটুক্তি করেন, শিষ্টাচারের সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেন, তখন সেটার বিচার হওয়া উচিত। শুধু বিচার নয়, সামাজিকভাবেও তাকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
মনে রাখা দরকার, মানুষের এই মুখ নিঃসৃত শব্দ যোগাযোগের ও ভাবের পরিপূর্ণ প্রকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ শব্দ দিয়ে প্রকাশ পায় মানুষের অনুভূতি, ভাবনা ও তার আমিত্বের। শব্দ চয়ন শুনে বা পড়ে মানুষটির সম্পর্কে আমাদের ধারণা তৈরী হয়। শিষ্টাচার, সদাচার, আদবকেতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই শব্দ। আপনি বা আমি আরেকটি মানুষকে কি বলছি, তার মাধমে স্পষ্ট হয় অপর ব্যক্তির সম্পর্কে আমি কি ধারণা পোষণ করি এবং আমি ব্যক্তি মানুষটি কেমন। সুতারাং নিজের সম্বন্ধে ও অপরের সমন্ধে একটি পারস্পারিক ধারণার সেতূবন্ধন গড়ে দেয় এই শব্দ।
শব্দ কাউকে জব্দের হাতিয়ার না হয়ে সুন্দরের হোক, সহমর্মিতার হোক, প্রতিবাদের হোক, প্রয়োজনে সমালোচনার হোক। কোনভাবেই সেটি সহিংসতার, পীড়নের এবং শোষণের যেন না হয়। আইন প্রয়োগ ও বিচারের দ্বারা রুখে দিই যে কোন ব্যক্তির প্রতি সহিংসতা। সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হোক, সে দিকে আমাদের দৃষ্টি হোক সতর্ক।
লেখক : নবনীতা চক্রবর্তী
শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি সায়েন্স, ঢাকা
- সুইজারল্যান্ডে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা
- সাকিবের মুখোমুখি হচ্ছেন তামিম
- শিল্পী সমিতি থেকে আজীবন বহিষ্কার নিপুণ
- ক্ষমতায় এসেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করলেন ট্রাম্প
- সকালে খালি পেটে গুড়-ছোলা খাওয়ার আসল রহস্য কি?
- মেজাজ হারানোর ব্যাখ্যায় তামিম, ‘মালানের সঙ্গে আমার কিছুই হয়নি’
- সাইফ আলির ওপর হামলাকারী বাংলাদেশি, যা জানা যাচ্ছে
- ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণ: বাংলাদেশে কতটুকু প্রভাব পড়বে?
- অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা: সেই প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশদের
- বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ শুরু
- মোবাইল ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে চায় না শিশু? যা করবেন
- খালি পেটে খান মেথি-চিয়া সীড ভেজানো পানি, পার্থক্য নিজেই বুঝবেন
- সরকারের সময় ধরে ভোটের দিকে এগোচ্ছে কমিশন: সিইসি
- সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
- সেদিন রাতে ৩০ মিনিটে যা ঘটেছিল সাইফিনার বাড়িতে
- সাড়ে পাঁচ মাসে ৪০ মাজারে হামলা: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর
- আজহারীর মাহফিল থেকে ২১ নারী আটক
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ৬৬১ জনের চাকরি
- রোববার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর : কাতার
- টিসিবির এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর ৩৭ লাখ ভুয়া
- রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা জরুরি: খসরু
- অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মেয়েদের শুভ সুচনা
- তাপমাত্রা ও কুয়াশা নিয়ে নতুন বার্তা
- বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারত
- চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বাংলাদেশ কোচের পদত্যাগ
- ফেসবুকে সম্পদের বিবরণ দিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
- শীতে মেজাজ খিটখিটে? যেসব খাবার খেলে থাকবে ফুরফুরে
- কারামুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর
- দেশে এইচএমপিভিতে প্রথম আক্রান্ত নারী মারা গেছেন
- শীতে অলসতা ঘিরে ধরেছে, সক্রিয় থাকতে যা করবেন
- তাপমাত্রা ও কুয়াশা নিয়ে নতুন বার্তা
- প্লট দুর্নীতি: শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা
- এইচএমপিভি: কী কী উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? বিস্তারিত জানালো হু
- কারামুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর
- বায়ুদূষণে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
- টিউলিপের পদত্যাগপত্রের জবাবে যা লিখলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
- পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক
- জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান ঘটেছে, বিপ্লব নয়
- মেজাজ হারানোর ব্যাখ্যায় তামিম, ‘মালানের সঙ্গে আমার কিছুই হয়নি’
- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: খালেদা জিয়ার সঙ্গে খালাস পেলেন তারেক
- শীতে জমুক হাঁসের ঝাল খিচুড়ি
- রাতের খাবারের পর যেসব অভ্যাস ওজন বাড়ায়
- শীতে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চান? রোজ যেসব অভ্যাস বাড়াবে ইমিউনিটি
- সংবিধান সংস্কার প্রতিবেদন: তিনটি মূলনীতি বাদ নতুন চারটি প্রস্তাব
- কুকুর পরিচালনা শিখতে ইতালি যাচ্ছেন ৫ জন
- ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস
- শীতের সন্ধ্যায় মিষ্টিমুখ করুন বাদামের হালুয়ায়
- পিএসএলে লিটন-রিশাদের দ্বিগুণ আয় করবেন নাহিদ রানা
- বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারত
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ৬৬১ জনের চাকরি