ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১১৫৪

শীতে ঘুম বেশি পায় কেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৮ ৮ ডিসেম্বর ২০২০  

সন্ধ্যা না নামতেই শিরশিরে উত্তরে হাওয়ায় খুব মালুম পড়ছে। শীত আসতে আর বেশি দেরি নেই। দিন পনেরোর মধ্যেই আলমারি থেকে গরম চাদর বের করতে হবে। শীতের দিনগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করে লেপ ও কম্বলের দোকানগুলো। বিভিন্ন মার্কেটে বাড়ছে ক্রেতাদের আনাগোনা। নতুন লেপ-কম্বল কেনা হচ্ছে। পুরনোও নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। 

 

কিন্তু ঘুম থেকে ভোরবেলা উঠতে পারবেন তো? না উঠে বা উপায় কী? স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারি, কোথাও আলাদা ছাড় দেবে না। সবকিছুই হবে নিজের নিয়মে।


শীতে অনেকেই শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি অনুভব করেন এবং শক্তি কম পান। এসময়ে ক্লান্তি ও ঘুমভাব যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই ঘুমঘুম ভাবের জন্য কাজকর্মেরও ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋতুভেদের সঙ্গে সঙ্গে শরীর ও মনে কিছু পরিবর্তন হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে শীতের সময় এই বিষয়গুলো অনেক লোকের ক্ষেত্রেই বেড়ে যায়। 


যে কারণে শীতের সময় ঘুম বাড়ে


সূর্যের আলোর অভাব
শীতে দিন ছোট হয়ে যায়। এতে কাজের চক্রে পরিবর্তন আসে। দিন ছোট হওয়ার বিষয়টি বা সূর্যের আলোর ঘাটতি মস্তিষ্ক থেকে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়ায়। যে কারণে ঘুমঘুমভাব বাড়ে। আলো ও আঁধারের সঙ্গে এই হরমোন তৈরির যোগ রয়েছে। শীতে দিন ছোট, সূর্যের আলো কম পাওয়া যায় এবং রাত বড় হয়। তাই শরীর বেশি ঘুমাতে চায়। 


ঘুম থেকে ঘরে আলো প্রবেশের জন্য জানালা খুলে দিন। বেশিরভাগ সময় সূর্যের আলোর কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে কাজের সময় পরিবর্তন করুন। কাজের জায়গায় আলো বেশি রাখার চেষ্টা করুন।

 

ভিটামিন ডি’র অভাব
সূর্যের আলো ভিটামিন ডি’র অন্যতম উৎস। এটি পেতে সকালের আলোতে যেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। শীতে ঘর থেকে কম বের হওয়া হয় বলে ভিটামিন ডি’র অভাব হতে পারে। এতে শরীর ক্লান্ত লাগে। তেলযুক্ত মাছ, স্যামন, সারডিন, ম্যাকরেল ইত্যাদি খেতে পারেন। ডিমও ভিটামিন ডি’র আরেকটি উৎস। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে কীভাবে ডিম খাবেন, জেনে নিন। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন।

 

ঘুমের ঘাটতি
ভালোভাবে না ঘুমালেও বেশি ঘুম পায়। অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম শরীর চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী ঘুমান। ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার সময় ঠিক রাখুন।

 

প্রাচীনকালে মুনি ঋষিদের অবশ্য ব্রহ্ম মুহূর্তে ওঠার অভ্যাস ছিল। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও দেরিতে ঘুম ভাঙার সমস্যার সমাধানের কথা বলা হয়েছে। সূর্যাস্তের ৪৫ মিনিট আগে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। এই সময়কে বলা হয় ব্রহ্ম মূহুর্ত। ব্রহ্ম মূহুর্তে নিয়মিত ওঠার অভ্যাস তৈরি করতে পারা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। এই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারলে সূর্যের তরঙ্গের সঙ্গে মানবদেহের তরঙ্গ মিলে যেতে পারে। এজন্য সারদিনই শরীর স্বাস্থ্য সতেজ ও চনমনে থাকে। 

 

ঘুম ভাঙার আগে যা করা উচিত-

 

রাতে হালকা খাবার খেয়ে ঘুমান
রাতের খাবার হালকা হলে তা হজম হতে সুবিধা হয়। বেশি খেলে শরীর ভারী হয়ে যায়। ফলত সকালে ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার বা মিষ্টি খাওয়া বর্জন করুন। রাতের খাবার যত হালকা হবে শরীর তত ইজি বোধ হবে এবং বিছানা ছেড়ে উঠতে সুবিধা হবে।

 

ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি খান
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্তত এক গ্লাস পানি খেলে মূত্রাশয়ে চাপ পড়বে। সকাল সকাল তাই বাথরুমে যাওয়ার দরকার হবে। সঙ্গে ঘুমও বিদায় হবে। তাই বলে ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত পানি খাওয়া উচিত নয়। বিশেষত ডায়াবেটিস থাকলে বেশি পানি খেয়ে ঘুমাতে যাবেন না।


অ্যালার্ম দেয়া ঘড়ি দূরে রাখুন
অনেকেই অ্যালার্ম সেট করে শুলেও হাতের কাছে থাকা ফোন বা ঘড়ির অ্যালার্ম বাজলেই তা বন্ধ করে আবার পাড়ি দেন ঘুমের দেশে। অ্যালার্ম দেয়া ঘড়ি বা ফোন যেখানে ঘুমাচ্ছেন সেখান থেকে দূরে রাখলে অ্যালার্ম বন্ধ করতে বিছানা ছেড়ে উঠতেই হবে! আর কিছু উপায় থাকবে না তখন। বিছানা থেকে একবার উঠে অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার বিছানায় ফিরে ঘুমানো সম্ভব হয় না। ফলে ঘুমঘোর কেটে যাবে।


ঘুম ভাঙলেই বিছানা ছাড়ুন
ঘুম ভেঙে গেলেও আলস্যের জন্য আমরা বিছানায় শুয়ে থাকি। ঘুমের ঘোর ঘুম ভাঙার পরও থাকে বলে বিছানায় থাকলে আবারও ঘুমিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ঘুম ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গেই বিছানার হাতছানি এড়িয়ে উঠে পড়তে হবে। গড়িমসি করবেন না।