ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ পৌষ ১৪৩১
good-food
২০

শীতেই বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি, বিপদ এড়াতে যা করবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:৩৬ ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪  

শীতকাল এলেই নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম- জ্বর, সর্দি, কাশি, সংক্রমণ। তবে এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন হার্টের রোগীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং হার্ট ফেইলিউরের ঘটনা প্রায় ১৪-২০% বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে হার্ট সম্পর্কিত রোগের লক্ষণগুলোও বৃদ্ধি পায়। এসব সমস্যা মূলত ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণেই বাড়ে।

 

হাড়হিম করা শীত বা হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনের সংস্পর্শে রক্তনালী সংকোচন হয়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদরোগের আক্রান্ত ব্যক্তিরা শীতে ঝুঁকিতে থাকেন।যেমন- করোনারি আর্টারি ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এবং বয়স্ক মানুষেরা। ফলে শীতকালে খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে স্বাস্থ্যের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে চিকিৎসকরা কি কি টিপস দিয়েছেন –

 

# অতিরিক্ত ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন বন্ধ করুন 

অনেকে মনে করেন, শীতে ধূমপান ও অ্যালকোহল শরীরকে উষ্ণ রাখে। কিন্তু এ ধারণা একেবাররই ভুল। চিকিৎসকরা বলছেন, যেকোনো আবহাওয়ায় অতিরিক্ত ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন বিপজ্জনক। এসবের বদলে শীতকালে উষ্ণ থাকার স্বাস্থ্যকর উপায়গুলো অন্বেষণ করুন। ঘন ঘন পানীয় যেমন- কফি, চা, ভেজি-লোড স্যুপগুলোকে বেছে নিতে পারেন। 

 

# রক্তচাপ বৃদ্ধি 

শীতকালে রক্তনালীর সংকোচন এবং অন্যান্য হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। ফলে রক্তচাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই শীতে নিয়মিত ওষুধ কীভাবে পরিবর্তন করা যায় এবং ডোজ সামঞ্জস্য করা যায় তা বোঝার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কখনই নিজে থেক তা পরিবর্তন করবেন না। 

 

# অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস 

হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শীতকালে সাধারণত খিদে বেড়ে যায়। ফলে ভাজা ও চিনিযুক্ত খাবার এবং উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত পদার্থের অতিরিক্ত ব্যবহারে খাদ্যাভ্যাস অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, খাবারকে ঘন ঘন ছোট ছোট অংশে ভাগ করে কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য উপাদান যেমন- টাটাকা স্যালাড, ফল, বাদাম, আখরোট, শণের বীজ এবং চিয়া বীজ দিয়ে তৈরি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস তৈরি করে খেতে পারেন।

 

# হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি 

প্রতি বছর শীতকালে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার লক্ষ্যনীয়। এটি রক্তচাপ বৃদ্ধি, ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে আসা এবং সম্ভাব্য স্ট্রেসের মাত্রা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণে হয়। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের আগেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরিকল্পনা করুন। বিশেষ করে যাদের বয়স ৩০-এর বেশি এবং আগে কখনও করেননি। এই বয়সী ব্যক্তিরা কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার মাত্রা জানতে পরীক্ষা করুন। যাতে তা কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে।
এছাড়া নিজের ও পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের জন্য দীর্ঘ বহিরঙ্গন কার্যকলাপ এড়িয়ে চলুন। সঙ্গে গরম কাপড় দিয়ে ভালোভাবে সুরক্ষিত থাকুন এবং বয়স্ক সদস্যরা সূর্যোদয়ের পরে তাদের সকালের হাঁটা বিলম্বিত করতে পারেন।

 

# শারীরিক কার্যকলাপ এবং ওজন বৃদ্ধি
শীত আমাদের নিস্তেজ ও অলস করে তোলে। ফলে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়। এটি বর্ধিত খিদে এবং সম্ভাব্য নিম্নমানের ঘুমের সঙ্গে জড়িত। ওজন বৃদ্ধিতে যা অবদান রাখতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত শীতকালে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং বাইরের কার্যকলাপ হ্রাস পায়। বৈদ্যুতিক রুম হিটার, কম্বল ও গরম কাপড়ের নিরাপদ ব্যবহার ঘুমের মান উন্নত করতে পারে।

 

শীতে দ্রুত হাঁটার মতো বহিরঙ্গন ক্রিয়াকলাপ উপভোগ করার জন্য উষ্ণ পোশাকের প্রয়োজন। এছাড়া ট্রেডমিলে হাঁটা এবং সূর্য দেখার মতো যোগ অনুশীলন করার মতো ইনডোর ব্যায়ামের বিকল্পগুলোর মাধ্যমে উচ্চ স্তরের শারীরিক কার্যকলাপ বজায় রাখতে পারেন।

 

পাশাপাশি কার্ডিয়াক সমস্যায় আক্রান্ত সব রোগী, বিশেষ করে এলভি ডিসফাংশন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা রয়েছে, তাদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। এজন্য নিয়মিত নিজের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা ও পরীক্ষাগুলো করতে হবে। সেই সঙ্গে শীতকালে বুক ও ফুসফুসে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই শীতের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।