ঢাকা, ২৩ নভেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৯৪

প্লাটফরমে থেমে থাকবে ১০মিনিট

শুরুতে মেট্রোরেল থামবে শুধু উত্তরা ও আগারগাঁওতেই

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:৩০ ২৭ ডিসেম্বর ২০২২  

বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় এ স্বপ্নযাত্রার শুরুতে ট্রেন কেবল উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। থামবে না মাঝের কোনো স্টেশনে। 

 

পাশাপাশি প্রথম কয়েক দিন একটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে যাত্রী ওঠার জন্য অপেক্ষা করবে মিনিট দশেক করে। 

 

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল বলছে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নেই। এই বৈদ্যুতিক রেলে টিকেট কাটা, নিয়ম মেনে প্ল্যাটফর্মে ওঠা এবং ট্রেনে ওঠার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে শুরুতে মাঝের স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামবে না। একই কারণে স্টেশনে ট্রেন থাকবে বেশি সময় ধরে। 

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধনের পরদিন থেকেই যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন। 

 

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বললেন, আমাদের দেশে মেট্রোরেল প্রথম। হঠাৎ একজন যাত্রী মেট্রোরেলের সেবা কীভাবে নিতে হয়, কীভাবে টিকেট কাটতে হয়, কীভাবে দরজা খোলে- এসব কিছু জানেন না। আমরা কিছু মানুষ নিয়ে ট্রায়াল করে দেখেছি, তাদের বলেছি- আপনারা এখন এমআরটির নির্দেশনা পড়ে পড়ে যান। কিন্তু দেখা গেছে- কেউ অর্ধেক পথে ঘোরেন, কেউ প্রথম দিকে থাকেন, আবার কেউ শেষের দিকে যান। এজন্য আমরা প্রথম দিকে এই মাথা থেকে ওই মাথা (উত্তরা থেকে আগারগাঁও) আর কোথাও থামব না। 


তিনি বলেন, মানুষ যখন মেট্রোরেলে চড়া থেকে শুরু করে সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলায় অভ্যস্ত হবে, তখন থেকে আমরা রেল সংখ্যা এবং থামার স্টেশন সংখ্যা বাড়াব। 

 

শুরুতে অনভিজ্ঞ যাত্রীরা তাড়াতাড়ি ট্রেনে উঠতে বা নামতে গিয়ে যাতে দুর্ঘটনায় না পড়েন, সেজন্য যাত্রীদের ওঠানামার জন্য ১০ মিনিট করে ট্রেন থেমে থাকবে বলেও জানালেন তিনি।

 

আগারগাঁও থেকে উত্তরা ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে যেতে পারবেন যাত্রীরা। মেট্রোরেলে কোনো হাফ পাস (ভাড়া) নেই। তবে মেট্রোরেল পাস নিলে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা যৌক্তিক।

 

এদিকে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ দেশের প্রথম এ মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ঠিক করেছে ৫ টাকা। গত ৮ সেপ্টেম্বর ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রকাশ করা হয়। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। তার মানে মেট্রোরেলে চড়তে ন্যূনতম কুড়ি টাকা গুনতেই হবে।

 

উত্তরা দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ স্টেশন) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৬০ টাকা। উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা সাউথ স্টেশনে যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া ওই ২০ টাকাই দিতে হবে।

 

সিঙ্গেল জার্নি টিকিট স্টেশনের কাউন্টার থেকে কাটা যায়, চাইলে ‘টিকিট বিক্রয় মেশিন’থেকে নিজে নিজেও কাজটি সেরে ফেলা যায়।

 

উত্তরা নর্থ থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা।

 

আর পল্লবী থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া একই, ২০ টাকা। পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা।

 

মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ চালু হলে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট যেতে গুনতে হবে ৩০ টাকা, আর কারওয়ান বাজার যেতে লাগবে ৪০ টাকা।

 

মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া ৫০ টাকা, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে লাগবে ৬০ টাকা। তবে মিরপুর-১০ থেকে কমলাপুর স্টেশনে যেতে লাগবে ৭০ টাকা ভাড়া।

 

তবে দীর্ঘমেয়াদি পাস নিলে ভাড়ায় ১০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা নিতে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানি ডিএমটিসিএলকে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা ভাড়া এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

 

প্রথম ধাপে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। এ পথে স্টেশন পড়েছে ৯ টি। পরে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত চলাচল করা যাবে এই উড়াল রেলপথে। তখন স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭ তে, দূরত্ব দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটারে।

 

কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, মেট্রোরেলে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া যাবে। 

 

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল পথ নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। তবে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশে রোকেয়া সরণিতে মেট্রোরেলের পিয়ার বসানোর খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয় পরের বছরের মাঝামাঝিতে।

 

গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। পরের বছর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়।

 

উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপোর মধ্যদিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায় কার্যক্রম। ধাপে ধাপে কাজ এগিয়েছে অগ্রাধিকারভিত্তিক এ প্রকল্পের; বাড়ানো হয়েছে এর রুটও।

 

রুট বাড়ানো ও ব্যয় বাড়ার আগে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল এগিয়ে নেয়ায় মোট ব্যয় বেড়ে হয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।