ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২৩৬৮

সন্ন্যাসীদলে যোগ দিয়েছিলেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র

মোহা: ফজলুল হক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:১৫ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী।

শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাড়া। তাঁর কৈশোর ও যৌবনের এক বড় অংশ অতিবাহিত হয় ভাগলপুরে মাতুলালয়ে। সেখানকার তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৯৪ সালে এনট্রান্স পাশের পর একই কলেজে তিনি এফএ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্রের কারণে তিনি আর লেখাপড়া করতে পারেন নি।

 

প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শরৎচন্দ্র বনেলী এস্টেটে সেটেলমেন্ট অফিসারের সহকারি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি কিছুদিন কোলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদক হিসেবেও কাজ করেন। কিছুদিনের জন্য তিনি একসময়ে সন্ন্যাসীদলেও যোগ দিয়েছিলেন। ১৮৯৩ সালে তিনি বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) চলে যান এবং সেখানকার রেলওয়েতে অডিট দপ্তরের কেরানি পদে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তিনি বহুবছর বার্মা গণপুর্ত বিভাগের হিসাবরক্ষণ অফিসে চাকরি করেন।

 

রেঙ্গুনে বসবাসের সময় শরৎচন্দ্রের প্রথম স্ত্রী শান্তি এক বছরের শিশুপুত্রসহ প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১৯১৬ সালে বার্মা থেকে ফিরে এসে তিনি হাওড়ায় বসবাস শুরু করেন। ১৯২১ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।

 

শরৎচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস ‘বড়দিদি’ ১৯০৭ সালে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি একে একে রচনা করেন ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘পরিণীতা’ (১৯১৪), ‘বৈকুন্ঠের উইল’, ‘পল্লীসমাজ’ (১৯১৬), ‘দেবদাস’, ‘নিস্কৃতি’, ‘চরিত্রহীন’ (১৯১৭), ‘শ্রীকান্ত’ (১৯১৭-১৯৩০), ‘দত্তা’ (১৯১৮), ‘গৃহদাহ’ (১৯২০), ‘দেনা পাওনা’ (১৯২৩), ‘পথের দাবী’ (১৯২৬), ‘শেষ প্রশ্ন’ (১৯৩১) । এছাড়াও তিনি ‘নারীর মুল্য’ ‘স্বদেশ ও সাহিত্য’ প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর পথের দাবী উপন্যাসটি বিপ্লববাদীদের প্রতি উস্কানিমুলক-এ অভিযোগে বৃটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে।

তাঁর মৃত্যুর পর কিছু অপ্রকাশিত রচনা প্রকাশিত হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; ‘শুভদা’, ‘শেষের পরিচয়’, ‘শরৎচন্দ্র ও ছাত্রসমাজ’, ‘ছেলেবেলার গল্প’, ‘শরৎচন্দ্রের অপ্রকাশিত রচনাবলী’ উল্লেখযোগ।

 

শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের মূল বিষয় পল্লীর জীবন ও সমাজ। ব্যক্তিমানুষের মন পল্লীর সংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার আঘাতে কতটা রক্তাক্ত হতে পারে, তারই রূপচিত্র এঁকেছেন তিনি তাঁর রচনায়। নারীর প্রতি সামাজিক নির্যাতন ও তার সংস্কারবন্দী জীবনের রূপায়নে তিনি বিপ্লবী লেখক, বিশেষত গ্রামের অবহেলিত ও বঞ্চিত বাঙালি নারীর প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধা তুলনাহীন। সামাজিক বৈষম্য, কু-সংস্কার ও শাস্ত্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকন্ঠ। কাহিনী নির্মাণে অসামান্য কুশলতা এবং অতি প্রাঞ্জল ও সহজ সাবলীল ভাষা তাঁর কথাসাহিত্যের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির প্রধান কারণ।

 

বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কুন্তলীন পুরস্কার, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পুরস্কার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি লাভ করেন। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি কোলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

শিল্প-সাহিত্য বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর