ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১৬ পৌষ ১৪৩১
good-food
১০৯৯

সবচেয়ে ছোট প্রাচীন মসজিদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:৫৪ ৬ আগস্ট ২০২১  

শেওলা জমে আছে দেয়ালে। ভেঙে গেছে কিছু অংশ। কোথাও সাদা রং উঠে কালচে হয়ে গেছে। প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই এটি আসলে মসজিদ। উপরিভাগের একটিমাত্র গম্বুজ জানান দিচ্ছে এর উপস্থিতি। চার কোনায় থাকা চারটি পিলারের নান্দনিক কারুকার্য এখন প্রায় বিলীন।

 

বেহাল দশায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে দাঁড়িয়ে আছে সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি। প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শনটির নাম ‘কাদিরবক্স মণ্ডল মসজিদ’। এই নামেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হয়েছে ক্ষয়ে যাওয়া স্থাপনাটি। তবে আড়াই হাজার বছর আগেকার মসজিদটির নাম নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। প্রতিষ্ঠাতা কে, তা ঠিকভাবে জানা না থাকায় সে বিতর্কের অবসান হচ্ছে না। যাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে, তাঁর বংশধরেরা বলছেন, তিনি এটি নির্মাণ করেননি।

 

পৌর শহরের নুনিয়াগাড়ি গ্রামে এর অবস্থান। জিরো পয়েন্ট চৌমাথা মোড় থেকে দূরত্ব আধা কিলোমিটার। এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের ভেতরে রয়েছে একটিমাত্র কক্ষ। একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন ইমামসহ ৪-৫ জন। কেননা ভেতরে নামাজের জায়গা রয়েছে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হিসেবে মাত্র ছয় ফুট করে। এখন আর নামাজ আদায় করা হয় না।

 

নুনিয়াগাড়ি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি রেজানুর রহমান বলেন, ‘ধারণা করা হয় এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলে নির্মিত। বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও সরকারিভাবে এর ইতিহাস উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৯৪ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল মালেক ও জেলা প্রশাসক আব্দুর সবুর মসজিদটি পরিদর্শন করেন। ইতিহাস উদ্‌ঘাটনে স্থানীয়দের নিয়ে গঠন করেন কমিটি।

 

তাঁরা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের মাস্তা এলাকার প্রাচীন লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকার প্রাচীন সৌর মসজিদ দেখে ধারণা করেন, এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলে নির্মিত। এই নবাবের আমলে নির্মিত মসজিদ দুটির স্থাপত্যশৈলীর কিছুটা ছাপ পাওয়া যায় পলাশবাড়ীর প্রাচীন এ মসজিদে।’ 

 

মণ্ডল পরিবারের সদস্য পুস্তক ব্যবসায়ী ও মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আব্দুল মতিন মণ্ডল বলেন, ‘মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৩ সালের ২ জুন একে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে এটি রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।’

 

তিনি আরও জানান, মসজিদটির স্মৃতি রক্ষায় এর পূর্ব পাশে নতুন বড় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে এলাকাবাসীসহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রাচীন মসজিদটি দেখতে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ আদায় করেন। প্রাচীন এ অনন্য নিদর্শন রক্ষায় সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন মণ্ডল পরিবারের সদস্য সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহীনুল ইসলাম শাহীন।