ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৪৪৩

সময় এখন সজাগ হবার

নবনীতা চক্রবর্তী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:২৫ ১০ অক্টোবর ২০১৯  

নানা আনুষ্ঠানিকতায় সমাপ্ত হলো বাঙালির সার্বজননীন শারদীয়া দূর্গাৎসব। উৎসবের শেষ দিনটিকে বলা হয় বিজয়া। আসুরিক শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে দেবী দূর্গার কৈলাসে গমন।  এমনই এক ধারনা ও বিশ্বাসকে লালন করেই  বিজয়া। কিন্তু  বর্তমান সমাজে  আসুরিক শক্তির আস্ফালন ভবিষ্যতের প্রতি এক অশনি সংকেত দেয়। কোন্ সভ্যতার পথে চলছি আমরা! কি ভবিষ্যত নির্মাণ করতে চলছি ? 
সভ্যতা আজ মৃত্যুকূপে।  আজ সারা পৃথিবীব্যাপী উগ্রবাদ চর্চিত হচ্ছে। দেশ, কাল, পাত্র ও অবস্থান ভেদে  এর রুপ ভিন্ন। তবে পরিনতি সবক্ষেত্রে একই। 
একটি  সময় মানুষ সম্মানিত হত এবং বিবেচিত হতো তার জ্ঞান, বিচক্ষণতা ও প্রাজ্ঞতার কারণে। কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদী ভোগ সর্বস্ব সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের সামাজিক অবস্থান বিবেচিত  হয় তার অর্থনৈতিক অবস্থার মানদন্ডে। সেসাথে যুক্ত হয়েছে ক্ষমতার লিপ্সা। মানুষ ক্রমাগত ক্ষমতাভোগী ও ক্ষমতালোভী হয়ে পড়ছে। ফলে চাওয়া আর পাওয়ার ক্রমাগত দ্বন্দ্বে মানুষের চিন্তা চেতনার স্তর নিম্নগামী হচ্ছে।  কোন বোধ, বুদ্ধি, শিক্ষা তার জন্য ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারছে না। মানুষের মধ্যে দ্বিচারি সত্তার প্রবণতা বাড়ছে। মানুষ মানুষের প্রতি নৃশংস হয়ে উঠছে। গত হয়ে যাওয়া নুসরাত এবং  সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র  আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ভঙ্গুর সমাজের পঙ্গু মন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের  কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। 
মানুষ যে কি পরিমান অস্থির হয়ে উঠছে, কি পরিমান জীবনের খেই হারিয়ে ফেলছে তা সহজেই  অনুমেয়। পরমতসহিষ্ণুতা বলে যে একটা শব্দ আমাদের সমাজে আছে সেটি গত হতে চলেছে। গত হতে চলছে আমাদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব।
আমরা যতটা সংবেদনশীল নিজেদের ব্যাপারে, ঠিক ততটা সংবেদনশীলতার পরিচয় কি অন্যের ক্ষেত্রেও দিতে পারছি।   শুধু আইন কানুন প্রয়োগ করেই কি এর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব।  এর অর্থ এই নয় যে  আইন কানুন কঠোর হবে না। আইন কানুনের সর্বোচ্চ প্রয়োগসহ সুশৃঙ্খল জীবন একটি সভ্য সমাজের প্রত্যেক  নাগরিকের অধিকার।  তবে যেখানে প্রতিনিয়ত একের পর এক পৈশাচিক মনোবৃত্তিমূলক  ঘটনা ঘটছে, সেখানে  নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা হওয়া একটি আবশ্যিক বিষয়। এটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাশীল হওয়া সময়ের দাবি।  সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বলিষ্ঠ হতে হবে।  কারণ খুব শংকার কথা হল, বেশিরভাগ   অপরাধগুলো সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রস্থল হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেটি চেতনার বাতিঘর, মানুষ গড়ার কারখানা সেটি বিভিন্ন সময়ে কেন  বির্তকিত হচ্ছে,বার বার  প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, উত্তাল হয়ে উঠছে সেটিও বিবেচনায় রাখা দরকার।  ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার  দায়বদ্ধতা তাদের রয়েছে।  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হওয়া মানেই একটি সমাজ ব্যর্থতায় পর্যবস্তিত হওয়া।  সেইসাথে 
সব বিষয়ে একপেশে  রাজনৈতিক মেরুকরণ বন্ধ হওয়া  উচিত । যুক্তি ও মননশীলতা নিয়ে ভাবতে হবে, প্রতিপক্ষকে জবাব দেওয়ার ভাষা হবে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা।  সমাজের প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে উঁচু তলা পর্যন্ত আকন্ঠ দুনীতি তে নিমজ্জিত পুরো সমাজ কাঠামো। রাজনীতি, অথনীতি সমাজনীতি সবখানে নীতির চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিনিয়ত রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই চলেছে। এখন কেউ আর কোন আর্দশ ধারন, লালন বা বিশ্বাস করেনা। জেনে বুঝে রাজনীতিও করে না। 
প্রযুক্তির নানারকম পালাবদলের সাথে সাথে প্রযুক্তিমুখী জীবন অবিশ্বাস্য গতিতে অনেকটা সামঞ্জস্যহীনভাবেই পরিবর্তিত হয়ে চলছে। মুঠোফোনে বন্দি জীবন। সেখানেই যত প্রতিবাদ প্রতিরোধ। অপরাধের অন্যতম উৎস হয়ে উঠছে এই মুঠোফোনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সাইট।  তথ্যপ্রযুক্তি নিভর অপরাধ গুলো ভয়াবহ রুপ নিয়েছে যা শুধু ভার্রচুয়াল জগতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে জাতীয় জীবনে।  
সামাজিক রাজনৈতিক জীবনে কুৎসা ও গুজব রটিয়ে নানা অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে  সন্ত্রাস  সংঘটিত হচ্ছে।  বর্তমান সমাজে "গুজব"  সন্ত্রাস ও অপরাধের অন্যতম বিকৃত এবং কার্যকরী মাধ্যম। এর ফলে নানানভাবে মানুষ হেনস্তা হচ্ছে। হিংসা প্রতিহিংসা  খুন, হত্যার মতো ঘটছে মারাত্মক সব অপরাধ।  সমাজের মানুষরা ক্রমেই অপরাধমনস্ক হয়ে পড়ছে। যার একটি বড় উদাহরণ সাম্প্রতিক বুয়েট শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ডটি। 
সবকিছুর ঊর্ধ্বে একটি বিষয় যা খুব করে ভাবনার জন্ম দেয় তা হল মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে ব্যর্থ হওয়া। মায়া দয়াহীন বোধ বুদ্ধিহীন জীবন যাপন করা।  যারা এই নৃংশস ঘটনাটি  ঘটালো  তারা ছাত্র, একটি ছাত্র সংগঠনের নেতা, কারো সন্তান, ভাই, বন্ধু  ইত্যাদি নানান রকম অভিধা ছাড়াও তো সবার আগে মানুষ ছিল।  কোথায় ছিল তাদের সেই মনুষ্যত্ব বোধ?  তাদের শিক্ষা, রুচি, সুস্থ মানসিকতা?  তাহলে আমরা কি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি?    পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,  সমাজ, রাস্ট্র থেকে তারা কি শিক্ষাগ্রহণ করল!  
সামাজিক এই অবক্ষয় মেনে নেওয়া যায় না। এতটা নিচে নেমে যাচ্ছি আমরা!  এ কোন ধরনের আধুনিক সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণ করে  চলছি ? 
নীতি নৈতিকতা বিবেক বোধ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।  কতিপয়  শৃংঙলাচ্যুত, অবিবেচক,  দুস্কর্মকারীদের   জন্য বর্তমান বাংলাদেশের সমস্ত অজন ধূলিসাৎ হতে পারে না। মিয়্রমান হতে পারে না ছাত্র রাজনীতির গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস,  যা আমাদের জাতিগত অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশিক সোনার বাংলা ব্যর্থ হতে পারেনা। আর যাই হোক না কেন কোন লোভী, নীতিভ্রস্ট  বির্তকিতরা মুজিব  আর্দশের উত্তরাধিকার হতে পারে না। দিন বদলের অভিযাত্রায় মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের যুদ্ধে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।  এখন সময় অত্যন্ত সজাগ হবার।  সমাজের সর্বস্তরে শুভবুদ্ধির উন্মেষ ঘটুক। কেটে যাক ঘন অন্ধকার।
 

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর