ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪১৫

সাংবাদিক রোজিনা জামিন পাবেন কী?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২২ ২০ মে ২০২১  

সরকারি নথির ছবি তোলার মামলায় কাশিমপুর কারাগারে থাকা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের শুনানি হলেও বৃহস্পতিবার জামিন হয়নি। এ বিষয়ে আগামী রোববার আদেশ দেবেন আদালত। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে তিনি জামিন পাবেন কী?

 

এদিন দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার ভার্চুয়াল আদালতে তার জামিন শুনানি ‍হয়। নথি পর্যালোচনা করে আদেশ দেন বিচারক। শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার।


রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক বলেন, মামলার এজাহার ত্রুটিপূর্ণ। আর অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট অনুযায়ী এখানে কোনও অপরাধ সংঘটিত হয়নি। যেহেতু অপরাধ সংঘটিত হয়নি, সেহেতু আবেদনকারী জামিন পাওয়ার হকদার।

 

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েতউদ্দিন খান হিরন বলেন, এই সরকার সাংবাদিকবান্ধব। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়। এখানে একজন সাংবাদিক অপরাধে জড়িয়ে নিজেকে মুক্ত করতে মুচলেকা দিতে চেয়েছিলেন। আমরা সেই ভিডিও ফুটেজ কোর্টে দাখিলের জন্য সময় চাচ্ছি। যেহেতু জামিন অযোগ্য মামলা, দেওয়ার সুযোগ নাই।


গত সোমবার সাংবাদিক রোজিনাকে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে শাহবাগ থানা থেকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার পর আদালতে তোলা হয়। 


এদিন রোজিনার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার। অপরদিকে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকর্তার সাংবাদিকের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।

 

দৈনিক প্রথম আলো জানায়, রোজিনা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাকে সেখানে একটি কক্ষে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর পরিবার তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও তা দেয়নি পুলিশ। রাতে শাহবাগ থানায় অফিশিয়াল সিক্রেট আইনের (১৯২৩) ৩ ধারায় তার নামে মামলা হয়।


এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, করোনার ভ্যাকসিন ক্রয়, সংগ্রহ সংক্রান্ত গোপনীয় নথি নাড়াচাড়া ও শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। এ সব নথি জনগণের সামনে এলে অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।


তবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের দাবি, সচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে অপেক্ষা করছিলেন, এসময় পিএস নথিপত্র গায়েবের অভিযোগ তুলে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে একজন পুলিশ কনস্টেবল ডেকে তার শরীরে হাত দেন। 


সাজানো অভিযোগে পিএস আটকে রাখে বলে দাবি করে রোজিনা বলেন, তিনি কোনো নথিপত্র নেননি। এমনকি মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট করার জন্য তার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।


স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান পরে রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, রোজিনা সচিবের পিএসের রুমে ঢুকে মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-নথির ছবি তোলেন। আর কিছু কাগজপত্র তিনি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেনl 


স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব সিব্বির আহমেদ শাহবাগ থানায় সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে সরকারি নথিপত্র সরানোর অভিযোগ দায়ের করেছেন।


অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-এ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ স্থানে যদি কেউ যায় বা যেতে উদ্যত হয় কিংবা ওই স্থানের কোনও নকশা বা স্কেচ তৈরি করে বা কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে, তাহলে সে অপরাধী হবে। ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, নিষিদ্ধ স্থানের কোনও ফটো, স্কেচ বা নক্সা কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনও বিদেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর সংগ্রহ করা যাবে না।


৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি গোপনে কোনও সংবাদ পেয়ে থাকলে সেই সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। কোনও সংবাদপত্র যদি কোনও গোপন সংবাদ প্রকাশ করে তবে প্রতিবেদক, সম্পাদক, মুদ্রাকর এবং প্রকাশক অপরাধী হবেন। এসব কাজে সহায়তা করা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ৩৭৯/৪১১ এই ধারার অর্থ হলো, যদি কোনও ব্যক্তি অন্যের অজান্তে কোনও জিনিস চুরি করেন তবে ৩৭৯ ধারায় মামলা দেওয়া হয়, আর যদি উক্ত মালামালসহ ওই আসামিকে ধরা হয় বা গ্রেফতার করা হয়, তাহলে ৪১১ ধারায় রিকভারি দেখানো হয় । 

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর