ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৭৩৮

সাদা চিনি খেয়ে বছরে মারা যায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪৫ ২১ অক্টোবর ২০২০  

সাদা চিনি পুষ্টিহীন ক্যালোরি। খেলে ওজন বাড়ে। ডায়াবেটিস থাকলে বাড়ে প্রকোপ। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত খেলে হার্ট ও লিভার জখম হয়। হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে। কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে। বৃদ্ধি পায় ক্যানসারের শঙ্কা।

 

ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত চিনি খেলে নানা রোগে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ মারা যান। সংক্রামক রোগে যত আক্রান্ত হন, এর চেয়ে বেশি মানুষ অসুস্থ হন চিনির বিষক্রিয়ায়।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানাচ্ছে, পুরুষদের দিনে ৯ চামচ এবং নারীদের ৬ চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ডায়াটেরি গাইডলাইন অনুযায়ী, দিনে যত ক্যালোরি খাওয়া হয়, সেটার ১০-১৫ শতাংশের কম আসা উচিত চিনি থেকে। কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, এই নিয়ম খুব কম মানুষই মানেন। ১০-১৫ শতাংশ তো দূর, কখনও তা ২৫ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়।

 

ভারতীয় হরমোন চিকিৎসক সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, করোনাকালে বেশি সাদা চিনি খাওয়ার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা বলা বাহুল্য। ওজন বাড়লে, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ মাত্রা ছাড়ালে, হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়লে কোভিড-১৯ এর জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি বেশি মিষ্টি খেলে শরীরে প্রদাহের প্রবণতা বেড়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসের আশঙ্কা বাড়তে পারে। 

তার কথায়, শুধু মিষ্টি নয়, লো-ফ্যাট ও প্রসেসড ফুডে অতিরিক্ত চিনি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের কারণে রয়েছে একই বিপদ। কাজেই করোনার বাড়বাড়ন্তে সাদা চিনি, লো-ফ্যাট ও প্রসেসড খাবার খাওয়া যথাসম্ভব কমান।
লো–ফ্যাট ও প্রসেসড ফুডেও বিপদ

 

ইন্ডিয়ান পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা মিশ্র বলেন, খাবার প্রসেস করে অতিরিক্ত ফ্যাট বের করলে, স্বাদ-গন্ধ তলানিতে ঠেকে। সেসব ফেরত আনতে তাতে মেশানো হয় চিনি জাতীয় হোয়াইট সুগার, ব্রাউন সুগার, হাই ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ, অ্যাগাভে নেক্টর ইত্যাদি। ফলে ফ্যাট হ্রাস পেলেও, ক্যালোরি কমে না। বরং পুষ্টি কমে যায়। কারণ, সব ফ্যাট চিনির মতো ক্ষতিকর নয়। ভাল ফ্যাটও আছে। 

 

তার ভাষায়, সেগুলো বাদ যাওয়ায় নানা ক্ষতি হয়। লো-ফ্যাট খাবার খেলে তাড়াতাড়ি খিধে পায়। ফলে ওজন বাড়ে। ভিটামিন এ, ডি, ই, কে’র অভাব হতে পারে। কোলেস্টেরলের হিসাবে গোলমাল হতে পারে। বাড়তে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি।

 

প্রসেসড খাবারেও থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি। সেটা খেতে মিষ্টি হোক বা না হোক। যেমন-কর্নফ্লেক্স পাউরুটি, বিস্কুট, মেয়োনিজ ও অন্যান্য সালাদ ড্রেসিং ইত্যাদি। প্যাকেটের ফলের রস, বিয়ার, সস, কেচাপ, ক্যান্ডি, নরম পানীয় ইত্যাদিরও এক হাল। করোনা ক্রান্তিতে যতটা সম্ভব এসব খাবার বর্জন করা উচিত।

 

খাওয়ার পর একটু মিষ্টি না খেলে মন ভরে না? তাহলে কৃত্রিম নয়, খান প্রাকৃতিক চিনি। নকল বা অ্যাসপারটেম খাবেন না। কারণ তাতে ওজন কমবেই, সেই নিশ্চয়তা নেই। বিভিন্ন জরিপে এর উল্টোই প্রমাণিত হয়েছে। 

 

কৃত্রিম চিনি খেলে মাইগ্রেন, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, বমিবমি ভাব, ঘুমের সমস্যা, পেট ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন সন্ধিতে ব্যথা, মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়। এমনকি মস্তিষ্কের ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়তে পারে। 

 

তাই খান ভিটামিন-মিনারেল ঠাসা প্রাকৃতিক চিনি। যেমন-গুড়, আখের রস, নারকেল পানি, খেজুর, কিসমিস কিংবা অন্যান্য শুকনো বা টাটকা ফল। তবে এগুলোতে ক্যালোরি বেশি। ফলে পরিমাণ মতো খাবেন।

 

প্রশ্ন আসতে পারে, গুড় বা আখের রস খাওয়া গেলে চিনি কেন নয়? এরও তো মূল উৎস সেই আখ!

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে আখের রস থেকে সাদা চিনি বানানো হয়। কিন্তু বানানোর সময় এমন সব পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়, তাতে সেটার গুণ নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিকর রাসায়নিক সালফার ডাই-অক্সাইড মিশে এতে। এর প্রভাবে বাড়তে পারে শ্বাসকষ্টের প্রকোপ।

 

আন্তর্জাতিক হিসাব অনুযায়ী, সাদা চিনিতে সালফার ডাই-অক্সাইডের মাত্রা যা থাকার কথা, এদেশে থাকে সেটার প্রায় ৭ গুণের বেশি। অতএব জিহ্বায় লাগাম টানুন। এখনই সতর্ক হোন।