ঢাকা, ০৪ ডিসেম্বর বুধবার, ২০২৪ || ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৯২

সুইট পয়জন চিনি, সাক্ষাত যমদূত

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:০১ ২৫ আগস্ট ২০২২  

কোলেস্টেরল নয়, চর্বি নয়, চিনি হলো বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর প্রাণঘাতী শত্রু। এক মহাকালপ্রিট। কার্ডিয়াক প্রবলেম, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, জুবেনাইল ডায়াবেটিস, স্থুলতা, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, ব্রেইন ড্যামেজ, ফ্যাটি লিভার, কিডনি ফেলিয়ারসহ অসংখ্য রোগের উৎপত্তির কারণ চিনি।

 

চিনি হার্টের রক্তনালির অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে প্রদাহ সৃষ্টি করার মাধ্যমে ক্ষত সৃষ্টি করে। এই ক্ষতে আঁশ, প্লেটিলেট, লাইপোফেইজ, চর্বি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবারকে উচ্চ তাপমাত্রায় অধিকক্ষণ পোড়ালে বা রান্না করলে কোলেস্টেরল ভেঙে অসংখ্য ক্ষতিকর যৌগ উৎপন্ন করে, যাকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বলা হয়। এই ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএল নয় ) ট্রান্স ফ্যাট জমে গিয়ে ইশকিমিয়া মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ অসুস্থ হয় বা হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক ফেলিয়ারের কারণে মারা যায়।

 

এলডিএল'কে অনেকেই "ব্যাড কোলেস্টেরল" বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এলডিএলকে "ব্যাড কোলেস্টেরল" বলা ঠিক নয়। এলডিএল ছাড়া শরীরের বহু কর্মকাণ্ড অচল হয়ে পড়ে। তবে শরীরে সব কিছুই পরিমিত থাকা অতি জরুরি। মাত্রাতিরিক্ত কোনো প্যারামিটারই ভালো নয়।

 

ডায়াবেটিসের রোগীরা হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোকে বেশি মারা যায়। ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ চিনি বা চিনিসমৃদ্ধ খাবার। বর্তমানে বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ স্থুল এবং এই স্থুলতার মূল কারণ চিনি। চিনি পরিশোধিত চিনির খাবার খেয়ে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোকে মারা যাওয়া ছাড়াও জানা-অজানা অসংখ্য রোগে ভুগছে

 

চিকিৎসকরা রোগী সুস্থ মানুষকেও ডিম, দুধ, বাটার, পনির, কলিজা, মগজ, চিংড়ি মাছ এবং অন্যান্য কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার খেতে নিষেধ করে, অথচ কোল্ড ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্ক, আইসক্রিম, শত পদের মিষ্টি, টফি, ক্যান্ডি, চকলেট, ভাত, রুটির মতো অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট, চিনি বা চিনিসমৃদ্ধ খাবার খেতে নিষেধ করে না, যা থেকে লিভারে ৮৫-৯০ শতাংশ কোলেস্টেরল তৈরি হয়।কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার থেকে মাত্র ১০-১৫ শতাংশ কোলেস্টেরল তৈরি হয়। অবাক কাণ্ড !!

 

চক্রান্ত, বুঝলেন মশাই, সব চক্রান্ত। কার চক্রান্ত? ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত। সুগার অ্যাসোসিয়াশন, ওষুধ কোম্পানি চিকিৎসকদের চক্রান্ত। এই চক্রান্তের শিকার জিম্মি হয়ে আছে নিরীহ অসহায় মানুষ। আর এই সুবাদে সুপার স্টার বনে গেল অ্যান্টিকোলেস্টেরল ড্রাগস, বিশ্বব্যাপী যার বিক্রির পরিমাণ মিলিয়ন নয়, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

 

সারা বিশ্বে কোমল পানীয়র তাণ্ডব চলছে। রঙীন পানীয়র বোতল বা ক্যান দেখলে এক শ্রেণির মানুষের মাথা ঠিক থাকে না। এসব মানুষ জানে না- কত খারাপ ক্ষতিকর এসব পানীয়। ৩৫৫ মিলিলিটার কোকাকোলা বা পেপসির মতো কোমল পানীয়তে রয়েছে ১১ চামচ চিনি বা ক্ষতিকর উচ্চ মাত্রার ফ্রুকটোজ কর্ণ সিরাপ।

 

বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ কোমল পানীয় পান করে টাইপ- ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত চিনি, ফসফোরিক অ্যাসিড, সোডিয়াম বাইকার্বনেট, কেরামেল রং, ক্যাফেইন আরো অসংখ্য অজানা উপকরণসমৃদ্ধ কোমল পানীয় পান করে প্রতি বছর এক লাখ ৩১ হাজার মানুষ ডায়াবেটিস, ৪৫ হাজার হার্ট অ্যাটাক এবং সাড়ে ছয় হাজার ক্যান্সারে মারা যায়। কোমল পানীয় পান করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ওজন বেড়ে যাচ্ছে

 

বাংলাদেশের শিশু বয়স্ক মানুষের মধ্যেও ওজন বাড়ার প্রবণতা মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছে শিশুদের কোমলপানীয় পান থেকে বিরত রাখুন। আপনার সন্তান যদি প্রতিদিন ৩৫৫ মিলিলিটার কোমল পানীয় পান করে, তবে বছরে সে পান করে ৩৬৫×১১= ৪০১৫ চামচ চিনি বা ষোল কেজি চিনি। সবাই হয়ত প্রতিদিন সমপরিমাণে কোমল পানীয় পান করে না। হিসাবটা কম-বেশি করা হলেও পরিমাণ কিন্তু আতঙ্কজনক।

 

কোমল পানীয় শিশুদের মধ্যে স্থুলতা, জুবেনাইল ডায়বেটিস, ফ্যাটি লিভার, মস্তিষ্কের ক্ষতি ছাড়াও দাঁত নষ্ট শরীরের অসংখ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কোমল পানীয় অনেক ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস বা ধ্বংস করে। তার পরও চিনি বা মিষ্টি খাওয়ার লোভ হচ্ছে?? মনে রাখবেন- লোভ থেকে ক্ষোভ এবং যার জিহ্বা সংযত, তার স্বাস্থ্য সুসংহত।

লেখক: অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ
সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর