ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২৩৬

সুতার সূত্র ধরে অভিনেত্রী শিমুর হত্যা রহস্য উদঘাটন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:৪৫ ১৯ জানুয়ারি ২০২২  

চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যাকাণ্ডের রহস্য প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদঘাটন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ঢাকা জেলা পুলিশ। তারা বলছে, শিমুকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার স্বামী এবং গুম করতে সহায়তা করায় স্বামীর একজন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

 

তিনি বলেন, ‘মরদেহ শনাক্তের পর সোমবার রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তার স্বামী এবং স্বামীর একজন বন্ধুকে আটক করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করি। সেখানে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় দুজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়।'

 

পুলিশ সুপার বলেন, ‘হত্যার পর অভিনেত্রীর লাশটি গুম করার চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তার স্বামীর বন্ধু সহায়তা করেন। এসব বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি।’ সেসময় বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাজি হননি পুলিশের এই কর্মকর্তা। তবে এদিন রাতে বাংলাদেশ পুলিশের নিউজ ওয়েবসাইটে শিমু হত্যাকাণ্ড, মরদেহ গুমের চেষ্টা এবং হত্যা রহস্য উদঘাটনের বর্ণনা প্রকাশ করা হয়েছে।

 

যেভাবে হত্যাকারীকে শনাক্ত করলো পুলিশ
পুলিশ নিউজ নামের ওই ওয়েবসাইটে বলা হয়, প্লাস্টিকের একটি সুতার সূত্র ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যা-রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, মরদেহ শনাক্তের পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। পাশাপাশি অভিনেত্রীর বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে।

 

মরদেহ গুম করতে দুটি বস্তা প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল। সেই সুতারই একটি বান্ডিল শিমুর স্বামীর গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছিল। পরে অভিনেত্রীর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। এর একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন তিনি। একই সঙ্গে গুমের চেষ্টায় সহযোগিতার অভিযোগে তার বন্ধুকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

 

হত্যা ও গুমের চেষ্টা
সেই জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ নিউজের খবরে বলা হয়, পারিবারিক কলহের জেরে শিমুকে হত্যা করেছে স্বামী। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টা থেকে ৮টার দিকে তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর তার বন্ধুকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে আনেন তিনি।

 

মরদেহ গুমের বিষয়ে পুলিশের ওয়েবসাইটে বলা হয়, পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন স্বামী ও তার বন্ধু। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে দেন তারা। এরপর নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে অভিনেত্রীর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান। 

 

প্রথমে মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন দুই আসামি। কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে বাসায় ফেরেন তারা। ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আবার লাশ নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজ যান। সেখানে ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপে লাশটি ফেলে চলে যান শিমুর স্বামী ও তার বন্ধু। তখন বাজে রাত সাড়ে ৯টা। পুলিশ জানিয়েছে, দুই আসামিই মাদকাসক্ত ও বেকার। তবে অভিযুক্ত বা তাদের পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

 

দুই সন্তানের মা শিমুর ছিল 'লাভ ম্যারেজ' 

নিহত শিমুর বোন ফাতিমা নিশা বলেন, ‘কেন, কে আমার বোনকে হত্যা করেছে। আমরা এখনও বুঝতে পারছি না। বোন জামাইয়ের সঙ্গে বোনের তেমন কলহ ছিল না। তাদের ১৮ বছরের সংসার। তারা লাভ ম্যারেজ করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘তবে যেই হত্যা করুক, আমরা চাই; সঠিক বিচার হোক। আমরা মামলা করবো।’

 

শিমু দুই সন্তান ও স্বামীর সঙ্গে ঢাকার কলাবাগানের গ্রিন রোডে থাকতেন। ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে অভিনেত্রীর মরদেহ শনাক্ত করা হয়। এরপর তার বোন জানান, বোনের ফোন বন্ধ পেয়ে এবং বাসায় না ফেরায় তাদের পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হয়। এরপর তারা হাসপাতাল, থানা ও এফডিসিতে খোঁজ নিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে কেরানীগঞ্জে অজ্ঞাত পরিচয় নারীর মরদেহ উদ্ধারের খবর জানতে পারেন। এরপর মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে এসে বোনের খণ্ডিত মৃতদেহ দেখতে পান।

 

এর আগে সোমবার সকালে শিমু নিখোঁজ জানিয়ে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার স্বামী। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, রোববার সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান অভিনেত্রী। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

বিনোদন বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর