ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৪৫

সুস্থ থাকতে পরিবর্তন আনুন রান্নার প্রণালিতে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৫১ ২৭ ডিসেম্বর ২০২০  

রান্নার পদ্ধতিগত কিছু ভুলের জন্য অনেক অসুখ ডেকে আনি আমরা। শুধু ডায়েট মেনে চলাই নয়, অসুখ এড়াতে বাদ দিতে হয় সেসব ভুলও। একবার রান্নার পর সেই পোড়া তেল আর ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়েও নানা নিয়মকানুন আছে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলের ধরন, কত তাপমাত্রায় ভাজা হয়েছে, কতক্ষণ ধরে গরম হয়েছে, আদৌ ডিপ ফ্রাই হয়েছে নাকি উপর উপর হালকা ফ্রাই-এসব কিছুর উপরেও নির্ভর করে পোড়া তেলের পুনর্ব্যবহারের বিষয়টি। তবে তেল ঘোলা হলে জৈব উপাদানগুলো নষ্ট হয়েছে বুঝতে হবে। সেই তেল আর ব্যবহার করা উচিত নয়।


শুধু তেলের বিষয়টিই নয়, রান্নার কিছু ভুলভ্রান্তি নিয়েও সাবধান হতে হবে। সুস্থ থাকতে তাই রান্না করার পদ্ধতিতেও আনতে হবে কিছু বদল। আমাদের রান্নার পর্ব শুরুই হয় ভুলের হাত ধরে ৷ সবজি কাটা থেকে যার সূত্রপাত ৷ এরপর ধাপে ধাপে এত ভুল হয় যে, শেষমেশ খাবার যখন পাতে পৌঁছয়, তাতে পুষ্টি যতটা থাকার কথা, তা তো থাকেই না, উল্টো হাজির হয় কিছু বিপদ৷


আমরা সচরাচর ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট করে কেটে রান্নার আগে পর্যন্ত সবজি ভিজিয়ে রাখি পানিতে ৷ যেসব সবজির খোসা ছাড়াতে হয় না, তাদেরও কেটে ভিজিয়ে রাখার চল আছে ৷ উদ্দেশ্য, ময়লা ও কীটনাশকের বিষ মুক্ত করা ৷ বিষাক্ত রংও এভাবে কিছুটা দূর হয় ৷ সঙ্গে দূর হয় ভিটামিন বি ও সি–এর প্রায় ৪০ শতাংশ ৷ তবে ফাইবার ও পুষ্টির কথা ভাবলে, সবজির খোসা না ছাড়ানোই ভালো। 

 

ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল বা মেদবাহুল্যে যারা ভুগছেন, তাদের জন্য তো বিশেষ করে ৷ কিন্তু তা করা যায় না এসব রং ও কীটনাশকের জন্যই ৷ তবে পাতলা করে খোসা ছাড়াতে পারেন, যাতে দু’দিকই রক্ষা করা যায় ৷ আমাদের ধারণা, গরম কড়াইয়ে তেল দেওয়ার পর যতক্ষণ না ধোঁয়া ওঠে ফোড়ন বা মাছ–সবজি দিতে নেই ৷ কারণ তা হলে রান্নায় কাঁচা তেলের গন্ধ থেকে যায় ৷ তাই রান্না করার সময় কোন কোন নিয়ম মানতে হবে তা মেনে চলুন।

 

কাঁচা খেলে
খাবার রান্না করলে কিছুটা হলেও পুষ্টিগুণ কমে, আপনি যেভাবেই রান্না করুন না কেন ৷ ব্যতিক্রম টমেটো, গাজর, মিষ্টি আলু, পালং, মরিচ ৷ সেজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই কাঁচা শাকসবজি, ডিম ইত্যাদি খাওয়ার চল আছে ৷ আমরাও খাই বিভিন্ন সালাদ হিসেবে ৷ এমনিতে এতে ক্ষতি নেই ৷ কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে বিষাক্ত কীটনাশক ও সারের ব্যাপক প্রচলন, মাঠে-ঘাটে মলমূত্র দূষণের রমরমা, সেখানে কাঁচা খাওয়ার নানা বিপদ আছে৷


ওজন বেড়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, মস্তিষ্কের অসুখ, হার্টের রোগ, পেটের গোলমাল, ত্বকের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির আশঙ্কা থাকে ৷ এর উপর শাকসবজি, মাছ প্রভৃতিকে তাজা দেখানোর জন্য যেভাবে বিষাক্ত রং ব্যবহার করা হয়, সেখানে কোনও কিছু কাঁচা খাওয়ার প্রশ্নই আসে না ৷ অতএব নিতান্ত নিজের বাগানে, জৈব সারে পুষ্ট শাকসবজি হলে কাঁচা খেতে পারেন, নয়তো নয় ৷ তাও কিছু ক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকতে পারে ৷


রান্নার সময় যে নিয়ম মেনে চলবেন

# স্বাস্থ্যকর হলেও স্রেফ সিদ্ধ খাবার দিনের পর দিন মুখে রুচবে না-এটা যেমন সত্যি, তেমনি আবার ভুল পদ্ধতিতে সিদ্ধ করলে পুষ্টি মাঠে মারা যাবে, সেটাও সত্যি ৷ ধরুন, খরচ ও সময় বাঁচানোর জন্য শাকসবজি, মাংস কুকারে সিদ্ধ করে পরে কষানোর প্ল্যান করেছেন, ভালো কথা ৷ কম সময় নিয়ে ঢেকে রান্না করলে খাবারের পুষ্টি বজায় থাকে ৷ 

 

কিন্তু সমস্যা হলো, কষানোর সময় যদি সেই পানি ফেলে দেন। ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও উপকারি খনিজ পদার্থের প্রায় ৬০–৭০ শতাংশ পানির সঙ্গে বেরিয়ে যাবে ৷ ভাতের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্যি ৷ ফ্যান ফেলে দিলে অনেক পুষ্টিও সেটার সঙ্গে পানিতে যায় ৷ অতএব, সিদ্ধ করার সময় এমন পানি দিন যা শোষিত হয়ে যায় ৷ সবজি বা মাংসের বেলায় ওই পানি গ্রেভিতে ব্যবহার করুন ৷

 

# কতক্ষণ রান্না করছেন সেটার উপরও পুষ্টির হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করে ৷ কাজেই পানি ফুটতে শুরু করার পর তাতে চাল, ডাল, সবজি দিন ৷ রান্না করুন কম আঁচে, ঢেকে বা কুকারে ৷


# ভাপে রান্না করলে পুষ্টির প্রায় সবটুকু বজায় থাকে ৷ স্বাদও ভালো হয় ৷ কখনও আবার ভাপানোর পর স্বাদ বাড়াতে ঢাকা দিয়ে হালকা করে কষিয়ে নেওয়া যেতে পারে ৷ ভাপানো টমেটো, গাজরের পুষ্টিগুণ বেশি ৷ ভাপানো ব্রকোলিতে থাকে গ্লুকোসিনোলেটস যা শরীরে গিয়ে আইসোথায়োসেনটে পরিণত হয়, যা ক্যানসার কোষের গতি মন্থর করতে পারে ৷


# ডিমের মতো মাছও পোচ করা যায় ৷ গরম কড়াইতে অল্প পানি দিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না করলে ও পরে অল্প লবণ, মরিচ, লেবু দিলে স্বাদ ও পুষ্টি থাকে অঢেল ৷ ফল ও নরম শাকসবজিও এভাবে খাওয়া যেতে পারে ৷


মাইক্রো আভেনে রান্না

মাইক্রো আভেনে রান্না করলে খাবারের সব পুষ্টিগুণ অটুট থাকে ৷ কারণ এতে যে বেতার তরঙ্গ তৈরি হয় তা খাবারের অণুগুলোকে কেবল উত্তেজিত করে তোলে ৷ ফলে তাদের মধ্যে যে প্রবল অস্থিরতা তৈরি হয়, তা থেকে তৈরি হয় তাপ ৷ রান্না হয় সেই তাপে ৷ তবে গরম করার সময় খাবার একটু শুকিয়ে যেতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে অল্প পানির ছিটে দিয়ে নিন ৷ তবে খেয়াল রাখতে হবে খাবার যেন প্লাস্টিক পাত্রে গরম করা না হয় ৷ সিরামিক বা কাচের পাত্রে করা উচিত ৷ তাতেও যেন প্লাস্টিকের ঢাকা না থাকে ৷