ঢাকা, ২২ নভেম্বর শুক্রবার, ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫০৭

সুস্থ হওয়ার পরও ডেঙ্গু আক্রান্তকে যতদিন মশারির ভেতর থাকতে হবে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৫০ ১১ জুলাই ২০২৩  

এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। চলতি বছর এই মৌসুমে এরিই মধ্যে ডেঙ্গু রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। একদিনে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৬ ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ, যা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ।

 

রোববার (৯ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, শনিবার (৮ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৬ জন রোগী। 

 

সাধারণত বর্ষাকালে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। এডিস মশার কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে মূলত এডিস এজিপটি প্রজাতির মশাই ডেঙ্গুর ভাইরাস-বাহক হিসেবে কাজ করে। এই মশা কামড়ানোর পর সাধারণত ৩ থেকে ১০ দিনের ভেতরে জ্বর আসে। জ্বর আসার আগের দিন থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত মানুষের রক্তে ডেঙ্গুর ভাইরাস সক্রিয় থাকে।

 

তাই এই সময় তাকে এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা ডেঙ্গুর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত এই মশা যাকে কামড়াবে তারও ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সাতদিনের সঙ্গে আরও তিন দিন মশারির ভেতরে তাকে থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। অর্থাৎ সুস্থ হবার পরে আরও অন্তত তিন দিন মশারির মধ্যে থাকতে হবে। 

 

ডেঙ্গু রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরেও তাদের বেশকিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এরমধ্যে ডেঙ্গু রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরবর্তী ছয়মাস কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীকে সুস্থ হওয়ার পর আরও দশদিন মশারির ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তের মাধ্যমে ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়াতে পারে। সংশ্লিষ্ট  চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

 

বিষয়টি নিয়ে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘জ্বর আসার আগের দিন থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত মানুষের রক্তে ডেঙ্গুর ভাইরাস সক্রিয় থাকে। এই সময় তাকে এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা জীবাণু বহনে সক্ষম হবে। তাই জ্বর আসার পর সাতদিনের সঙ্গে আরও তিন দিন মশারির ভেতরে তাকে থাকতে হবে। মানুষ থেকে মানুষে রক্তদানের মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হওয়ার ছয়মাস পর পর্যন্ত কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না।’ 

 

এই প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘একজন ডেঙ্গু রোগীকে এডিস মশা কামড়ালে তার শরীরের ভাইরাসের মাধ্যমে আরেকজন আক্রান্ত হতে পারে, এজন্য তাকে মশারির ভেতরে থাকতে হবে সপ্তাহখানেক। আবার জ্বর হয়তো কমে গেছে কিন্তু হঠাৎ করেই প্লাটিলেট কমে গিয়ে তার অবস্থা খারাপ হতে পারে। এসব কারণে তাকে সতর্ক থাকতে হবে প্রায় দশদিন। 

 

ডা. জাহিদুর রহমান আরও বলেন, ‘এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই রক্তদানে আগ্রহীরা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু কোনও ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির অন্তত ছয়মাস আরেকজনকে রক্ত দিতে পারবেন না।’  

 

আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশারির ভেতরে থাকাটা অনেক বেশি বিরক্তিকর হলেও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সুস্থ হবার পরও তাকে আরও কয়েকদিন ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।