ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৮৩৬

হটস্পট ধরে রেডজোনে লকডাউন : খাবার-নিত্যপণ্য পৌঁছে দেয়া হবে ঘরে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৫৯ ৬ জুন ২০২০  

করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তারে বিশ্বের শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ঢুকে পড়ার পর রাজধানীকে দিয়ে শুরু করে সংক্রমণের কেন্দ্র বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পথে যাচ্ছে সরকার।

 

দুয়েকদিনের মধ্যে ঢাকার কিছু এলাকায় ‘পাইলট ভিত্তিতে’ লকডাউন শুরু করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কোভিড-১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন এ তথ্য।

 

শনিবার দুপুরে তিনি বলেন, “হটস্পট বা ক্লাস্টার এরিয়া বিবেচনায় শুরুতে আমরা পাড়া, মহল্লা বা ওয়ার্ড এলাকা লকডাউন করবো।

 

“শুরুতে সীমিত পরিসরে ঢাকার মধ্যেই লকডাউন করব। কারণ ঢাকাতেই কোভিড-১৯ এর রোগী বেশি। পরে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্যান্য জেলা শহরেও লকডাউনের পথে হাঁটব।”

 

মহামারীর বিস্তার রোধে দুই মাসের বেশি সময় সাধারণ ছুটি শেষে ৩১ মে থেকে সংক্রমণের মাত্রা ও মৃত্যুর হারের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন হিসাবে দেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে  করণীয় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

 

হাবিবুর রহমান খান বলেন, “আমরা আইসিটি বিভাগের সহায়তায় কোন কোন এলাকা লকডাউন করবো, তার ম্যাপিং শুরু করেছি। এতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যোগ দিয়েছেন। পুরো কাজটি শেষ হয়নি। শেষ হলেই আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করছি।”


করোনাভাইরাসে সংক্রমন বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন এলাকা লাল বা হলুদ জোনে ভাগ করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বড় এলাকা না ধরে ক্ষুদ্র পরিসরে লকডাউন করতে চায়।

 

হাবিবুর বলেন, “যেসব এলাকায় রোগী বেশি সেসব এলাকাকে ‘রেড জোন’ বলে ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া হবে।

 

“একই পদ্ধতিতে ইয়েলো ও গ্রিন জোন চিহ্নিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে ইয়েলো জোনে কেউ খুব জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে চাইলে সেই সুযোগ দেওয়া হবে।” 

 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার পুরো কক্সবাজার পৌরসভাকে রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০ জুন পর্যন্ত  কক্সবাজার পৌর এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে।

 

করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলামের ধারণা, আগামী এক সপ্তাহে বাংলাদেশ সংক্রমণের এই গ্রাফ আরও উর্ধ্বমুখী হবে।

 

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আধিক্য এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করার পর ওই জোনে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। একান্ত প্রয়োজন না থাকলে কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না। ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিসের দরকার হবে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।


স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে  জানা গেছে এ জন্য সরকার একটি পরিকল্পনাও প্রস্তুত করেছে।

 

রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়োলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও।

 

রেড জোনে সরকার কী করবে?

 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও করোনা সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান খান  বলেন, ‘যে এলাকা রেড জোন ঘোষণা করা হবে, সেই এলাকা সম্পূর্ণ ব্লক রাখা হবে। সেই এলাকায় কেউ ঢুকবেও না, কেউ বেরও হবে না। ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিসের দরকার হবে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।’

 

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রেড জোনে শুধু ফার্মেসি, হাসপাতাল, নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। প্রতিটি রেড জোনে স্বেচ্ছাসেবক টিম থাকবে, জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত থাকবেন এসব টিমে। স্বেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া ও মনিটরিংয়ের কাজ করা হবে।


আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেশনে রাখা এবং আক্রান্ত রোগীর পরিবারকে কোয়ারেন্টাইনে রাখাও নিশ্চিত করা হবে। সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন করা হবে। রেড জোনে থাকা মানুষ যাতে বাইরে যেতে না পারে এবং বাইরের লোকজন যাতে সেখানে ঢুকতে না পারে সে জন্য প্রবেশ ও বের হওয়ার সড়কের মুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেবেন।

 

রেড জোনে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে যাদের করোনা উপসর্গ দেখা দেবে তাদের নমুনা সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করা হবে। রোগী বেশি হলে একাধিক বুথ স্থাপন করা হবে। নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক দক্ষ টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হবে। তাদেরও রেড জোন থেকে বের হতে দেয়া হবে না। নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র বা পাশে থাকা আবাসিক হোটেলে টেকনোলজিস্টদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময় কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর তাদের রেড জোন থেকে বের হতে হবে। 

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর