ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১৬ পৌষ ১৪৩১
good-food
৬৫১৭

হারিয়ে যাচ্ছে কাঁসা শিল্প, কিন্তু কেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৬ ৪ অক্টোবর ২০১৯  

একসময় কাঁসার থালা, বাটি ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হওয়ারই কথা, কারণ বাংলার প্রাচীনতম শিল্পের মধ্যে কাঁসা শিল্প একটি। তবে বর্তমানে প্রশাসনিক সাহায্যের অভাব, স্টিল, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিতে এ শিল্প ক্রমে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এর অন্যতম উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চাঁপাই নবাবগঞ্জ শহরের কথা, যেখানে এ শিল্পের বয়স ১০০ বছর অতিক্রম করেছে।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, কাঁসা ও পিতলের ব্যবহার জনপ্রিয়তা অর্জন করে মোঘল আমলে। এসব ধাতু দিয়ে তখন ঢাল, তলোয়ার, তীর-ধনুক, বন্দুক, কামান পর্যন্ত তৈরি করা হতো। এরপর ধীরে ধীরে কাঁসা দিয়ে বিভিন্ন দৈনন্দিন নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করা শুরু হয়। কাঁসা শিল্প ক্রমে বিস্তার লাভ করে। 
কিন্তু মোঘল যুগে যাই হোক, চাঁপাই নবাবগঞ্জের আজাইপুর, আরামবাগ, নামোশঙকর বাটি, শান্তি মোড়ে আজ কার্যত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমে পড়েছে কাঁসা শিল্প। একসময় এ শিল্প থেকেই এলাকার বহু বাসিন্দা তাদের সংসার চালাতেন। তবে বর্তমানে কাঁসার চাহিদা ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ায় কারিগররা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
নামোশঙকর বাটির কারিগর মন্টু রানা জানান, আমাদের এ শিল্প প্রায় তিন-চার পুরুষ ধরে চলে এসেছে। আগে এখানে ১০০ থেকে ১৫০ পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বর্তমানে কাঁসার চাহিদা কমে যাওয়ায় সেই সংখ্যা ১০ থেকে ১২তে এসে ঠেকেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যদি কোনও সাহায্য পাই; তা হলে খুবই উপকৃত হব।

সম্পূর্ণভাবে শিল্পীদের নিজেদের হাতে আজাইপুরে তৈরি হয় গৃহস্থালির ব্যবহারের থালা, বাটি, গ্লাস, ল্যাম্প, হ্যারিকেন ও পানের সাজা ছাড়াও অনেক কিছু। এখানকার প্রবীণ কারিগর সরলা রাণা জানান, বাজারে এ শিল্পের চাহিদা এখনও আছে। না হলে এ কাঁসা শিল্প আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে যেত। শুধু তাই নয়, অ্যালুমিনিয়াম আর স্টিলের জিনিসের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে মার খেতে হচ্ছে আমাদের এ শিল্পকে।
তাদের অভিযোগ, সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য বারবার আবেদন জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে অনেক কারিগর অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। কয়েক বছর আগেও এসব এলাকার প্রতিটি বাড়িতে কাঁসা শিল্পের কাজ হতো। কিন্তু এখন তা বন্ধের পথেই বলা চলে। একসময় এখানকার শিল্পীদের তৈরি কাঁসা, পিতলের জিনিসপত্র প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতা, মালদাহতেও পাঠানো হতো। তবে বর্তমানে সেই বাজারেও স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের বিভিন্ন সামগ্রী এসে যাওয়ায় কাঁসা শিল্পের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।
এর একটা বড় কারণ হলো অর্থ। দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় অধিকাংশ বাড়িতেই আজকাল স্টিলের জিনিসপত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কাঁসা পিতলের চাহিদা বলতে শুধু বিয়েবাড়ি বা অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেখানেও চাহিদা কমেছে। 
কাঁচামালের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক শিল্পীরা বাধ্য হয়ে পূর্বপুরুষের ব্যবসা ছেড়ে এখন দিনমজুরি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কাঁসাশিল্পী মোশাররফ জানান, এ শিল্প নিয়ে সরকারিভাবে যদি কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হয়। তবে আমরা একে টিকিয়ে রাখতে পারব।
স্থানীয় সাংসদ হারুন অর রশিদের সঙ্গে দেখা করে জেলার ঐতিহ্য ধরে রাখার আবেদন জানান কারিগররা। আবেদনে সাড়া দেন এমপিও।  তিনি বলেন, স্থানীয় কাঁসা ও পিতল শিল্পীরা তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আমি উপর মহলে পাঠিয়েছি। সমস্যা যাতে দূর করা যায় সেদিকে আমাদের নজর থাকবে।
 

বাংলাদেশকে জানো বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর