ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শনিবার, ২০২৫ || ৬ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
১৩

হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকি ট্রাম্পের

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৩:১৮ ১৮ এপ্রিল ২০২৫  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার নীতিতে কাজ করছেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডসহ একাধিক বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল অনুদান বাতিল বা স্থগিত করেছে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিচ্ছে।

 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস ও নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উদারনৈতিক ভাবাদর্শ দমনে শৃঙ্খলা ও কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া, এবং গবেষণার খাতে সরকার হস্তক্ষেপ করতে চায়।

 

বিশেষ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের দাবিগুলো বেশ কঠোর। সম্প্রতি হার্ভার্ডের কাছে পাঠানো একাধিক চিঠিতে বলা হয়েছে, তারা যদি ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবৈধ ও সহিংস কার্যকলাপ সংক্রান্ত রেকর্ড সরবরাহ না করে, তাহলে তাদের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (SEVP)-এর অনুমোদন বাতিল করা হবে। ফলে, তারা আর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না।

 

এই প্রসঙ্গে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, ‘যদি হার্ভার্ড তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে, তাহলে তারা বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অধিকার হারাবে।’ তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে হার্ভার্ডের ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের দুটি অনুদান বাতিল করা হয়েছে।

 

এর পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের করমুক্ত সুবিধা বাতিলেরও উদ্যোগ নিয়েছে। মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস) এই বিষয়ে তদন্ত করছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শিগগিরই আসতে পারে।

 

হার্ভার্ড প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সরকারি চাপের মুখেও সাংবিধানিক অধিকার ও একাডেমিক স্বাধীনতা ত্যাগ করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, ‘কোনো সরকার, সে যে দলেরই হোক না কেন, আমাদের শেখানোর পদ্ধতি, কাদের ভর্তি করব বা নিয়োগ দেব—সেই সিদ্ধান্ত দিতে পারে না।’

 

এদিকে, ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে হার্ভার্ডের শিক্ষকদের ‘কট্টর বামপন্থী গর্দভ’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন শুধু হার্ভার্ড নয়, কলাম্বিয়া, প্রিন্সটন, ব্রাউন, কর্নেল ও নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফেডারেল তহবিলও স্থগিত বা পর্যালোচনার আওতায় এনেছে। এইসব পদক্ষেপের পেছনে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি ও ইনক্লুশন (DEI) প্রোগ্রাম এবং ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

 

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বাকস্বাধীনতা ও একাডেমিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে। তবে ট্রাম্প শিবিরের দাবি, এসব বিশ্ববিদ্যালয় ‘আমেরিকার মূল্যবোধ ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে’ এবং ‘ইহুদিবিদ্বেষী আদর্শকে প্রশ্রয় দিচ্ছে’।

 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদিও বেশ কিছু দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, তবে ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে ২২০ কোটি ডলার অনুদান স্থগিত করেছে। এসব পদক্ষেপের ফলে গবেষণা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।