ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৯৫৯

দাম কমবে কবে?

১৮ পিয়াজ ব্যবসায়ীর মধ্যে হাজির মাত্র ১ জন!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:১১ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা আসেননি, মন্ত্রীও অনুপস্থিত। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এমন একটি সভায় পিয়াজের দাম কমার বিষয়ে ‘আশাবাদ’শোনানো ছাড়া সুদৃঢ় কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বরং ইঙ্গিত মিলেছে, নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত পণ্যটি বাড়তি দামেই কিনতে হবে ভোক্তাদের। 
পিয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সভা করতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১৮ জন ব্যবসায়ীকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেই নিমন্ত্রণে সাড়া দেন হাফিজুর রহমান নামে একজন মাত্র আমদানিকারক। 
সভায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শির। অসুস্থতার কারণে তিনিও ছিলেন অনুপস্থিত। শেষে সবেধন নীলমণি সেই ব্যবসায়ীকে নিয়েই রুদ্ধদ্বার (সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে) সভা করেন সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা, যেখানে আবার সভাপতি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র বাণিজ্যসচিব হিসেবে যোগ দেয়া কর্মকর্তা ড. জাফর উদ্দিন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সভার সভাপতি পিয়াজের দাম কমার বিষয়ে ‘আশাবাদ’ব্যক্ত করা ছাড়া নতুন কোনো পদক্ষেপের কথা জানাতে পারেননি। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পিয়াজের দাম কমার আশ্বাস দিলেও সেই আশ্বাসের প্রতিধ্বনি নবনিযুক্ত সচিবের কণ্ঠে শোনা যায়নি। 
সভা শেষে সাংবাদিকদের সভাকক্ষে ডেকে নিয়ে বাণিজ্যসচিব জানান, ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার কারণে দেশটি পিয়াজের রপ্তানিমূল্য ২৫০-৩০০ ডলার থেকে ৮৫০ ডলারে উন্নীত করেছে। এ কারণে বাংলাদেশে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। তবে দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সচিব বলেন, পিয়াজের প্রচুর মজুদ আছে। আশা করছি দাম কমে আসবে।  
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন - ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে যায়, তখন আতঙ্কিত না হয়ে উপায় আছে? আপনারা কি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাম কমাতে পারবেন? এ সময় ট্যারিফ কমিশনের মেম্বার আল বেরুনী বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পিয়াজের দাম কমবে। তবে কীভাবে কমবে সেটি খোলাসা করতে পারেননি। 
তিনি বলেন, ইন্টারনেট ও ওয়েবসাইটের কল্যাণে আমাদের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দামের দিকে লক্ষ্য রাখেন। সে কারণে পিয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশেও দ্রুত দাম বেড়ে গেছে। তবে এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। 
ট্যারিফ কমিশনের বিশ্লেষণ তুলে ধরে আল বেরুনী বলেন, আমাদের বার্ষিক পিয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। দেশে পিয়াজ উৎপাদন হয় ২৩ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন। ৩০ শতাংশ পিয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। পচনের কারণে আমাদের ১০  থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানি করতে হয়।  
তিনি জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১২ লাখ ৭১ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন। উৎপাদন রয়েছে ১৬ লাখ  মেট্রিক টন। সুতরাং আমরা বাজার বিশ্লেষণ করে দেখেছি ২৮ লাখ মেট্রিক টন পিয়াজ মজুদ রয়েছে; যা যথেষ্ট। ফলে বাজার মনিটরিং জোরদার করে আমরা পিয়াজের দাম কমাতে পারব।  তবে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দাম কমানোর নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বাণিজ্যসচিব। 
তিনি বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে দেড় থেকে দুই মাস পিয়াজের দাম বেশি থাকে। এটি একটি আপদকালীন সময়। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে উৎপাদিত নতুন পিয়াজ বাজারে আসবে, তার আগেই নভেম্বর থেকে পাওয়া যাবে ভারতের নতুন পিয়াজ। তখন ভারত রপ্তানিমূল্য কমিয়ে দিলে দেশেও দাম কমে আসবে। 
এদিকে বেনাপোল বন্দরের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, নতুন মূল্য নির্ধারিত হওয়ার পর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বেনাপোল বন্দরে পিয়াজের কোনো চালান আসেনি। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে ১ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পিয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ছে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা।