ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২১০

২০ বছরে খুলনায় সবচেয়ে কম বৃষ্টি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৪৭ ১ আগস্ট ২০২২  

খুলনায় গত ২০ বছরের মধ্যে চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে কম। বর্ষাকালে বৃষ্টি না থাকায় ভ্যাপসা গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ের কারণে এই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এছাড়া বৃষ্টি না থাকায় চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা।

 

খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় গত ২০ বছরের মধ্যে এবারই জুন ও জুলাই মাসে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এ বছর জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৭৬ মিলিমিটার। ২০০৫ সালের জুন মাসে ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিলো। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল ২০২১ সালের জুনে ৪৬৮ মিলিমিটার। অন্যান্য বছর জুনে গড় বৃষ্টি ছিলো প্রায় ২৫০ মিলিমিটার।  

 

জুলাই মাসেও একই অবস্থা। চলতি বছর জুলাই মাসে খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১১৬ মিলিমিটার। গত ২০ বছর জুলাই মাসে গড় বৃষ্টিপাত ছিলো ৩৫০ মিলিমিটারের ওপরে। গত ২০ বছরের মধ্যে ২০১০ সালের জুলাই মাসে ১৮১ মিলিমিটার এবং ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ৯২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। 

 

খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, গত ২০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে কয়েক বছর পর পর বৃষ্টি কমে যাচ্ছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির সময় বৃষ্টি নেই, শীতের সময় শীত নেই। 

 

তিনি আরও বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে এবার একটি লঘুচাপ বা নিম্নচাপও আমাদের এদিকে আসেনি। কয়েকটি সৃষ্টি হলেও উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গের ওদিক থেকে চলে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে যদি একটা লঘু বা মৌসুমি নিম্নচাপ হয়-তাহলে একটানা ৪/৫ দিন বৃষ্টি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কম হচ্ছে। 

 

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের কেসমত শোলাকুড়া গ্রামের কৃষক শওকত আলী বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি নেই, গত ৪০/৫০ বছরে এমন দেখিনি। বৃষ্টির অভাবে আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাদের অনেকের পাতো (ধানের চারা) বড় হয়ে গেছে, কিন্তু রোয়ার (রোপণ) কোনও সুযোগই নেই। দু’এক জন সেচ দিয়ে ক্ষেত তৈরি করছে। কিন্তু টাইখালি বিলের হাজার হাজার কৃষক বসে আছে।

 

ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর বিলে আমন আবাদ করেন সহস্রাধিক কৃষক। তাদেরই একজন আতিয়ার রহমান বলেন, বৃষ্টির অভাবে কেউ জমি তৈরি করতে পারেনি। গত ৫০ বছরের মধ্যে এবারই এই বিলে আমন আবাদ হচ্ছে না। বৃষ্টিহীন আষাঢ়-শ্রাবণ এই বিলের কৃষকরা আগে দেখেনি। সবাই খুব কষ্টে আছে।

 

খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এ বছর খুলনায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ২১ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশেরও কম। বীজতলা হওয়ার কথা ছিলো ৪ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে। অথচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১১১ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার ২২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গতবছর ৯৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছিলো। 

 

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সাধারণত কৃষকরা বৃষ্টির পানি দিয়েই আমন চাষ করেন। বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা কৃষকদের সেচ দিয়ে ধান চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করছি। 

 

এদিকে খুলনা নগরীতে বিদ্যুতের গ্রাহক আছে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার। নগরীতে প্রতিদিনই গড়ে ৩/৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। আর খুলনা জেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৬/৭ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের সময় বৃষ্টিহীন ভ্যাপসা গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।